ভোট দিতে এলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ
তিনি এলেন। ভোটও দিলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘‘দলের কাউন্সিলর হিসেবে শৃঙ্খলা তো মানতেই হবে। ববিদা মেয়র হবেন, তাঁকে ভোট দিলাম।’’
তিনি শোভন চট্টোপাধ্যায়। ২০১০ সাল থেকে আট বছর কলকাতার মেয়র। গত ২২ নভেম্বর দলের নির্দেশে ইস্তফা দিয়েছেন। তার জেরেই সোমবার নতুন মেয়র নির্বাচন হল পুরভবনে।
অধিবেশন শুরু বেলা একটায়। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তাদের ১২২ জন কাউন্সিলরকে বেলা ১২টার মধ্যে পৌঁছতে হবে। সেই নির্দেশ মাথায় রেখে একটার মধ্যে প্রায় সকলেই হাজির। ব্যতিক্রম শোভন। ফলে পুরভবনের আনাচে কানাচে জোর জল্পনা। শোভন আসবেন তো? কেউ বলছেন, মান থাকলে উনি আসবেন না। কেউ আবার বলছেন নিশ্চয়ই আসবেন। সময় যত গড়িয়েছে, শোভনকে নিয়ে কৌতূহলের পারদ ততই চড়েছে। বেলা ২টোতেও
তাঁর দেখা না-মেলায় শুরু হয় কানাঘুষো, আবার একটা ‘কেস’ খেতে পারেন তিনি।
কিন্তু না। খবর এল, শোভন আসছেন। তাঁর অনুগামী বেহালার চার কাউন্সিলর সোজা হাজির প্রধান ফটকের সামনে। ২টো ৮ মিনিটে ঢোকে শোভনের গাড়ি। গাড়ি থেকে নামতেই ছবির তোলার হুড়োহুড়ি। ভিড় ঠেলে উপরে উঠতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় প্রাক্তন মেয়রকে। মুখে নির্লিপ্ত হাসি। মেয়র পদ, মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হলেও সেই ছাপ নেই চোখে মুখে। গত ৮ বছর ধরে এই সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় কত স্যালুট পেয়েছেন। এ দিন তিনি স্রেফ কাউন্সিলর। তবুও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। কোনও মতে ভিড় টপকে হাজির হন অধিবেশন কক্ষে।
কয়েক মিনিটেই ভোটদান পর্ব শেষ করে বেরিয়ে আসেন শোভন। কুশল বিনিময় করেন দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে। নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষকে বলেন, ‘‘তুমি তো ধুতি পরলে পারতে। ভাল লাগত।’’ পরে অতীনবাবু তাঁকে কাউন্সিলর ক্লাবে নিয়ে গিয়ে কিছু খাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। শোভন অবশ্য কিছু মুখে দেননি। বেরিয়ে সোজা চলে যান চেয়ারপার্সন মালা রায়ের ঘরে। মিনিট দশেক পরে সেখান থেকে বেরিয়ে দেখেন বাম কাউন্সিলরেরা বিক্ষোভ করছেন। সিপিএম কাউন্সিলর রত্না রায়মজুমদার করমর্দন করেন শোভনের সঙ্গে। তখনও বামেদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে, ‘সংবিধান না-মেনে মেয়র নির্বাচন মানি না’।
বামেদের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শোভনের জবাব, ‘‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একটা অবস্থান থাকে। এ নিয়ে কী আর বলব।’’ গাড়ি এসে দাঁড়াতেই পিছনের সিটে উঠে পড়েন। ফের প্রশ্ন, ‘‘আবার কবে আসবেন?’’
কোনও উত্তর নেই। শুধু একগাল হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy