আবার দিনের ব্যস্ত সময়ে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা, তার জেরে পরিষেবায় বিঘ্ন এবং কয়েকশো অফিস যাত্রীর চূড়ান্ত হয়রানি। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন বুধবার শোভাবাজার স্টেশনের ঘটনা।
মেট্রো সূত্রে খবর, এ বছর এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জন মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। বাঁচানো হয়েছে আট জনকে। মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার যাঁরা ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তাঁদের দু’জনকেই বাঁচানো গিয়েছে চালকের তৎপরতায়।
এ দিনের ঘটনার পরে মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার একটি বৈঠকও করেছেন। সূত্রের খবর, লাইনে ঝাঁপ দেওয়া ঠেকাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এ বার কিছু কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছেন। তার মধ্যে প্ল্যাটফর্মে সিসিটিভি-র নজরদারি আরও কড়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার। পাশাপাশি, প্ল্যাটফর্মে আরপিএফ-কেও আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
লাইনে ঝাঁপ ঠেকাতে এর আগে প্ল্যাটফর্মের টিভিতে বিজ্ঞাপন, সিনেমা, নাটক, মাইকে ঘোষণা— বিভিন্ন পন্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি, এই প্রবণতা আটকাতে প্রতি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে স্বয়ংক্রিয় গেট বসানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। নানা কারণে তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। নিত্যদিন এ ভাবে মেট্রোয় ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনায় যাত্রীরা তিতিবিরক্ত। বিরক্ত মেট্রো কর্তা থেকে চালকেরাও। এ দিন শোভাবাজারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বারবার ঘোষণা করার পরেও প্রথমে কোনও যাত্রীই ট্রেন থেকে নামতে চাননি। কারণ, তাঁরা রোজ অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজের ব্যস্ত সময় নষ্ট করতে চান না। শেষমেশ অনেক অনুরোধ-উপরোধের পরে তাঁরা ট্রেনটি খালি করে দেন।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগে এমন ঘটলে সংশ্লিষ্ট চালককে ছুটি দেওয়া হতো। কিন্তু চালকেরাই এখন জানিয়েছেন, তাঁদেরও বিষয়টি গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তাঁরাও মানসিক ভাবে আর ক্লান্ত হন না।
দিল্লি মেট্রোয় ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা কার্যত নেই। কারণ, সেখানে গোটা প্ল্যাটফর্মের ধার স্টিলের গার্ডরেল দিয়ে আটকানো। যেখানে যেখানে কাটা আছে, ট্রেনের দরজাগুলি তার সামনেই পড়ে। ফলে নজরদারি এড়িয়ে ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে কেউ গলতে পারেন না। কলকাতা মেট্রোতেও সেই পদ্ধতি নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
কী ঘটেছিল এ দিন?
মেট্রো সূত্রে খবর, পৌনে ১০টা নাগাদ বেশ গতি নিয়েই শোভাবাজারে ঢুকছিল মেট্রোটি। চারটি কামরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকেও গিয়েছে। তখনই চালক দেখেন, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো যাত্রীদের মধ্যে থেকে এক মহিলা লাইনে ঝাঁপ দিলেন। সজোরে ইমার্জেন্সি ব্রেকের হাতল টেনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন তিনি।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই কন্ট্রোলে এবং স্টেশন মাস্টারকে ফোনে ঘটনার কথা জানিয়ে চালক নিজেই নেমে পড়েন প্ল্যাটফর্মে। উদ্ধারকারী দলকে জানান, ট্রেনটি আগুপিছু করা যাবে না। কারণ, তখনও বেঁচে আছেন ওই মহিলা। এর পরে তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ বন্ধ করে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মেট্রো কর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার জেরে কিছুক্ষণ কবি সুভাষ থেকে সেন্ট্রাল পর্যন্ত আপ এবং ডাউনে লাইনে ট্রেন চালানো হচ্ছিল। পৌনে ১১টা নাগাদ পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়।
মঙ্গলবারও সন্ধ্যাতেও রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে লাইনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। চালকের তৎপরতায় তাঁকেও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মেট্রো পরিষেবা যখন সবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, সে সময়ে মেট্রোর পয়েন্টে গোলমাল দেখা দেওয়ায় দুই জায়গায় সিগন্যালে বিপত্তি ঘটে। ফলে রাতের দিকে আবারও হয়রানি হয় যাত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy