Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাসঘর ‘দখল’ করে সংসার বস্তিবাসীদের

বুধবার স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, দরমার বেড়া দিয়ে শ্রেণিকক্ষ দু’ভাগ করে সেখানে রয়েছেন লোকজন। একটি ঘুপচি ঘরে একটি পরিবার।

বেআইনি: দরমার বেড়া দিয়ে ক্লাসঘর ভাগ করে চলছে বসবাস। বুধবার, খন্না হাইস্কুলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বেআইনি: দরমার বেড়া দিয়ে ক্লাসঘর ভাগ করে চলছে বসবাস। বুধবার, খন্না হাইস্কুলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

বেলেঘাটার খন্না হাইস্কুলের কয়েকটি ঘর দখল করে বসবাসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর ও স্কুল কমিটির মদতে প্রাথমিক বিভাগের তিনটি শ্রেণিকক্ষ, কম্পিউটারের একটি ঘর এবং ম্যানেজিং কমিটির একটি ঘরে থাকতে শুরু করছেন স্কুল লাগোয়া বস্তির বাসিন্দাদের কয়েক জন। এর ফলে পঠনপাঠন কার্যত বন্ধ হতে বসেছে।

খন্না হাইস্কুলে সকালে মেয়েদের ক্লাস চলে। দুপুরে চলে প্রাথমিক বিভাগ ও ছেলেদের ক্লাস। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে ওই স্কুলে। তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, শুধু শ্রেণিকক্ষেই নয়। স্কুলের পিছনে একটি খোলা জায়গায় বেড়ার ঘর তৈরি করে থাকতে দেওয়া হয়েছে বস্তির বাসিন্দাদের।

বুধবার স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, দরমার বেড়া দিয়ে শ্রেণিকক্ষ দু’ভাগ করে সেখানে রয়েছেন লোকজন। একটি ঘুপচি ঘরে একটি পরিবার। এমনই এক জন সিপাহী রায়ের ঘরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেই শোয়া ও রান্নার ব্যবস্থা। ব্ল্য়াকবোর্ডের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা। সিপাহীর ঘরের পাশে পরিবার নিয়ে রয়েছেন গুড্ডি জয়সওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ-ছ’দিন এখানে পরিবার নিয়ে আছি। আমাদের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কোথায় যাব আমরা?’’

শুধু ক্লাসঘরই নয়, স্কুলের পিছনে ছোট জায়গায় লাইন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বেড়ার ঘর। অভিযোগ, এর জন্য স্কুলের একতলার পুরো জায়গা এবং ঢোকা-বেরোনোর পথ সরু হয়ে গিয়েছে। ছোটো ঘুপচি ঘরগুলিতে গ্যাস জ্বালিয়ে চলছে রান্না। উপরের তলায় হচ্ছে ক্লাস। রণজিৎ সাউ নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ছাত্রছাত্রীরা তো বেরোতেই পারবে না। পুরো বিষয়টি আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। জানানো হয়েছে স্থানীয় থানা ও স্কুলশিক্ষা দফতরেও।’’

কেন ক্লাসঘরে বস্তিবাসীদের থাকতে দেওয়া হল? স্কুল কমিটির তরফে মাধবেন্দ্র প্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘ওই বস্তি ভেঙে কলেজ তৈরি হবে। সেটি তৈরির বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। কলেজ তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় বস্তি ভাঙা হয়েছে। তাই সেখানকার লোকদের স্কুলে থাকতে দেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য ক্লাসঘর কেন? স্থানীয় কাউন্সিলর রাজেশ খন্না বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থা সাময়িক। কিছু দিনের মধ্যেই ওঁদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হবে। যে ক্লাসগুলিতে বস্তির লোকজন থাকছেন, সেই পড়ুয়াদের অন্য ঘরে ক্লাস হচ্ছে। পঠনপাঠনে ক্ষতি হচ্ছে না।’’

যদিও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’ খন্না হাইস্কুলের বালিকা বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা মিঠু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ক্লাসগুলিতে এখন লোকজন থাকছেন, সেখানে মেয়েদের বিভাগের ক্লাস হয় না। ফলে বিস্তারিত কিছু জানি না। পঠনপাঠনে সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে শুনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Slum Classroom Khanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE