দক্ষিণ দমদমের লক্ষ্মীনারায়ণ রোডে আবর্জনা ও পানায় ভরা পুকুর। নিজস্ব চিত্র
মন দিয়ে লেখাপড়া করলে ফল ভাল হওয়ারই কথা। কিন্তু সারা বছর পরিশ্রমের পরেও পরীক্ষার আগে ফাঁকি দিলে ফল কেমন হবে, তার নিশ্চয়তা শিক্ষকেরা দেন না। সে ক্ষেত্রে ফল নাকি নির্ভর করে ‘ভাগ্যের উপরে’। বিষয় যদি ডেঙ্গি হয়, তা হলে ছাত্র হিসেবে দক্ষিণ দমদম পুরসভা কেমন, তা গত তিন বছরের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে।
২০১৬ সাল থেকে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ডেঙ্গির দাপাদাপি শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে কার্যত তা মহামারীর চেহারা নেয়। সে বার খাতায়কলমে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০০০। ঠেকে শিখে পরের বছর অনেক আগে থেকেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় নেমে পড়েছিল পুরসভা।
ফলে এক ধাক্কায় ২০১৮ সালে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছিল দেড়শোয়। ২০১৯-এর বর্ষা তো বটেই বর্ষামুখর শরৎও ভালয় ভালয় কেটে গিয়েছিল। বাদ সাধল ভরা হেমন্ত। এ বছর এখনও পর্যন্ত এই পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
এ বার স্লগ ওভারে ডেঙ্গি এমন চালিয়ে খেলছে যে, আক্রান্তের সংখ্যা বছর শেষে কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে মন্তব্য করছেন না কেউই। তবে সব মহলে একটা কথা আলোচনায় উঠছে, কী করে ভাল ফল করতে হয় তা যখন জানাই, তখন তেমন পদক্ষেপ পুরসভা প্রথম থেকে করল না কেন? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ, গত বার ডেঙ্গি ঠেকাতে পুরসভা বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ করেছিল। তার ফলও মিলেছিল। অভিযোগ, এ বার লেক টাউন-বাঙুর-কালিন্দী এলাকায় তেমন পদক্ষেপই করা হয়নি। ফলে এ বার অপেক্ষাকৃত অভিজাত এলাকাতেই ভুগিয়ে ছাড়ছে ডেঙ্গি।
২০১৭ সালে ডেঙ্গিতে উজার হয়েছিল মূলত বস্তি এলাকা। পরের বছর বস্তি এলাকায় ডেঙ্গি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ করে পুরসভা। মধুগড়, পূর্ব সিঁথি এলাকায় পুরসভার বিশেষ দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে জলের খোলা পাত্র, চৌবাচ্চা প্রভৃতি ভেঙে দিয়েছিল। বাদ যায়নি পুজোর মঙ্গলঘটও। সেই কাজ করতে গিয়ে বিক্ষোভ-প্রতিরোধের মুখেও পড়তে হয়েছিল পুরকর্মীদের। কিন্তু তাও হাল না ছেড়ে সেই কাজ তাঁরা করেছিলেন।
তার ফলে গত বছর ডেঙ্গি হয়নি ওই এলাকাগুলিতে। এ বছর এখনও পর্যন্ত ওই বস্তি এলাকাগুলি ডেঙ্গিমুক্ত থাকতে পেরেছে। কারণ, ২০১৭ সালে ওই এলাকার যাঁরা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন, এ বার বাড়ি বাড়ি নজরদারি এবং সচেতনতার প্রচারে তাঁরা বড় ভূমিকা নিয়েছেন।
প্রশ্নটা সেখানেই। তা হলে কি এ বার গোড়াতেই গলদ রয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন থাকছে, পুরসভার অভিজাত এলাকায় সাফাই এবং সচেতনতার প্রচারে খামতি ছিল কি না? কারণ, এ বার লেক টাউন, বাঙুর, শ্রীভূমি, দক্ষিণদাঁড়ি এলাকাতেই পুজোর পর থেকে লাগাতার ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। ইতিমধ্যেই বাঙুরে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
পুরসভার দুই পদাধিকারীদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সচেতনতা প্রচারে প্রভাব ফেলছে এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন পুরপ্রধান নিজে। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি-যুদ্ধে কোনও ভেদাভেদ নেই। এ অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।’’
পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এ বার তাঁদের কাজ করতে গিয়ে প্রচুর অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রথম অসুবিধা, বন্ধ বাড়ি। দ্বিতীয় অসুবিধা, নির্মীয়মাণ বাড়ি বা বহুতল। পুর এলাকায় বহু বাড়ি বন্ধ পড়ে রয়েছে। সেই বাড়ির কোনওটিতে রয়েছে খোলা জলের ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চায় জমানো জল। কোনওটির উঠোনে, বাগানে রয়েছে জলের পাত্র। আর প্রতিটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে কাজের জন্য জল জমিয়ে রাখা রয়েছে। কাজ বন্ধ থাকলেও সেই জল কিন্তু ফেলা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘আমরা বেশ কয়েকটি এ রকম নির্মীয়মাণ বাড়ির জমানো জলে ডেঙ্গি মশার লার্ভা পেয়েছিলাম। বাড়ির মালিকদের বারবার সাবধানও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রবণতা ঠেকানো যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy