Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইলের আলোয় ছাই-স্তূপে সর্বস্ব খোঁজার চেষ্টা

প্রায় সাড়ে ন’শো দোকান, অফিস ও গুদাম নিয়ে রমরমিয়ে চলা ছ’তলার বাগড়ি মার্কেটে সি ব্লকে আগুন লেগেছিল শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ। রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, আগুনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে

উদ্বেগ: জ্বলছে দোকান। সে দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীরা। ছবি: সুমন বল্লভ।

উদ্বেগ: জ্বলছে দোকান। সে দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীরা। ছবি: সুমন বল্লভ।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

ছাদ থেকে টুপ টুপ করে পড়েছে গরম জল। আর দেওয়ালের ফাটল দিয়ে চুঁইয়ে বেরোচ্ছে ধোঁয়া।

প্রায় সাড়ে ন’শো দোকান, অফিস ও গুদাম নিয়ে রমরমিয়ে চলা ছ’তলার বাগড়ি মার্কেটে সি ব্লকে আগুন লেগেছিল শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ। রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, আগুনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপের মধ্যে ‘এইচ’ নম্বর গেট দিয়ে ওঠা গেল ফার্স্ট ফ্লোর বা দোতলার বি ব্লকে। পুজোর আগে সর্বস্ব হারানো মানুষেরা সেখানে দাঁড়িয়ে। কেউ ওপরে ওঠার সাহস করেছেন। কেউ বা দাঁতে দাঁত চেপে দেখছেন ধংসলীলা। দোতলায় আগুনের প্রকোপ না থাকলেও কালো ধোঁয়ায় দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। সেখানেই ছাদ থেকে গরম জল পড়ছে। দেওয়ালের ফাটল দিয়ে কালো ধোঁয়া।

আর কিছুটা এগোতেই উড়ছে ছাই। কোনও ভাবে ওঠা সম্ভব হল তিনতলায়। সেখানে কয়েকজন দমকল কর্মীও ছিলেন। কিন্তু জল না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে। মাঝের পাঁচ ফুটের সরু গলি, আর দু’দিকে দোকান। অধিকাংশই পুড়ে গিয়েছে। আগুনের তাপে বেঁকে গিয়েছে দোকানের শাটার। ওই অন্ধকার দোকানেই মোবাইল টর্চের আলো জ্বালিয়ে ছাইয়ের স্তুপ থেকে ‘অক্ষত’ কিছু খোঁজার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন এক ব্যবসায়ী। প্রায় ১০০ মিটার দূরেই জ্বলছে আগুন।

এর পরে চারতলা। সিঁড়িতে অগ্নিনির্বাপণ নিয়ে সচেতনতার পোস্টার। কিন্তু রিজার্ভারে না রয়েছে জল, না রয়েছে আগুন নেভানোর ন্যূনতম ব্যবস্থা। পাইপ থেকে জলের বদলে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। আগুনের তাপ, কালো ধোঁয়া, ছাই এবং অন্ধকারে সামলাতে হচ্ছে অক্সিজেনের ঘাটতিও। কারওর নাকে মুখে রুমাল বাঁধা, কেউ বা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বছরের পর বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যবসার শেষ অংশ থেকে বাঁচার রসদ খুঁজতে এসেছেন। কাশছেন প্রত্যেকেই। দমকলের কর্মীরা বলে চলেছেন, ‘হামাগুড়ি দিয়ে যান। তা হলে কাশি কম হবে।’ ব্যবসায়ী আকাশ মেটা যখন দোকান থেকে কোনও ভাবে বাঁচিয়ে রাখা মালপত্র নিয়ে বেরোচ্ছেন, তখনই সরু গলি থেকে দমকা আগুন। কোনও ক্রমে রক্ষা পেলেন তিনি। সেই আগুন থেকে বেঁচে উপরে ওঠার চেষ্টা করতেই দেখা গেল, সিঁড়িগুলিতে জল ও ছাই মিশে বেশ পিছল। কোনও ভাবে পাঁচতলায় উঠে দেখা গেল, প্রায় কেউই নেই। কসমেটিকস, উপহার দেওয়ার সামগ্রী ও ওষুধের দোকান ছিল সেখানে। কালো ধোঁয়ার ভিতর থেকে হঠাৎই বেরিয়ে এলেন এক জন— চকলেট বিক্রেতা রাকেশ রায়। থরথর করে কাঁপছেন। বললেন, ‘‘দোকানটাই পুড়ে গেল। বাঁচাতে পারলাম না।’’ তখনই দোকানের ভিতরে বিস্ফোরণের শব্দ।

আরও পড়ুন: ফের যেন অগ্নিপরীক্ষা, পুড়ে ছাই বাগড়ি বাজার, পুজোর আগে সর্বস্বান্ত বহু

জতুগৃহের ছাদে উঠে দেখা গেল, অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া কয়েকটি খুপরি ঘর। মূলত নিরাপত্তারক্ষীদের জন্যই তৈরি। কোনও ঘরের দরজা খোলা, কোথাও বসানো ভাতের হাঁড়ি। জামাকাপড় ঝুলছে। কানে ভেসে এল রাকেশবাবুর কথা, ‘‘উপরে তো চলে এসেছি। নীচে নামতে পারব তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Asset Search
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE