Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কৃত্রিম পা নিয়েই কাজে সার্জেন্ট

বেপরোয়া যান শাসন করতে চলতি সপ্তাহেই আবার রাস্তায় নামছেন কলকাতার এক তরুণ পুলিশ অফিসার। ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বাকি রয়েছে শুধু কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসকদের ছাড়পত্র। ওই ছাড়পত্র মিললেই আজ, সোমবার উর্দি পরে, কৃত্রিম পা নিয়ে ফের মহানগরীর রাস্তায় দাঁড়াবেন তিনি।

লড়াকু: কৃত্রিম পা নিয়েই স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন সুদীপবাবু। ছবি: সুদীপ ঘোষ

লড়াকু: কৃত্রিম পা নিয়েই স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন সুদীপবাবু। ছবি: সুদীপ ঘোষ

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

শেষ হতে চলেছে এক বছর এগারো দিনের অপেক্ষা।

বেপরোয়া যান শাসন করতে চলতি সপ্তাহেই আবার রাস্তায় নামছেন কলকাতার এক তরুণ পুলিশ অফিসার। ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বাকি রয়েছে শুধু কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসকদের ছাড়পত্র। ওই ছাড়পত্র মিললেই আজ, সোমবার উর্দি পরে, কৃত্রিম পা নিয়ে ফের মহানগরীর রাস্তায় দাঁড়াবেন তিনি। সূত্রের খবর, নতুন ভাবে ওই অফিসার কাজে যোগ দিলে গাড়ির চাপ কম, এমন এলাকাতেই তাঁকে ডিউটি দেওয়া হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই অফিসারের নাম সুদীপ রায়। তিনি সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত। ২০১৪-র ব্যাচের এই সার্জেন্টকে গত বছরের ৭ জুন পিষে দিয়েছিল বেপরোয়া একটি মিনিবাস। ডাফরিন রোডে তিনি ডিউটি করার সময়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। টুকরো হয়ে যাওয়া পেলভিস জয়েন্ট, থেঁতলে যাওয়া পা নিয়ে সুদীপকে ওই দিনই ভর্তি করানো হয় একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। প্রাণে বেঁচে গেলেও বাদ দিতে হয় তাঁর ডান পা। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি ওই অফিসার। সে সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্য এবং কলকাতা পুলিশের কর্তারা। সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য তাঁদের পাশাপাশি সুদীপ কৃতিত্ব দিচ্ছেন আর এক অফিসার জয়ন্ত রায়কেও। যিনি সুদীপের দাদা মলয় রায়ের (বর্তমানে পূর্ব যাদবপুর ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি) মতোই সব সময়ে তাঁর পাশে থেকেছেন। তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন।

সুদীপ জানাচ্ছেন, মূলত বাহিনীর শীর্ষ কর্তারাই তাঁর মনের জোর দেখে কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করতে বলেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করবে কলকাতা পুলিশ। একবালপুরের ওই হাসপাতালেই ১৬ অক্টোবর অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম পা বসানো হয় সুদীপের। এর পরে শুরু হয় নতুন লড়াই। লালবাজার জানিয়েছে, মনের জোর সম্বল করেই গত আট মাস সুদীপ নিজেকে প্রস্তুত করেছেন রাস্তায় নেমে আবার ডিউটি করার জন্য। আর তাতেই সফল তিনি।

কৃত্রিম পা নিয়েই ওই অফিসার এখন বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাজার করছেন। মোটরবাইক চালিয়ে ছেলেকে ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছেন। ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে হাতে তুলে নিয়েছেন ক্রিকেট ব্যাটও। ইতিমধ্যেই গত শুক্রবার তাঁকে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট দিয়েছেন একবালপুরের বেসরকারি হাসপাতালের অস্থি শল্য চিকিৎসক চন্দ্রশেখর ধর।

তার পরেই সুদীপ গিয়েছিলেন নিজের কর্মস্থল সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসে। দেখা করেছেন সেখানকার ওসি জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অতিরিক্ত ওসি বিভাস মণ্ডল এবং সহকর্মীদের সঙ্গে। নতুন দু’জোড়া উর্দিও তৈরি করে রেখেছেন ওই অফিসার। যাতে পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ফিট সার্টিফিকেট দিলেই কাজে যোগ দিতে দেরি না হয়।

সুদীপের এই মনের জোরকে ইতিবাচক ভাবে দেখছেন তাঁর মা-ও। তিনি জানালেন, আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে, ছেলে কাজে যোগ দেবে, এটা ভেবেই ভাল লাগছে। বছর দশেকের ছেলে সৌমিকও খুশি বাবার কাজে যোগ দেওয়ার খবরে। আর ওই অফিসার বলছেন, ‘‘স্যরেরা যেখানে ডিউটি দেবেন, সেখানেই করব। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব না জানি। কিন্তু ইচ্ছে, আগের মতো রাস্তায় নামব। অতীতের ঘটনা মনে রাখতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE