Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শহর জুড়ে ‘চল্লিশ’ চুরি

নিয়মকে নস্যাৎ করেই বিকোচ্ছে ক্যারিব্যাগ

নিয়মে আছে, প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরির সময়ে গায়ে লিখে দিতে হবে ঘনত্বের মাপ। না লেখা থাকলে সেই ব্যাগ ‘বেআইনি’। দেখা যাচ্ছে, শহরের বিভিন্ন বাজারে দেদার বিক্রি হওয়া অধিকাংশ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগেই লেখা নেই সেই ঘনত্ব।

জগন্নাথ ঘাট ফুলবাজারের কাছে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের এমন ক্যারিব্যাগ। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জগন্নাথ ঘাট ফুলবাজারের কাছে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের এমন ক্যারিব্যাগ। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

নিয়মে আছে, প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরির সময়ে গায়ে লিখে দিতে হবে ঘনত্বের মাপ। না লেখা থাকলে সেই ব্যাগ ‘বেআইনি’। দেখা যাচ্ছে, শহরের বিভিন্ন বাজারে দেদার বিক্রি হওয়া অধিকাংশ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগেই লেখা নেই সেই ঘনত্ব। অভিযোগ, তবু তা বন্ধের জন্য কাউকে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। সে বিষয়ে কোনও ভাবনাই নেই বিক্রেতা-ক্রেতাদের।

সোমবার মানিকতলা বাজারে গিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগের কথা জিজ্ঞাসা করতেই একটি দশকর্মার দোকান দেখিয়ে দিলেন এক ব্যক্তি। বিক্রেতা বললেন, ‘‘পাঁচশো গ্রাম থেকে কুড়ি কিলোগ্রাম। যে কোনও পরিমাণ জিনিস টানার ব্যাগ আছে।’’ তবে কোনওটিতেই লেখা নেই মাপ।

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত আইনি আধিকারিক এবং পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন প্রতিটি প্লাস্টিক ব্যাগ ন্যূনতম ৪০ মাইক্রন এবং ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চির মধ্যে হতে হবে। প্রতিটির গায়ে লিখতে হবে ঘনত্বের পরিমাপ, আয়তন, প্রস্তুতকারক সংস্থার নাম-ঠিকানা। না হলে প্লাস্টিক বিরোধী আইনের চোখে সেই ব্যাগ বেআইনি।’’

শহরে একাধিক ক্যারিব্যাগ বিক্রেতা জানান, কোলে মার্কেটের প্লাস্টিকপট্টিই হচ্ছে কলকাতার ক্যারিব্যাগের পাইকারি বাজার। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় সাদা, নীল, কালো রঙের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ কিলো দরে দেদার বিকোচ্ছে। ৯০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম। পাইকারিতে কিনতে হলে এক জনকে ন্যূনতম আড়াই কিলো কিনতে হবে। পরে সেই ক্যারিব্যাগই ১০০ বা ১৫০টির প্যাকেট হয়ে বিক্রি হবে খুচরো দরে। ঘনত্বের মাপ লেখা নেই কোথাও। ব্যাগ কতটা মোটা বা পাতলা, তার উপরেই দর ওঠা-নামা করছে। দু’-এক কথা জিজ্ঞেস করতেই পাইকারি বিক্রেতা সঞ্জীব দাস বলেন, ‘‘বেশি নিয়ম জানি না। আমাদের কাজ বিক্রি করা, তা-ই করি।’’

গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট, যাদবপুর সিআইটি মার্কেটে গিয়েও ক্যারিব্যাগের কথা জিজ্ঞাসা করতেই দশকর্মার দোকান দেখিয়ে দেওয়া হল। প্রতি প্যাকেট ৭০-৭৫ টাকা দরে কিনছেন বাজারেরই ব্যবসায়ীরা।

এই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিক্রি বন্ধের ক্ষেত্রে নিজেদের অসহায়তার কথা কার্যত স্বীকার করে নেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা এ সব বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশাবলী মেনে কাজ করি। সেই অনুসারে আমরা শুধু নির্দেশিকা জারি করতে পারি। কিন্তু কিছু বন্ধের জন্য কাউকে চাপ দিতে পারি না। তা করার কথা পুরসভা, পঞ্চায়েত বা পুলিশের।’’

কলকাতার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘প্লাস্টিকমুক্ত কলকাতা আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু এত বড় শহরে চাপ দিয়ে কিছু করা যাবে না। সচেতনতা গড়তে প্রচার চালাচ্ছি। শহরবাসী আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata news plastic plastic selling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE