রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ড সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শহরবাসীর মনে পড়েছিল একটি সিনেমার কথা। আলফ্রেড হিচককের ‘সাইকো’। কঙ্কালের সঙ্গে বসবাসের সূত্র ধরেই মানুষের মুখে মুখে ফিরছিল ছবিটির কথা। মনের অন্ধকার দিক ছিল হিচককের অন্যতম প্রিয় বিষয়। ঘটনাচক্রে কঙ্কাল কাণ্ডের রেশ মিলোনোর আগেই বাংলাতেও মুক্তি পেল একটি ছবি, মনের জটিলতাই যার আধার।
মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ঘরানার ছবি হলিউডে বরাবরই বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত হিচককের ভার্টিগো, রিয়ার উইনডো এবং সাইকো— একেবারে কিংবদন্তি হয়ে যায়। হিচককের পরে তাঁর শিষ্য হিসেবে পরিচিত ব্রায়ান ডি পালমাও মনের অসুখ এবং তার বিভিন্ন দিক নিয়ে একাধিক সিনেমা করেন। চলচ্চিত্রবিদ্যার শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার ছবিতে বিশেষ ভাবে হাত পাকিয়েছিল জার্মানিও। ‘‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরে জার্মানিতে শুরু হয় মনস্তত্ত্ব নিয়ে সিনেমা। ১৯২০ সালে রবার্ট ভানের নির্বাক ছবি ‘ক্যাবিনেট অব ডক্টর ক্যালিগরি’ খুবই নাম করে।’’
বাংলায় কিন্তু এ ধরনের ছবির কোনও বিশেষ ঘরানা গড়ে ওঠেনি। মনের অন্ধকার ছবির বিষয় হিসেবে ঘন ঘন উঠেও আসেনি। কী এর কারণ? সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের সময়ে বাঙালি সমাজে মনের অসুখ নিয়ে এত চর্চা হতো না।’’ দস্তয়ভস্কির লেখা ‘ডাবল’ উপন্যাস অবলম্বনে সমরেশ বসুর লেখা গল্প থেকে যখন ‘মন নিয়ে’ তৈরি হয়, সঞ্জয়বাবুর মতে, সেই সিনেমা দর্শক হাঁ করে গিলেছিলেন প্রধানত উত্তমকুমারের জন্য। গভীর মনস্তত্ত্ব নিয়ে কতটা চর্চা হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
পরবর্তী কালে সুব্রত সেনের ‘এক যে আছে কন্যা’, অপর্ণা সেনের ‘ফিফটিন পার্ক অ্যাভিনিউ’, সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘মহানগর@কলকাতা’, রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বা শৈবাল মিত্রর ‘শজারুর কাঁটা’র মতো ছবিতে অবচেতন মনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। সুমনের কথায়, ‘‘সাধারণ নয়, মনের এমন আচরণকে আমরা আজও বিকার বলে মনে করি।’’ এই অবস্থায়, তাঁর মতে, মনস্তত্ত্ব নিয়ে সিনেমা মুষ্টিমেয় মানুষের পছন্দ হতে পারে, জনগণের নয়। এই ব্যবধানটা ঘোচাতে চাইছে প্রসেনজিৎ চৌধুরীর ছবি, ‘ডাকবাক্স’। এ ছবিতে নায়িকা শ্রীজা চিঠি ফেলে আসেন ডাকবাক্সে। ঠিকানাহীন চিঠি। তাঁর নিজেরই এক সত্তা চিঠি দিয়ে অন্য সত্তাকে বলে, ‘‘ফিরে এসো শ্রীজা। ভাল হয়ে যাও।’’
প্রসেনজিৎ পেশাদার চিকিৎসক। সিনেমার গল্পটা উঠে এসেছে তাঁর ডাক্তারি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই। ২০১২ সালে এক মহিলার পাকস্থলীর ক্যানসার অস্ত্রোপচার করেছিলেন প্রসেনজিৎ। বিদেশে থাকা সেই মহিলার যুবতী কন্যার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘অদ্ভুত মানসিক অবস্থায় ছিল মেয়েটি। তার একটা সত্তা মানতে চাইছিল না যে, তার মা অসুস্থ। অন্য সত্তাটি ছিল স্বাভাবিক।’’
ওই যুবতীর কাহিনি নিয়েই শুরু হয় গল্প লেখা। কথা বলেন মনোবিদ দেবব্রত মজুমদারের সঙ্গে। তারই ফসল, ‘ডাকবাক্স’। মনের অন্ধকার নিয়ে নাড়াচাড়া করা ছবি দর্শকের মন জয় করে কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy