ফাইল চিত্র।
পরিকাঠামো বা পরিষেবার নিরিখে নয়, বরং ‘রোগের’ বিচারে এগিয়ে কলকাতার পাঁচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল! তাই জেলার কড়া দাওয়াই কলকাতাকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য দফতর।
কয়েক মাস আগে পথ দুর্ঘটনায় পাঁজরের হাড় ভেঙে ফুসফুসে ঢুকে গিয়েছিল। গুরুতর অবস্থায় রোগীকে হাওড়া থেকে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এন আর এসে। অভিযোগ, একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে অস্ত্রোপচারে দেরি হওয়ায় বাঁচেনি বছর ছয়েকের ওই শিশু। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জানিয়েছিল, শিশু-শল্য চিকিৎসক না থাকায় রেফার করা হয়েছিল তাকে।
সম্প্রতি ৪০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ এক মহিলা এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে প্রাথমিক চিকিৎসা না করেই রেফার করে দেওয়া হয় এসএসকেএমে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, বার্ন ইউনিটে আইটিইউ নেই।
উপরের দু’টি ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, ‘রেফার’ রোগে আক্রান্ত শহরের চার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পঞ্চম হাসপাতাল অর্থাৎ এসএসকেএমে রোগী প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। এমনকি, রোগীদের লাইনও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কলকাতায় রোগী রেফারের অভিযোগ ওঠে। তাই বিশেষ সচিব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা-সহ রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা জেলা সফর শুরু করেছেন। প্রতি তিন মাস অন্তর জেলায় গিয়ে তাঁরা স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল-হকিকত দেখে আসছেন। রেফার রোগ কমাতে হাসপাতালের কাজের সব খুঁটিনাটির উপরে নজরদারি করছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, জেলার মতোই শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিরও রেফার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। তাই একই পথে হাঁটতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির কর্তা ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকও হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিভাগীয় কাজের তুল্যমূল্য বিচার শুরু হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, এসএসকেএমে মাসে শতাধিক বাইপাস সার্জারি হলেও আর জি কর বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার আগেই রেফার করে দেওয়া হয়। একই ভাবে অগ্নিদগ্ধ রোগীকে বার্ন ওয়ার্ডে আইটিইউ না থাকায় রেফারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের কোনও হাসপাতালেই বার্ন ইউনিটে আলাদা আইটিইউ নেই। তাই রেফারের কারণ যথাযথ নয়।
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতার চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকাঠামো সম মানের হওয়া সত্ত্বেও একে অপরকে রোগী রেফারের ঘটনা ঘটে। এতে ভোগান্তি বাড়ে রোগীদের। এমনকি চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ায় রোগী-মৃত্যুর অভিযোগও ওঠে। সে কারণে জেলার মতোই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেও রেফারের উপরে নজরদারি শুরু করছে স্বাস্থ্য ভবন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে আর একটি মেডিক্যাল কলেজে মাসে কত রোগীকে রেফার করা হচ্ছে, সেই হিসেব রাখবে স্বাস্থ্য ভবন। প্রতিটি রেফারের কারণ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত কারণ জানতে চাইবে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। কার্ডিওভাস্কুলার, নিউরো সার্জারির মতো বিভাগে অস্ত্রোপচারের সাফল্যেরও তুলনামূলক বিচার হবে। এর উপরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের প্রশাসকদের ভূমিকা ও কাজের মানের বিচার করা হবে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির রেফার রোগ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘রেফারের সমস্যা দীর্ঘদিনের। রোগী পরিষেবা উন্নত করতে এই সমস্যা মেটাতে হবে। কলকাতা, জেলা সর্বত্রই রেফারের প্রবণতা কমানো জরুরি। তাই সর্বস্তরে বৈঠক করে সমস্যার দিকগুলো খুঁজে বার করা হচ্ছে। প্রয়োজন মাফিক পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy