Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুস্থ হয়ে ঘরের পথে ভিন্ রাজ্যের রোগিণী

প্রায় এক বছর ধরে পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন রোগিণী। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েও ফল মেলেনি। দিন দিন সমস্যা বেড়েই চলেছিল। অবশেষে জেলা হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে ষাটোর্ধ্ব ওই রোগিণীকে নিয়ে যান পরিজনেরা।

হাসপাতালে লক্ষ্মীপ্রিয়া দাস। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে লক্ষ্মীপ্রিয়া দাস। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২১
Share: Save:

প্রায় এক বছর ধরে পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন রোগিণী। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েও ফল মেলেনি। দিন দিন সমস্যা বেড়েই চলেছিল। অবশেষে জেলা হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে ষাটোর্ধ্ব ওই রোগিণীকে নিয়ে যান পরিজনেরা। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানান, ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাসিন্দা লক্ষ্মীপ্রিয়া দাস নামে ওই বৃদ্ধার ওভারিতে একাধিক টিউমার রয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন।

সম্প্রতি ক্যানসার চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তিন শল্য চিকিৎসক সৌমেন দাস, অনির্বাণ নাগ এবং কমলেশ রক্ষিত, স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুখময় বারিক ও অ্যনাস্থেটিস্ট সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গঠিত এক চিকিৎসক দল বাইপাসের নয়াবাদের এক ক্যানসার হাসপাতালে প্রায় আট ঘণ্টা ধরে লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবীর সিআরএস অ্যান্ড হাইপেক অস্ত্রোপচার করে। আশিসবাবু জানান, আপাতত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন বৃদ্ধা। এ দিকে, নতুন জীবন পেয়ে লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবী দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন ডাক্তারবাবুদের।

শহরের ক্যানসার চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, গোটা পূর্ব ভারতে এখনও পর্যন্ত রাজারহাটের একটি ক্যানসার হাসপাতালেই এই পদ্ধতিতে মাত্র কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার শুরু হলেও তাকে একশো শতাংশ হাইপেক বলা যাবে না বলে দাবি তাঁদের। তার কারণ, হাইপেক অর্থাৎ এক ভাবে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত কেমোথেরাপি দেওয়ার পদ্ধতিটি সেই যন্ত্রে হয় না।

সিআরএস অর্থাৎ সাইটো রিডাক্টিভ সার্জারি। হাইপেক অর্থাৎ হাইপারথার্মিক ইন্ট্রা পেরিটোনিয়াল কেমোথেরাপি। গোটা পদ্ধতিটি এই দু’টি পর্বে হয়। সিআরএস, যেটি অস্ত্রোপচারের পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে রোগীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় অস্ত্রোপচারের জায়গায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে উত্তপ্ত কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এর পরে অস্ত্রোপচারের জায়গাটি সেলাই করা হয়। তবে পেরিটোনিয়াল সারফেস ম্যালিগন্যান্সির ক্ষেত্রেই শুধু এই চিকিৎসা হয়।

পেরিটোনিয়াল সারফেস ম্যালিগন্যান্সি কী? মানব শরীরে পেটের যে থলির মধ্যে যকৃৎ, বৃক্ক, পাকস্থলী, অন্ত্র, ডিম্বাশয়, জরায়ু থাকে, তাকে বলে পেরিটোনিয়াম। এই থলি বা পর্দায় দু’ভাবে ক্যানসার হতে পারে। সরাসরি পর্দায় হলে, তাকে বলে প্রাইমারি পেরিটোনিয়াল ম্যালিগন্যান্সি। ক্যানসার আক্রান্ত ডিম্বাশয়, বৃহদান্ত্র, পাকস্থলী ও অ্যাপেন্ডিক্স থেকে তা পেরিটোনিয়ামে ছড়াতে পারে। একে বলে সেকেন্ডারি পেরিটোনিয়াল ম্যালিগন্যান্সি। তবে এই চিকিৎসার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে টিউমারের সংখ্যা বা পেরিটোনিয়াল কার্সিনোমেটোসিস ইন্ডেক্সের (পিসিআই) উপরে।

সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘লক্ষ্মীদেবীর ওভারি থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে পেরিটোনিয়াল সারফেসে। ওঁর পিসিআই ছিল ১৩। এখন একটিও টিউমার নেই।’’ আশিসবাবু জানান, তাঁর শরীর থেকে ডিম্বাশয়, জরায়ু এবং পেরিটোনিয়াম পর্দা বাদ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, সিআরএস অ্যান্ড হাইপেক পদ্ধতি এ দেশে আসার আগে পর্যন্ত সেকেন্ডারি পেরিটোনিয়াল ম্যালিগন্যান্সিকে ক্যানসারের ‘ফোর্থ স্টেজ’ বলা হত। সে ক্ষেত্রে রোগীর পাঁচ বছর বেঁচে থাকা অসম্ভব ছিল। এখন সেই সম্ভাবনা বেড়ে হয়েছে ৬০ শতাংশ।

যদিও ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এখনই এই পদ্ধতির সাফল্য মানতে নারাজ। তাঁর মতে, খুব কম প্রয়োগ হওয়া এই পদ্ধতির সফল কি না বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘যদি বৈজ্ঞানিক রীতিনীতি মেনে এই প্রযুক্তি সঠিক রোগীর উপরে প্রয়োগ করা যায় এবং ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা কিছুটা কম খরচে মেলে তবে তা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Medical Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE