Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসার বিল আদায়ে ‘ঘুরপথ’

‘ইএমআই’ চালু করে রোগীর পরিজনদের সঙ্গে খরচ সংক্রান্ত সংঘাত এড়াতে চাইছে কলকাতার কিছু বেসরকারি হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতালে খরচকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতি উত্তপ্ত। আমরি-কাণ্ডের জট এখনও খোলেনি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১১
Share: Save:

‘ইএমআই’ চালু করে রোগীর পরিজনদের সঙ্গে খরচ সংক্রান্ত সংঘাত এড়াতে চাইছে কলকাতার কিছু বেসরকারি হাসপাতাল।

বেসরকারি হাসপাতালে খরচকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতি উত্তপ্ত। আমরি-কাণ্ডের জট এখনও খোলেনি। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে মাত্রাতিরিক্ত খরচ নিয়ে সতর্ক করেছেন। বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে কোনও অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখার জন্য আলাদা স্বাস্থ্য কমিশনও তৈরি হয়েছে। স্বভাবতই বিল করা নিয়ে প্রতি পদক্ষেপ অতি সাবধানে ফেলতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে। এই পরিস্থিতিতে তারা বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করছে। চালু করছে ইএমআই-এর মাধ্যমে চিকিৎসার খরচ মেটানোর ব্যবস্থা।

এতে হাসপাতালের কী লাভ? সল্টলেক-ঢাকুরিয়া-মুকুন্দপুরের এক হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে রূপক বরুয়া, বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালের পক্ষে তরফে তাপস মুখোপাধ্যায়, রাজারহাটের হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায়, মুকুন্দপুরের হাসপাতালের তরফে আশিস মুখোপাধ্যায়ারের মতো অনেকেরই মত, এতে চিকিৎসার টাকা আদায়ের জন্য হাসপাতালকে রোগীর পরিজনের উপরে নির্ভর করতে হয় না। টাকা পুরো মিটিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট আর্থিক সংস্থা। ফলে টাকা দেওয়া নিয়ে হাসপাতাল ও রোগীর পরিজনেদের সংঘাতের অবস্থা তৈরি হয় না।

এক হাসপাতাল কর্তার কথায়, ‘‘আমরা টাকা পেয়ে যাচ্ছি। রোগী-পক্ষ যদি ইএমআই দেওয়া নিয়ে ঝামেলা করে, তা আর্থিক সংস্থার ব্যাপার। কেউ বলতে পারবে না যে, টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিয়েছি।’’ অন্য এক হাসপাতাল কর্তার বক্তব্য, ‘‘এখন যা অবস্থা, তাতে হামেশাই লোকে পুরো টাকা না দিয়ে রোগী নিয়ে চলে যাচ্ছেন। ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ আর কমিশনের ভয় দেখাচ্ছেন। সে দিক থেকে বিনা ঝামেলায় চিকিৎসার খরচ পেয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকাটাই অনেক।’’ আর এক কর্তা বলেন, ‘‘এতে রোগীরও সুবিধা। অনেকেই একসঙ্গে বেশি টাকা দিতে পারেন না। সেটা কয়েক কিস্তিতে দিতে পারছেন।’’

কিন্তু এতে আদৌ রোগীর সুবিধা হচ্ছে, নাকি ঘুরপথে তাঁদের সেই নির্দিষ্ট প্যাকেজের বেশি টাকাই দিতে হচ্ছে, সে প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, এই হাসপাতালগুলিতে ইএমআই পরিষেবা চালানো একাধিক সংস্থাই জানিয়েছে, তারা রোগী-পক্ষের কাছ থেকে এর জন্য সুদ নেয় বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে বিলের টাকার এক শতাংশ নেয়। সেটাই তাদের লাভ। প্রশ্ন উঠেছে, সুদ নেওয়ার অর্থ হল চিকিৎসার যা প্রকৃত খরচ, তার থেকে বেশি টাকা রোগী-পক্ষকে মেটাতে হচ্ছে। আর হাসপাতাল যদি বিলে নির্ধারিত টাকার এক শতাংশ আর্থিক সংস্থাকে দেয়, তা হলে সেই টাকাও তারা রোগীর থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পুষিয়ে দেয়। তা হলে দুই ক্ষেত্রেই তো রোগীকে প্রকৃত চিকিৎসা-খরচের বেশি টাকা দিতে হল। একে কি ‘হিডন কস্ট’ (লুকনো খরচ) ধরা হবে না?

প্রশ্ন উঠেছে, যদি ইএমআইয়ের টাকা আদায়ের জন্য আর্থিক সংস্থাগুলি কোনও রোগী-পক্ষকে হুমকি দেয় বা ভয় দেখায়, সেটাই বা কে দেখবে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এবং স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান অনিল বর্মার সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

EMI facility nursing homes Medical Services
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE