Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিষ ধরলেও ধরা পড়বে কি পাণ্ডারা

এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছিল সুদৃশ্য পাত্র ভর্তি সাপের বিষ। ফাইল চিত্র।

এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছিল সুদৃশ্য পাত্র ভর্তি সাপের বিষ। ফাইল চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

মাস খানেক আগে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে এ রাজ্যে আনা হয়েছিল উদ্ধার হওয়া ১০০ কোটি টাকার সাপের বিষ। বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত পেরিয়ে পাচারকারীদের হাত ধরে এ রাজ্যে প্রবেশ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল সড়ক পথে ভারত-নেপাল সীমান্ত দিয়ে নেপালে নিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে চিনে পাচার করা। এর জন্য পাচারকারীরা শিলিগুড়িকে ট্র্যানজিট রুট হিসেবে বেছে নিয়েছিল বলে ধৃতদের জেরা করার পরে দাবি করেছে বন দফতর এবং সিআইডি। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই বিষ-সহ গ্রেফতার হওয়া তিন যুবক আসলে ক্যারিয়র। সাপের বিষ পাচারকারী চক্রের পাণ্ডা এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা এক ব্যক্তি ওই তিন জনকে নিয়োগ করেছিল ওই বিষ নেপালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সেখান থেকে তিব্বত হয়ে তা যাওয়ার কথা চিনে।

সিআইডি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেলে সশস্ত্র সেবা বল, সিআইডি-র স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ এবং বন দফতর একযোগে অভিযান চালিয়ে বারাসত থেকে আন্তর্জাতিক ওই পাচার-চক্রের তিন ক্যারিয়রকে ধরে। উদ্ধার হয় তিনটি জারে ভর্তি একশো কোটি টাকা মূল্যের ওই বিষ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃতদের মঙ্গলবার আদালতে পেশ করার পরে তদন্তভার বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই পাণ্ডার খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

বস্তুত, সাপের বিষ পাচারে গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ করিডর হয়ে উঠেছে। শিলিগুড়িতেও বছর দুয়েক আগে সাপের বিষ পাকড়াও করা হয়েছিল। সে সময়ে তদন্তকারীরা দাবি করেন, বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়ি হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং সেখান থেকে মায়ানমার বা চিনে পাচারের ছক করা হয়েছিল। মায়ানমার ও চিনের ওষুধ শিল্পে সাপের বিষ প্রয়োজনীয়। কিন্তু গত এক বছরে এন্টালি ও নৈহাটি থেকে সাপের বিষ মেলার পরে বন দফতর এবং গোয়েন্দাদের সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণবঙ্গে সাপের বিষ আনা হচ্ছে। তা এই শহরের মাদক চক্রের হাতে যাচ্ছে, বিশেষ করে রেভ পার্টিতে। কিন্তু সেই তথ্য জানার পরেও ধরপাকড় হয়নি। খোঁজ মেলেনি চক্রের মাথাদেরও।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ সংলগ্ন বিহারের সঙ্গে বন্যার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে। তাই ধৃতরা অপেক্ষা করেছিল পাচারের আগে। সিআইডি-র তদন্তকারীরা খোঁজ পেয়ে ক্রেতা সেজে ওই ক্যারিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, ‘‘মোটা টাকার বিনিময়ে কলকাতাতেই ওই বিষ কেনা হবে, এই আশ্বাস দেওয়ার পরেই ধৃতরা তা বিক্রি করতে রাজি হয়েছিল।’’

বন দফতর ওই তদন্তভার হাতে নিলেও চক্রের পাণ্ডারা ধরা পড়বে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বনকর্মীদের একাংশের মধ্যে। সূত্রের খবর, গত এক বছরে সাপের বিষ ধরা পড়েছিল দু’বার। কিন্তু তা কতটা খাঁটি, তা আজও জানতে পারেনি বন দফতর। এক কর্তা জানাচ্ছেন, সেই রিপোর্টের অপেক্ষায় তদন্ত যেমন আটকে, তেমনই নৈহাটি ও এন্টালি থেকে সাপের বিষ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সাত জনের পরে আর কাউকে ধরা যায়নি। মঙ্গলবার বারাসত থেকে ফের সাপের বিষ উদ্ধার করেছে সিআইডি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে,
এই চক্রের চাঁইরা কি ধরা পড়বে?

কেন মেলেনি সাপের বিষ পরীক্ষার রিপোর্ট?

বন দফতরের বন্যপ্রাণ শাখার বনপাল (সদর) শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলছেন, মহারাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারেই এই বিষ পরীক্ষা করা হয়। সেখানে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু রিপোর্ট এখনও মেলেনি। বন দফতর সূত্রের দাবি, রিপোর্ট চেয়ে বারবার সেখানে তাগাদা করা হয়েছে।

বন দফতরের একাংশ বলছে, এন্টালি ও নৈহাটির চক্রের এক চাঁইকে
শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সে বেপাত্তা।
আরও কয়েকটি জায়গায় হানা তল্লাশি হলেও লাভ হয়নি। “কেউ ধরা পড়েনি মানেই তদন্ত থেমে গিয়েছে, এমনটা নয়,” বলছেন এক বনকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE