Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নির্ভয়ে আসুন অটিস্টিকেরাও, বিশেষ ব্যবস্থা পুজো মণ্ডপে

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে এই পুজোয়। মণ্ডপে ছিল নাট-বল্টু দিয়ে তৈরি দুর্গার মুখ, যেটি দৃষ্টিহীনেরা ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিলেন। এ ছাড়াও চলাফেরার সুবিধার জন্য ছিল ‘ট্যাকটাইল পাথ’, ব্রেলে লেখা ছিল পুজোর থিম এবং মন্ত্র।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুনীতা কোলে
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

হয় তৃতীয়া-চতুর্থীর হাল্কা ভিড়ে, নয়তো পুজোর দিনের সকালে। ওদের নিয়ে ঠাকুর দেখার ওটাই সুবিধাজনক সময়। সন্ধ্যায় বেরোলে দৌড় বড়জোর বাড়ির আশপাশ বা পাড়ার চেনা মণ্ডপ পর্যন্ত। এ ভাবেই অটিস্টিক সন্তানদের নিয়ে দুর্গাপুজোয় শামিল হন বহু অভিভাবক। কারণ ভিড়ের ঠেলাঠেলি, শব্দের দাপট বা অচেনা পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করেন অটিস্টিক মানুষদের অনেকেই।

এই চেনা ছবিটাই বদলে দেওয়ার চেষ্টায় ‘অটিজ়ম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সঙ্ঘ। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে এই পুজোয়। মণ্ডপে ছিল নাট-বল্টু দিয়ে তৈরি দুর্গার মুখ, যেটি দৃষ্টিহীনেরা ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিলেন। এ ছাড়াও চলাফেরার সুবিধার জন্য ছিল ‘ট্যাকটাইল পাথ’, ব্রেলে লেখা ছিল পুজোর থিম এবং মন্ত্র।

এ বছর প্রধানত অটিজ়ম নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অন্যতম পুজোকর্তা অরিজিৎ মৈত্র। মূল পুজো শুরু হওয়ার আগে থেকেই চলছে এই যৌথ প্রয়াস। খুঁটিপুজোর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল অটিস্টিক শিশু-কিশোরেরা। নিজেদের তৈরি রাখি পাড়ার কচিকাঁচাদের পরিয়ে রাখিবন্ধন পালন করে তারা। পঞ্চমীতে পুতুলনাচের অনুষ্ঠানেও থাকবে তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি।

পুজো মণ্ডপটিকে যথাসম্ভব ‘ইনক্লুসিভ’ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সমাজসেবী সঙ্ঘের উদ্যোক্তারা। অটিস্টিকদের জন্য মণ্ডপে রাখা হচ্ছে আলাদা প্রবেশপথ, হুইলচেয়ারের জন্য গড়া হচ্ছে র‌্যাম্প। ভিড় এড়িয়ে তাঁরা যাতে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন, থাকবে তার ব্যবস্থাও। অটিস্টিক কেউ কোনও কারণে অস্বস্তি বোধ করলে আলাদা একটি ঘরে কিছু ক্ষণ বিশ্রামও নিতে পারবেন। অটিস্টিকদের মণ্ডপে কী কী সমস্যা হতে পারে, তাঁরা কী ভাবে নিজেদের ভাব প্রকাশ করেন এবং কোনও অসুবিধা হলে কী ভাবে তাঁদের সাহায্য করতে হবে— তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের। শুধু অটিস্টিক নয়, এই আলাদা ব্যবস্থার সুবিধা পাবেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অন্য দর্শনার্থীরাও।

অরিজিৎ বলেন, ‘‘এ বার আমরা পুজোর একটা সামাজিক উদ্দেশ্য তৈরির চেষ্টা করছি। অটিজ়ম নিয়ে শিশুরাও যাতে সচেতন হতে পারে, অটিস্টিক শিশুদের সহানুভূতি বদলে বন্ধুত্বের দৃষ্টিতে দেখতে পারে, সেই চেষ্টাই করছি।’’ অটিস্টিকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, তা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছেন তাঁরা। একই বিষয় নিয়ে মণ্ডপে বিলি করা হবে লিফলেটও। একটি অংশে থাকবে অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অটিজ়ম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গলের অধিকর্তা ইন্দ্রাণী বসু বলেন, ‘‘পুজো দেখতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আসেন। এ ভাবে মণ্ডপে সচেতনতার বার্তা দিলে সহজে অনেকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। যেটা কোনও আলোচনাসভার মাধ্যমে সম্ভব হয় না। অন্যান্য পুজো কমিটিও এ ভাবে এগিয়ে আসুক, সেটাই চাইব।’’

পুজোয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শামিল করতে চেয়ে এগিয়ে এসেছে হাওড়ার কল্যাণপল্লির একটি পুজোও। শ্যামবাজারের ‘সংবেদন’ নামে একটি সংস্থার তরফে শমিত সাহা জানাচ্ছেন, কোনও সরকারি বা কর্পোরেট সাহায্য ছাড়াই তাঁরা কয়েক জন মিলে একটি স্কুল চালান। সেখানে পড়াশোনা, নাচ-গানের পাশাপাশি নানা ধরনের জিনিস তৈরি করে পড়ুয়ারা।

নবান্ন বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ওই পুজোর তরফে স্বপনকুমার শী বলেন, ‘‘অন্য একটি অনুষ্ঠানে ওই স্কুলের বাচ্চাদের হাতে তৈরি জিনিস উপহার হিসেবে অতিথিদের দিই। এত সুন্দর কাজ তখনই মণ্ডপে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। আমরা চাই, মানুষ এই কাজ দেখে ওদের সম্পর্কে জানুন, ওদের উৎসাহ দিন।’’এমন ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে পুজো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durga puja autistic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE