Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাঝ আকাশে বিমানে আগুন

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দুপুর ২টো ৩৮ মিনিটে ১৭৯ জনকে নিয়ে টেক-অফ করে বিমানটি। এর মিনিট তিনেকের মধ্যেই পাইলট এটিসি-কে ‘প্যান প্যান’ বার্তা পাঠান।

মাঝ আকাশের ইন্ডিগোর বিমানে আগুন। প্রতীকী ছবি।

মাঝ আকাশের ইন্ডিগোর বিমানে আগুন। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

দুপুরের খাওয়া সেরে সবে বাড়ির বাইরে এসেছিলেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল সান্যাল। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল একটি বিমান। চঞ্চলবাবু দেখেন, ওই বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে আগুনের গোলার মতো কিছু ছিটকে বেরোচ্ছে। সঙ্গে ‘দুম দুম’ আওয়াজ। বিমানবন্দরেই একটি এয়ারলাইন্সের গাড়ি চালান চঞ্চলবাবু। বিমানটি যে ঘোর বিপদে, মুহূর্তেই বুঝে যান তিনি। ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে দেন বিমানবন্দরে। সঙ্গে সঙ্গেই খবর চলে যায় এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কাছে। তত ক্ষণে অবশ্য ওই বিমানের পাইলটও জরুরি বার্তা পাঠিয়ে অবতরণ করতে চেয়েছেন। শেষমেশ বড় কোনও অঘটন ছাড়াই নির্বিঘ্নে নেমে আসে বিমানটি।

সোমবার এই ঘটনা ঘটেছে কলকাতা থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়া ইন্ডিগো-র একটি বিমানে। আকাশে কোনও বিমান যদি হঠাৎ খুব গুরুতর বিপদের মুখোমুখি হয়, তখন পাইলট আর কিছু না বলে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে প্রথমেই ‘প্যান, প্যান’ বলে সতর্ক করেন। এ দিন কলকাতা থেকে টেক-অফ করার পরেই ইন্ডিগো-র পাইলট ওই জরুরি বার্তা পাঠিয়েছিলেন এটিসি-কে। জানিয়েছিলেন, বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি জরুরি অবতরণ করতে চান।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দুপুর ২টো ৩৮ মিনিটে ১৭৯ জনকে নিয়ে টেক-অফ করে বিমানটি। এর মিনিট তিনেকের মধ্যেই পাইলট এটিসি-কে ‘প্যান প্যান’ বার্তা পাঠান। অ্যাপ্রন এলাকায় (যেখানে বিমান দাঁড়ায় এবং অন্য গাড়িও যাতায়াত করে) গাড়ির গতিবিধি যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, যাঁরা ঠিক করেন, বিমানকে কোন পার্কিং বে-তে দাঁড় করানো হবে, সেই অ্যাপ্রন কন্ট্রোলের অফিসারেরা গিয়ে নিয়ম মাফিক রানওয়ে পরীক্ষা করে আসেন। তৈরি রাখা হয়, দমকলবাহিনী ও অ্যাম্বুল্যান্স। দুপুর ২টো ৫৭ মিনিটে বিমানটি নেমে আসার পরে অবশ্য আর ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়নি। যাত্রীদের নামিয়ে নিয়ে ইন্ডিগো-র অন্য বিমানে তাঁদের দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ দিন সন্ধ্যায় চঞ্চলবাবু বলেন, ‘‘দুম দুম করে বার তিনেক শব্দ হল। সঙ্গে বেরিয়ে এল আগুনের গোলা। আমি দশ বছরেরও বেশি বিমানবন্দরে কাজ করছি। ওই অ্যাপ্রন এলাকাতেই গাড়ি চালাই। আজ আমার ছুটি ছিল। ওই দৃশ্য দেখেই মনে হল, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো দরকার। আমি অ্যাপ্রন কন্ট্রোলে ফোন করে বিষয়টি জানাই।’’

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে যাঁরা পাখি তাড়ানোর কাজ করেন, এমন এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীও এ দিন একই ভাবে রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন, আকাশে ওড়ার পরেই বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে আগুনের গোলা ও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তিনিও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। ও দিকে চঞ্চলবাবুর ফোন পেয়ে অ্যাপ্রন কন্ট্রোল থেকে বিষয়টি জানানো হয় এটিসি-কে। সূত্রের খবর, প্রায় একই সময়ে ওই বিমানের পাইলটও যোগাযোগ করেন এটিসি-র সঙ্গে। তবে, পাইলট যে বার্তা এটিসি-কে পাঠিয়েছিলেন, সেখানে ইঞ্জিনে আগুন লাগার উল্লেখ ছিল না। শুধু বলা হয়, ইঞ্জিন বিগড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইন্ডিগো তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, টেক-অফের পরে পাইলট বুঝতে পারেন, ডান দিকের ইঞ্জিন প্রবল জোরে কাঁপছে। তার পরেই তিনি জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।

বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE