Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিক্ষোভ বাম পড়ুয়াদের

‘সঙ্ঘ-সমর্থিত’ সভা ভন্ডুল প্রেসিডেন্সিতে

সভা ডাকা হয়েছিল ‘স্টুডেন্টস অব প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি’র ব্যানারে। কিন্তু অন্যতম বক্তা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পরিচিত নেতা। এই অবস্থায় সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থনে অনুষ্ঠান হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সভা ভন্ডুল করে দিল বাম ছাত্র সংগঠন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

সভা ডাকা হয়েছিল ‘স্টুডেন্টস অব প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি’র ব্যানারে। কিন্তু অন্যতম বক্তা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পরিচিত নেতা। এই অবস্থায় সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থনে অনুষ্ঠান হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সভা ভন্ডুল করে দিল বাম ছাত্র সংগঠন। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্সির তথাকথিত ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা’র ব্যূহ ভেদ করে ওই সভার বেশ কয়েক জন বহিরাগত বক্তা ক্যাম্পাসে ঢুকলেন কী ভাবে?

আজ, শনিবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে শুক্রবার কিছু পড়ুয়া ক্যাম্পাসের ভিতরে ইউনিয়ন রুমের সামনে একটি সভার আয়োজন করেন। সভার পরে তাঁরা দুঃস্থদের খাবার ও পোশাক বিতরণের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের আওতায় সভা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই এবং আইসি-সমর্থক পড়ুয়ারা। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান ভন্ডুল হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টস অরুণ মাইতি জানান, কিছু ছাত্র এই অনুষ্ঠান করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুস সামাদ গায়েন সেই অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে জানানো হয়েছিল। সভার পরে দুঃস্থদের জন্য খাবার ও পোশাক বিতরণের পরিকল্পনাও ছিল। তাঁরা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু এসএফআই নেতা শুভজিৎ সরকারের অভিযোগ, যে-সব ছাত্র এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, তাঁদের মধ্যে সঙ্ঘ পরিবার এবং তৃণমূলের সমর্থকেরা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বক্তারা আপত্তিজনক কথা বলছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষও করেন তাঁরা। তার পরেই আমরা ওই সভার ব্যাপারে আপত্তি জানাই। আয়োজকদের জেনে নেওয়া প্রয়োজন, প্রেসিডেন্সিতে গেরুয়া সন্ত্রাসের কোনও জায়গা নেই।’’ ওই সভার প্রতিবাদে পরে প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে মিছিলও বার করা হয়।

এ দিনের অনুষ্ঠানে অন্যতম বক্তা ছিলেন বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজের শিক্ষক এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পরিচিত নেতা দেবাশিস চৌধুরী। তিনি জানান, বেশ কিছু পথশিশু ও দুঃস্থ ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বক্তৃতায় কার্ল মার্ক্সের প্রসঙ্গ আসতেই কিছু ছাত্র রে-রে করে ওঠেন। সভা ভেস্তে যায়। অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সিটি অব কমার্স কলেজের শিক্ষক আদিত্য দাস, সুরেন্দ্রনাথ মহিলা কলেজের পাপিয়া মিত্র প্রমুখ। এবিভিপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুবীর হালদার বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সিতে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী পালনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সভা চলাকালীন অতি-বামপন্থী ও কিছু নকশাল হঠাৎ এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি দেয়। জাতীয়তাবাদী প্রফেসরদের হেনস্থা মুখে পড়তে হয়। বামপন্থীরা আবার প্রমাণ করল যে, তারা অসহিষ্ণু।’’

ডিন অব স্টুডেন্টস অবশ্য বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি সব সময় বিভাজনের বিরুদ্ধে। সম্প্রীতি যাতে নষ্ট না-হয়, কর্তৃপক্ষ সেই দিকে কড়া নজর রাখেন।’’ পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, এ দিনের বক্তারা ঢুকলেন কী করে? প্রেসিডেন্সিতে ঢুকতে গেলে পরিচয়পত্র বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। প্রাক্তন শিক্ষক, প্রাক্তন পড়ুয়া-সহ সকলের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। ডিন অব স্টুডেন্টস জানান, বহিরাগত বক্তারা পরিচয়পত্র দেখিয়েই ক্যাম্পাসে ঢুকেছিলেন। এক শিক্ষকের অতিথি বলে গেটে উল্লেখ করেছিলেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency University SFI RSS Meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE