Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
blood

আকালের মধ্যেই রক্ত সংরক্ষণে ‘গাফিলতি’ সাগর দত্তে

দুপুরে যে কর্মী রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন, তিনি জানান, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়ম মেনে রক্তের ব্যাগ ফ্রিজে ঢোকাতে ভুলে গিয়েছিলেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৯
Share: Save:

নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে লকডাউন চলছে সারা দেশে। যার জেরে রক্তের হাহাকার দেখা দিয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে। রক্ত সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে ‘ভেন্টিলেশন’ থেকে বার করতে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। এমন কঠিন এক সময়ে স্রেফ কর্তব্যে গাফিলতির কারণে পাঁচ ব্যাগ রক্তের অপচয় করার অভিযোগ উঠল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, রক্ত নষ্ট হয়েছে, এখনই এ কথা বলা যাবে না।

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, গরমের মরসুমে এমনিতেই শিবির কম হওয়ায় রক্তের ঘাটতি দেখা যায়। বর্তমানে করোনাভাইরাস রোধে সারা দেশে লকডাউন চলায় পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় ‘ইন-হাউস ডোনেশন’-এর উপরে জোর দিচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি। অর্থাৎ, কেউ রক্ত নিতে এলে তাঁকে রক্তদাতা নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বৃহস্পতিবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগৃহীত পাঁচ ব্যাগ রক্তের অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে।

ওই ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্মরত টেকনিশিয়ানদের একাংশ জানান, রক্ত সংগ্রহের পরে তা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফ্রিজের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়। না করলে রক্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সাগর দত্ত হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই দিন ব্লাড ব্যাঙ্কের সংগ্রহ কক্ষে একটি ট্রে-র উপরে পাঁচ ব্যাগ রক্ত (সিএমএসডিএইচ/২০/৪৮-৫২) রাত পর্যন্ত পড়ে ছিল। নিয়ম মেনে সংগৃহীত রক্ত ফ্রিজের মধ্যে রাখা হয়নি। রাতের ডিউটিতে যোগ দিতে এসে বিষয়টি খেয়াল করেন ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী। দুপুরে যে কর্মী রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন, তিনি জানান, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়ম মেনে রক্তের ব্যাগ ফ্রিজে ঢোকাতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, এক জন গ্রুপ-ডি কর্মীকে ব্যাগগুলি ফ্রিজে ঢোকানোর জন্য বলেছিলেন তিনি। ওই কর্মীর আরও বক্তব্য, সে সময়ে ওই ঘরে অনেকে ছিলেন। এখন প্রশ্ন, ব্যাগগুলি যে ফ্রিজে ঢোকানো হয়নি, তা এত জনের নজর এড়াল কী ভাবে?

ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই দিন ব্লাড ব্যাঙ্কে শিবির নিয়ে ব্যস্ততা থাকায় কোনও ভাবে ব্যাগগুলি নিয়ম মেনে সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে বিষয়টি তিনি জানতে পারলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রিয়াঙ্কাদেবীর কথায়, ‘‘বিকেল ৫টা নাগাদ ওই রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। রাত ৮টার মধ্যে তা রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়। আপাতত রক্তের ব্যাগগুলিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে কি না এখনই বলা যাবে না।’’ ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক এ কথা বললেও যে কর্মী রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন, তিনি জানিয়েছেন, সংগ্রহ কক্ষে ২০ ডিগ্রিতে এসি চলছিল। তিনি সাড়ে ৮টার সময়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। আরও কিছু ক্ষণ পরে ওই ঘটনার কথা জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে সংগৃহীত রক্ত ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে তিনিও সন্দিহান।

হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার পলাশ দাস বলেন, ‘‘রক্তের সঙ্কটের সময়ে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। কী ঘটেছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE