Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাসে নেই হাজিরা, তবে রাস্তায় তাণ্ডব

গোলপার্কে রাস্তা অবরোধ, পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দেওয়া, গাড়ি থামিয়ে চালককে টেনে নামানোর চেষ্টা— যে ভাবে পারা যায়, এ দিন বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো পড়ুয়া। এ দিনের মতো ওই কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। 

হেরম্বচন্দ্র কলেজের ছাত্রদের বিক্ষোভ। শুক্রবার গোলপার্ক মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

হেরম্বচন্দ্র কলেজের ছাত্রদের বিক্ষোভ। শুক্রবার গোলপার্ক মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২২
Share: Save:

পর্যাপ্ত হাজিরা নেই। অথচ পরীক্ষায় বসতে দিতেই হবে।

দক্ষিণ কলকাতায় হেরম্বচন্দ্র কলেজের পড়ুয়াদের একাংশের এই দাবি নিয়েই ধুন্ধুমার হল শুক্রবার। গোলপার্কে রাস্তা অবরোধ, পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দেওয়া, গাড়ি থামিয়ে চালককে টেনে নামানোর চেষ্টা— যে ভাবে পারা যায়, এ দিন বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো পড়ুয়া। এ দিনের মতো ওই কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়।

কলেজের অধ্যক্ষা নবনীতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাদের ৬০ শতাংশ হাজিরা রয়েছে, তারাও নম্বর পাবে, যাদের পর্যাপ্ত হাজিরা নেই, তারাও নম্বর পাবে? এটা তো ঠিক বিচার হবে না। যা ফল ভুগতে হবে, ভুগব। নিয়ম ভাঙতে পারব না।’’ তিনি জানান, প্রথম দিন তাঁকে দফতরে আটকে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার অফিস পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল পড়ুয়ারা। যে সব পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসার মতো প্রয়োজনীয় হাজিরা রয়েছে, তাঁদেরও ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হয়নি বলে অধ্যক্ষার অভিযোগ। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলবেন না।

কলেজ সূত্রের খবর, স্নাতকের প্রথম সেমেস্টারে বাণিজ্য শাখার মোট ৭০০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪৩০ জনের ৬০ শতাংশ হাজিরা ছিল না। ফলে তাঁদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকেই গোলমাল শুরু। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, উপস্থিতি পর্যাপ্ত থাকলেও তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকের বক্তব্য, শেষ বারের মতো তাঁদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এই দাবি নিয়ে বেলা দু’টো থেকে প্রথমে কলেজ চত্বরে, পরে গোলপার্কের মোড়ে কয়েকশো পড়ুয়া বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। প্রায় চারটে পর্যন্ত চলে এই অবরোধ।

আরও পড়ুন: বাঁধন খোলার সাধনেই মত্ত শহর​

গোলপার্ক মোড় অবরোধের জেরে সাদার্ন অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট রোড (সাউথ), বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, রাজা এস সি মল্লিক রোড-সহ দক্ষিণ কলকাতার একাংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গড়িয়াহাট উড়ালপুলও বন্ধ করে দিতে হয়। সেই সময়ে বেশ কিছু স্কুল ছুটি হয়েছিল। যানজটে আটকে পড়েন

স্কুলপড়ুয়া-সহ অনেকেই। আটকে পড়া গাড়ির সারি গোলপার্ক থেকে এক দিকে যাদবপুর এবং অন্য দিকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একাংশেও যানবাহন আটকে যায়। সন্ধ্যায় পড়ুয়াদের একদল প্রতিনিধি পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান। হাত নাড়তে নাড়তে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন তাঁরা, তার পর গাড়ির জানলার কাচ নামিয়েও হাসি মুখে হাত নাড়তে থাকেন। এক বিক্ষোভকারী পড়ুয়ার যুক্তি, ‘সামান্য’ হাজিরা না থাকায় পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না? তাই প্রতিবাদ করা হয়েছে। এক ছাত্রী দোয়েল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার ৭৪% হাজিরা ছিল। হঠাৎ ৬০-এর নীচে গেল কী করে? আর অনেকে হাতে গোনা কয়েক দিন ক্লাসে এসেও পরীক্ষায় বসছে!’’

আরও পড়ুন: তৈরির পরে মনে হল ছোট! আরও গচ্চা দিয়ে বাড়বে ‘বিগ বেন’

প্রতি মাসে বা সপ্তাহে পড়ুয়াদের হাজিরার হার কি জানানো যেত? অধ্যক্ষার দাবি, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁদের তা জানানো হয়েছিল। অনেক পড়ুয়ার অভিযোগ, হাজিরা নির্দিষ্ট খাতার বদলে সাদা পাতায় লেখা হয়েছিল। অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘সাদা পাতায় যদি কোনও দিন হাজিরা লেখা হলেও পরে খাতায় তোলা হয়। তর্কের খাতিরে এ-ও ধরা হয়েছে যে তাড়াহুড়োয় ভুল হতে পারে। তাই হাজিরার হার ৬০ থেকে ৫৫% করা হয়েছে। ফলে আরও ৬৫ জন পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছেন। আর আপস করা অসম্ভব।’’ আজ, শনিবারও বিক্ষোভ চলবে বলে জানান পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Agitation South City College Attendance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE