Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

অধিকার জিইয়ে রাখতেই পুজো সোনাগাছিতে

লকডাউনে তাঁদের মতো আরও অনেকেই যে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন, পোস্টারে সে কথা বলবে যৌনকর্মীদের সন্তানেরা।

আরাধনা: সোনাগাছির যৌনকর্মীদের আয়োজিত পুজো। ফাইল চিত্র

আরাধনা: সোনাগাছির যৌনকর্মীদের আয়োজিত পুজো। ফাইল চিত্র

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩০
Share: Save:

করোনা-আবহে গত কয়েক মাস বন্ধ রোজগার। সংক্রমণের ভয়ে দেখা নেই গ্রাহকদেরও। ফলে পেট চালানোই দায় হয়ে উঠেছে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের। কিন্তু তা বলে এই দুর্যোগেও দুর্গাপুজোয় ‘না’ বলতে রাজি নন তাঁরা। কলকাতা হাইকোর্টে রীতিমতো লড়াই করে প্রকাশ্যে যে পুজো করার অধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন, সেই অধিকার বজায় রাখতে এ বছরও কোভিড-বিধি মেনে দেবীর আরাধনা করবেন যৌনপল্লির মেয়েরা। আর যে কারণে গত কয়েক মাস তাঁদের রোজগার প্রায় বন্ধ, সেই লকডাউনকেই পুজোর থিম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তাঁরা।

আর পাঁচটা পুজোমণ্ডপ থেকে ব্রাত্য থাকতে থাকতে এক সময়ে নিজেদের পুজো করার ইচ্ছে জেগেছিল সোনাগাছির যৌনকর্মীদের। ২০১৩ সালে ঘুপচি ঘরে সেই পুজো শুরু হলেও মন ভরেনি। অবশেষে ২০১৭ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে শোভাবাজার এলাকার মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের উপরে আট বাই কুড়ি ফুটের মণ্ডপে দুর্গাপুজো করার অনুমতি পান তাঁরা। করোনার কারণে রোজগার আটকে গেলেও পুজোর অধিকারও থমকে যাক, এমনটা চাইছেন না কেউই। তাই কোভিড-সুরক্ষা মেনে, মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের জন্য মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার-থার্মাল গান রেখে এবং দূরত্ব-বিধি যথাসম্ভব মেনে এ বছর পুজো হবে সোনাগাছিতে। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির প্রধান স্মরজিৎ জানার কথায়, ‘‘গত তিন বছর রাস্তার উপরে পুজো করলেও অনেকেই ঝামেলা করার চেষ্টা করেছেন। এ বছর পুজো না করলে আগামী বছর তাঁরা আর আদৌ পুজো করতে দেবেন কি না, সেই চিন্তা মাথায় ঘুরছে মেয়েদের। তাই অধিকারের দাবি বজায় রাখতেই খানিকটা ছোট করে, কম বাজেটে পুজো করা হবে সোনাগাছিতে।’’

গত বছর থেকে থিমের পুজো শুরু করেছিল সোনাগাছি। এ বারে অনাড়ম্বর পুজো হলেও থিম ছাড়ছেন না যৌনকর্মীরা। এ বারের ট্যাগলাইন— ‘ভেঙে মোর ঘরের তালা, নিয়ে যাবি কে আমারে’। মণ্ডপের সামনে দরজায় বিশালাকৃতি তালা ঝুলিয়েই তালাবন্দি দিনগুলির কথা মনে করাবেন যৌনকর্মীরা। লকডাউনে তাঁদের মতো আরও অনেকেই যে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন, পোস্টারে সে কথা বলবে যৌনকর্মীদের সন্তানেরা।

কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা পুজো করবেন কী ভাবে? দুর্বারের সচিব এবং যৌনকর্মী কাজল বসু বলছেন, ‘‘এটা তো শুধু পুজো নয়, আমাদের দীর্ঘ লড়াই এবং আবেগ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই পুজো বন্ধের প্রশ্নই ওঠে না। কম খরচে ছোট করেই পুজো হবে। এর জন্য মেয়েদের থেকে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে না। পাঁচ ফুটেরও কম উচ্চতার প্রতিমার বায়না করার কথা আছে কুমোরটুলিতে।’’ অন্য বছরের মতো এ বারেও থাকছে ভোগের ব্যবস্থা। তবে ছোঁয়াচ এড়াতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এ বার করা হবে না বলেই দুর্বার সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE