নাতির সঙ্গে দেবব্রতবাবুর বাবা দুর্গাপদবাবু। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
পাড়ার কালীপুজো উপলক্ষে রাস্তায় ম্যারাপ বেঁধে খাওয়াদাওয়া। এবং সেই রাস্তায় একটি গাড়ি ঢুকে পড়াকে কেন্দ্র করে বচসা। আর বচসার জেরে রাতভর তাণ্ডব, হুমকি, এমনকী জানলা লক্ষ করে ইট ছোড়ার অভিযোগ। বরাহনগরের টবিন রোডের কাছে ত্রৈলোক্যনাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এই ঘটনায় রবিবার রাতেই এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, থানায় দায়ের করা অভিযোগে এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দিনভর কালীপুজোর হইচই, মাঝরাত পর্যন্ত ভাসান সেরে বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। রাত তিনটে নাগাদ হঠাৎই তাঁর বাড়ির নীচে এসে চড়া গলায় ডাকাডাকি শুরু করেন স্থানীয় আর এক বাসিন্দা অংশুমান ভট্টাচার্য। তা শুনে দেবব্রতবাবুর মা, বছর সত্তরের প্রণিতাদেবী বেরিয়ে এলে অংশুমান তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়ান। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, হুমকির পরে এক সময়ে বড় বড় আধলা ইটও ছুড়তে থাকেন দোতলার ঘরের দিকে। জানলার কাচ ভেঙে যায়। আতঙ্কে তখনই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন প্রণিতাদেবী। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে তাঁকে।
আধ ঘণ্টার এই তাণ্ডব চলার পরে দেবব্রতবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় অংশুমানবাবুকে। সোমবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে জামিন পান তিনি। দেবব্রতবাবুর পরিবারের তরফে অভিযোগ, পাঁচ-ছ’মাস আগে পাড়ার একটি মদ-গাঁজার ঠেকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন দেবব্রতবাবুর ভাই শুভব্রতবাবু। ওই ঠেকের ছেলেদের পরোক্ষে মদত দিতেন অংশুমানবাবু। দেবব্রতবাবুর পরিবারের দাবি, এ নিয়ে পুরনো আক্রোশের জেরেই রবিবার রাতের এই হামলা। যদিও এই মদ-গাঁজার ঠেকের অভিযোগটি মৌখিক ভাবেই জানিয়েছে দেবব্রতবাবুর পরিবার। পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআরে এই ঘটনা উল্লেখ করেননি তাঁরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ। টবিন রোডে শ্রীপল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের কালীপুজো উপলক্ষে সরু রাস্তার ধারে ম্যারাপ বেঁধে, চেয়ার-টেবিল পেতে ভোজ চলছিল তখন। হঠাৎই ওই রাস্তা দিয়ে একটি গাড়ি বেরোতে যায়। দেবব্রতবাবুর অভিযোগ, গাড়িটি ইচ্ছাকৃত ভাবে কয়েক জনকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে ঘটনাস্থলেই গাড়ির চালকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। গাড়ির চালক তাঁকে ‘দেখে নেব’ হুমকি দেন বলেও অভিযোগ।
ঘটনাচক্রে ওই গাড়িটির চালক ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী অংশুমান ভট্টাচার্যের অতিথি। দিনভর সপরিবার অংশুমানবাবুর বাড়িতে কাটিয়ে রাতে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে বচসা বাধার জেরেই মাঝরাতে দেবব্রতবাবুর বাড়িতে অংশুমানবাবু চড়াও হন বলে সূত্রের খবর। সে কথা স্বীকার করেছেন অংশুমানবাবু নিজেও। সোমবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরেই দুই পরিবারের সমস্যা চলছে। তাঁর দাবি, আগেও বিভিন্ন সময়ে তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছেন দেবব্রতবাবু। বচসাও হয়েছে। তবে রবিবার রাতে উত্তেজনার বশে তিনি মাত্রাছাড়া আচরণ করেছেন, তা মেনে নিয়েছেন অংশুমানবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্কুলের বন্ধু এসেছিলেন বহু কাল পরে। তিনি গাড়ি নিয়ে ফেরার সময়ে অকারণে অপমান করেন দেবব্রতবাবু। আমি ঘটনাস্থলে ছিলামও না। পরে পাড়ার ছেলেদের মুখে শুনে সোজা চলে যাই দেবব্রতবাবুর সঙ্গে কথা বলতে। উনি নীচে না নামায় আরও মাথা গরম হয়ে যায়। কয়েকটা ইট ছুড়ে ফেলি ওদের জানলায়।’’ তবে মদ-গাঁজার ঠেকের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত পনেরো বছর পাড়ার কালীপুজোর দায়িত্ব সামলেছেন অংশুমানবাবু। গত বছর তা হস্তান্তরিত হয়েছে দেবব্রতবাবুর কাছে। এ নিয়ে ঝামেলা রয়েছে তাঁদের মধ্যে। আগেও মাঝেমধ্যেই তাঁদের বচসায় জড়াতে দেখেছেন এলাকাবাসী। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দুই পরিবারের মধ্যে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা রয়েছে। পারিবারিক শত্রুতাও নতুন নয়। তার জেরেই রবিবারের ঘটনা বলে অনুমান।
পুলিশ যা-ই করুক, গোটা পরিবার ভয়ে সিঁটিয়ে। দেবব্রতবাবুর বিরাশি বছরের বৃদ্ধ বাবা দুর্গাপদবাবু কিংবা সাড়ে চার বছরের ছেলে আহানের মুখ-চোখ তা-ই বলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy