Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বরো-১০

কাঁটা ও কমল, দুই সরিয়ে এগোনোর লড়াই

টালিগঞ্জ, যাদবপুর, রাসবিহারী এবং কসবা বিধানসভা এলাকার মধ্যে ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো। সবচেয়ে বড় এলাকা। গত পুরভোটে এই বরোর ৮টি ওয়ার্ডে জেতে তৃণমূল। বাকি ৪টিতে বামেরা। যদিও লোকসভা ভোটের ফলাফলে তাদের দখলে থাকা চারটি ওয়ার্ডের দু’টিতে পিছিয়ে পড়ে বামেরা। আর সেই দু’টি নিজেদের পক্ষে নিয়ে তৃণমূল এগিয়ে যায় ১০টিতে।

কৌশিক ঘোষ ও আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৪
Share: Save:

টালিগঞ্জ, যাদবপুর, রাসবিহারী এবং কসবা বিধানসভা এলাকার মধ্যে ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো। সবচেয়ে বড় এলাকা। গত পুরভোটে এই বরোর ৮টি ওয়ার্ডে জেতে তৃণমূল। বাকি ৪টিতে বামেরা। যদিও লোকসভা ভোটের ফলাফলে তাদের দখলে থাকা চারটি ওয়ার্ডের দু’টিতে পিছিয়ে পড়ে বামেরা। আর সেই দু’টি নিজেদের পক্ষে নিয়ে তৃণমূল এগিয়ে যায় ১০টিতে। সে দেশ জুড়ে বিজেপি-র পালে হাওয়া থাকলেও এই বরোর কোনও ওয়ার্ডেই এগোতে পারেনি বিজেপি। কেবল দু’টি ওয়ার্ডে বিজেপি তৃতীয় স্থানে ছিল। পুরভোটের মুখে সে সব অঙ্ক নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। তবে তৃণমূলের সেই মসৃণ পথে ‘কাঁটা’ হয়ে দাড়িয়েছে দলেরই এক কাউন্সিলর এবং একাধিক নেতার বিদ্রোহ। যা বিছিয়ে রয়েছে এই বরোর ৯৩, ৯৯ এবং ১০০ ওয়ার্ডে।

সেই ছক কষেই এ বার বরো ১০-এর লড়াইয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মণীশ গুপ্ত এবং জাভেদ আহমেদ খানেরা। একই সঙ্গে বিজেপি-র কোনও ‘চোরাস্রোত’ এলাকায় রয়েছে কি না, তা-ও যাচাই করে নিচ্ছেন তাঁরা। কারণ তাঁরা মনে করেন, দক্ষিণ কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের অধীনে একাধিক ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। সেই ‘চান্স’ বিজেপি আর যাতে না পায়, তার জন্য লড়ছেন নেতা-মন্ত্রী সকলেই। ২০১৬ বিধানসভার লক্ষে দল শক্ত ভিতের উপরে রয়েছে কি না, তা জানার এটাই তো সেমিফাইনাল।

মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘বরো ১০-এর প্রতিটি ওয়ার্ডে এ বার তৃণমূলের পতাকা উড়বে।’’ কিন্তু ‘গোঁজ’ এড়াবেন কোন মন্ত্রে? অরূপের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে শহর জুড়ে উন্নয়নের চেহারা দেখেই মানুষ আমাদের সমর্থন করবে। গোঁজেরা কোনও বোঝা হবে না।’’

এই বরোর ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড কলকাতায় পুরভোটের শুরু থেকেই বামেদের দখলে। পরিবর্তনের ঝড়েও হারেনি বামেরা। তা স্বীকার করে অরূপের বক্তব্য, ‘‘এক সময়ে ওই ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর ছিলেন অর্চনা ভট্টাচার্য। জল দফতরের মেয়র পারিষদও ছিলেন। তা সত্ত্বেও এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে।’’ এলাকায় ঘুরে সে সব বলা হচ্ছে মানুষকে জানান তিনি। ‘‘এ বার সেই ওয়ার্ডেও খাতা খুলবে তৃণমূল,’’ হুঙ্কার অরূপের। যা শুনে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং এ বারের প্রার্থী সিপিএমের মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর জবাব, ‘‘অবাধ ভোট হলে কেউ আমাদের সরাতে পারবে না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হলে সারা রাজ্যে যা হয়েছে তা-ই হবে।’’ এখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছে সিভিল ইঞ্জিনিয়র সন্দীপ নন্দী মজুমদারকে।

৯৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র প্রার্থী পদে নাম ছিল অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের। ভোটার লিস্টে নাম না থাকায় শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। ওই ওয়ার্ডে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার ওরফে মলয়। যাদবপুরের কিছু অংশ, বিজয়গড় এলাকা জুড়ে এই ওয়ার্ড। জঞ্জাল অপসারণ দফতরে মেয়র পারিষদ হিসেবে নিজের এলাকা সাফসুতরো রাখার চেষ্টায় যে ত্রটি নেই, তা মালুম হল এলাকা ঘুরেই। রাস্তাঘাটে ময়লা পড়লেও ১০০ দিনের কর্মীরা এসে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।

মলয়বাবু পুরনো বিজেপি কাউন্সিলর। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে অভিনেত্রী শর্বরী মুখোপাধ‌্যায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। শর্বরীর দাবি, ‘‘রূপাকে প্রার্থী করলে তৃণমূলের এই ওয়ার্ডে নিশ্চিত হার ছিল এই আশঙ্কায় তৃণমূল ‘অভিসন্ধি’ করে রূপাকে দাঁড়াতে দেয়নি।’’ এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতা তারকেশ্বর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ভোটার লিস্টে নাম না থাকায় বাদ পড়েছেন। এতে উনি অভিসন্ধি কোথায় পেলেন, বুঝছি না।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের এখানকার প্রার্থী মেয়র পারিষদ দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এক সময়ে ৯৬ ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর ছিলেন। তখন তিনি অবশ্য বিজেপিতে। পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০১০ সালে ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন। বললেন, ‘‘আমরাই জিতছি। কারণ আমি বিজেপি ছাড়ার পরে এলাকাতেও ইতি পড়েছে দলটার।’’ তাঁর জেতা যে নিশ্চিত, তা ধরেই নিয়েছেন এলাকার অনেকেই। গত লোকসভায় মোদী জোয়ারেও এখানে তৃণমূল এগিয়ে ছিল আড়াই হাজারেরও বেশি ভোটে।

মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহ করেছেন একাধিক কাউন্সিলর। তবে অপ্রকাশ্যে। তৃণমূলের একমাত্র কাউন্সিলর যিনি বিদ্রোহ করে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, লড়ছেনও বিজেপির টিকিটে। তিনি মালা মহলানবিশ। ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তৃণমূলের প্রার্থীকে হারানোর লক্ষ্যে জোর প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।

যোধপুর পার্ক এবং লেক গার্ডেন্স অঞ্চল জুড়ে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড। ২০০৫ সালে কাউন্সিলর ছিলেন রতন দে। গত বার ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় প্রার্থী করা হয় মালা মহলানবিশকে। এ বার সংরক্ষণ উঠে যাওয়ায় ফের প্রার্থী রতন দে। সেই ক্ষোভে মালাদেবী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। প্রাক্তন বনাম বর্তমানের লড়াইয়ে জমে উঠেছে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা। রতন দে-র দাবি, ‘‘গত বার ভোটে না দাঁড়ালেও এই ওয়ার্ডের সমস্ত পরিকল্পনা রূপায়ণ করেছি আমি।’’ এলাকায় মালাদেবীর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেও দাবি রতনের। মালাদেবীর পাল্টা জবাব, ‘‘পরিকল্পনা তো দূর অস্ত্। কাজ করতেই নানা ভাবে বাধা দিয়েছেন রতন। পুর-পরিষেবার যাবতীয় কাজ আমিই করেছি।’’ এ দিকে, মালাদেবীকে প্রার্থী করায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা নন্দ রায়ের বক্তব্য, নিকাশি এবং পানীয় জল সরবরাহ এখানকার সমস্যা। এই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী বিকাশ কর বলেন, ‘‘পুর-পরিষেবা কিছুই নেই। প্রচারে সেটাই বড় হাতিয়ার।’’

শ্রীকলোনি, বিদ‌্যাসাগর পল্লি এলাকার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলকে বেগ দিতে পারে ঘরোয়া কোন্দল। তৃণমূলে মনোনয়ন না পেয়ে নির্দল চিহ্নে লড়ছেন ওই ওয়ার্ডের ব্লক সভাপতি তৃণমূল নেতা নিমর্ল দাস। দল অবশ্য তাঁকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করেছে। পরপর দু’দফায় এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ছিলেন নির্মলবাবু। গত বার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁর পরিবর্তে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয় মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ বার সংরক্ষণ উঠে গেলেও তাঁকে প্রার্থী না করায় বিদ্রোহী তিনি। তৃণমূল প্রার্থী করেছে ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেখা দে-কে। তা সত্ত্বেও মিতালির উপরে ক্ষোভ কমেনি নিমর্লকান্তি দাসের। বললেন, ‘‘প্রোমোটারদের তোয়াজ করতে গিয়ে ওয়ার্ডটাকে শেষ করে দিয়েছে মিতালি। কোনও কাজ হয়নি।’’ যা শুনে মিতালির প্রতিক্রিয়া ‘‘উনি ভুল বকছেন। বয়স হয়েছে তো।’’ তৃণমূলের ঘরোয়া কোন্দলের কথা তুলেই বাজার গরম করছেন বিজেপি-র শান্তনু সিংহ। বাম প্রার্থী আরএসপি-র দেবাশিস মুখোপাধ‌্যায়ের দাবি, ‘‘এই ওয়ার্ড এক সময়ে টানা বামফ্রন্টের ছিল। গত লোকসভা ভোটেও দ্বিতীয় স্থানে ছিলাম আমরা। বিজেপি ফ্যাক্টরই নয়।’’

‘জল না পেলে ভোট দেব না।’ প্রার্থী আর দেরি না করে সরাসরি ছুটে আসেন কলকাতা পুরভবনে। সটান জল সরবরাহ দফতরের অফিসে। আশ্বাস পান ভোটের পরেই পৌঁছে যাবে জল। ফিরে গিয়ে তাই শোনাচ্ছেন জল না পাওয়া ভোটারদের। এ চিত্র কলকাতা পুরসভার ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রার্থী তৃণমূলের তপন দাশগুপ্ত। বিদায়ী কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যানও।

দশ নম্বর বরোর ৯৪ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ড গল্ফগ্রিন বা ম্যুর অ্যাভিনিউ বাদে বেশির ভাগই কলোনি এলাকা। এই ওয়ার্ডগুলির মূল সমস্যা পানীয় জল। জল নিয়েই চলছে পুরভোটের তরজা। বিজয়গড়, আজাদগড় এবং বিক্রমগড় এলাকা নিয়ে ৯৫ নম্বর ওয়ার্ড। সিপিএম প্রার্থী সুদীপ চট্টোপাধ্যায় এবং বিজেপি-র পুলকিতা ঘোষ লড়ছেন তৃণমূলের তপন দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে।

ঢাকুরিয়ার ৯২ নম্বর ওয়ার্ডেও পানীয় জলের সংঙ্কট নিয়ে লড়াই। তা নিয়ে চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পর্ব। বর্তমান সিপিআই কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব এ বারও প্রার্থী। জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘মেয়রকে বারবার বলেও কোনও ভাবে জলের পরিষেবা মানুষকে দেওয়া গেল না। কিছুটা হলেও গার্ডেনরিচের জল দিতে পেরেছি।’’ তৃণমূল প্রার্থী সরোজ ভৌমিক বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে মানুষকে জল দেওয়াই আমার প্রধান কাজ হবে।’’ এলাকার বিজেপি প্রার্থী দিলীপ মিত্র এখনও ভোটারের মনে ততটা দাগ কাটতে পারেননি।

কলকাতা পুরসভার বিদায়ী অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান দীপঙ্কর দে-র ওয়ার্ড ৯১। বামেদের শক্ত ঘাঁটি। মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় এ বার বাম প্রার্থী অন্নপূর্ণা দাস। পানীয় জল সরবরাহের অভাবই এই ওয়ার্ডের মূল সমস্যা বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। অন্নপূর্ণাদেবীর বক্তব্য, ‘‘পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য বতর্মান মেয়রের কাছে অনেক বার দরবার করা হয়েছে। কিন্তু কিছুই করেননি।’’ এখানকার তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা গুপ্ত বলেন, ‘‘বাম আমল থেকেই পরিষেবায় ঘাটতি রয়েছে। বোর্ড পাল্টালেও সিপিএম কাউন্সিলর পুর-পরিষেবার কোনও সুযোগ নিতে পারেননি।’’ বিজেপি প্রার্থী স্বাতী দত্ত বলেন, ‘‘পুর-পরিষেবা কিছুই মেলেনি। বদল হবেই।’’

৮১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী এখানকার বতর্মান কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাস। তিনি রাজ্যের আবাসন এবং যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভ্রাতৃবধূ। গত পুরভোটে প্রায় ৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তিনি। বাম প্রার্থীকে হারিয়ে। সেই চিত্র বদলে যায় গত লোকসভায়। বামের বদলে বিজেপি প্রায় ছুঁযে ফেলে তৃণমূলকে। সেখানে ৬ হাজারের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় মাত্র ১২ ভোটে। এ বার সেই ফলই বড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে তাদের। দাবি বিজেপি প্রার্থী শ্বেতা মেহতার। এর সঙ্গে এলাকার নিকাশি সমস্যা নিয়েও সরব বাম এবং বিজেপি। এলাকার কিছু বাসিন্দার বক্তব্য, অল্প বৃষ্টি পড়লে কিছু জায়গায় এখনও জল জমে। তা মেনে নিয়ে জুঁইয়ের বক্তব্য, ‘‘নিচু জায়গায় ওই সমস্যা রয়েছে। ঠিক করা হবে শীঘ্রই।’’

৯৭ নম্বর ওয়ার্ড হল স্টুডিও পাড়া। এখানে প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল। যা ছাপ ফেলেছে এলাকার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। ৯৯ নম্বরে কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে দল। রয়েছে বস্তিও। মূল সমস্যা পানীয় জল। মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় এ বার তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে নিয়ে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিতকের্র রেশ ছড়িয়েছে এই ওয়ার্ডেও। বিজেপি প্রার্থী তপতী মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তৃণমূল এবং সিপিএমের প্রার্থী বহিরাগত। তা গায়ে মাখতে নারাজ মিতালি। তবে তাঁর লড়াইয়ে বাধা হবেন দলেরই কিছু কর্মী, মনে করছেন তৃণমূলেরই একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা।

নাকতলা, গাঙ্গুলিবাগান, লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনির ১০০ নম্বর ওয়ার্ডেও রয়েছেন নিদর্ল প্রার্থী। এ বার ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী সুস্মিতা দাম। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৃণমূলের অমিতাভ বন্দ‌্যোপাধায়ের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন সুলতা ঘোষ। তিনি চেয়েছিলেন সুলতাকে প্রার্থী করা হোক। তা না হওয়ায় সুলতা নির্দল হয়ে লড়ছেন। এখন সুলতা তৃণমূলের কতটা ভোট ভাঙতে পারেন, সেই হিসেবই কষছেন বিরোধী বিজেপি এবং বামেরা। যদিও সুস্মিতাদেবীর বক্তব্য, ‘‘যে ভাবে মানুষের সাড়া পাচ্ছি, তাতে নির্দল প্রার্থী হাওয়ায় উড়ে যাবেন।’’

৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্যামল মান্নার অভিযোগ, ‘‘এলাকায় ওয়ার্ড অফিস নেই। কমিউনিটি হলও নেই। অনেক জায়গায় নিকাশির হাল খারাপ।’’ আর তার জন্য কাউন্সিলরের কাছে শংসাপত্র নিতে, বা অভিযোগ জানাতে হলে হয়রানি হয় বাসিন্দাদের। এ বারও সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী বিদায়ী কাউন্সিলর মমতা মজুমদার। ওয়ার্ড অফিস না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘নিকাশি-সহ রাস্তা এবং অন্যান্য পরিষেবার কাজ হয়েছে।’’ কংগ্রেস প্রার্থী নিলয় সমাদ্দার সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে এসেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পরিষেবা ছাড়াও তৃণমূলের দুর্নীতি আমার প্রচারের হাতিয়ার।’’ এই ওয়ার্ডের বিজেপি-র প্রার্থী তপন মল্লিক বলেন, ‘‘ওয়ার্ডে পুর-পরিষেবা বলতে কিছু নেই।’’ সে কারণেই বিজেপি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে তাঁর বিশ্বাস।

আনোয়ার শাহ রোডের দক্ষিণ দিক, গল্ফ গার্ডেনের কিছুটা অংশ নিয়ে ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড। মূল লড়াই আরএসপি প্রার্থী তাবসুমা খাতুনের খোন্দকারের সঙ্গে তৃণমূলের অর্চনা সেনগুপ্তের। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। প্রচারে সেই কথাই তুলে ধরছেন তৃণমূল। বাম প্রার্থীর অভিযোগ, তৃণমূল বোর্ড সহায়তা না করায় কাজের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা হয়েছে। এটা ওঁদের চক্রান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE