Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হস্টেলে ঢুকে মারধর ছাত্রদের

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাসের এক গবেষক অতনু গায়েন জানান, এ দিন অরুণকুমার সাহু নামে এক ব্যক্তি জনা চল্লিশেক লোক নিয়ে চারতলা ওই হস্টেলে ঢুকে পড়েন। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, হস্টেলের মালিকানা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মামলার রায় তাঁর পক্ষে গিয়েছে।

বিক্ষোভ: পড়ুয়াদের সঙ্গে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

বিক্ষোভ: পড়ুয়াদের সঙ্গে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

আদালতের নির্দেশনামার দোহাই দিয়ে ছাত্র হস্টেলে তাণ্ডব চালানো এবং পড়ুয়াদের মারধর করার অভিযোগ উঠল এক দল বহিরাগতের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ বৌবাজারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিস্ট ছাত্র হস্টেলে। ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাসের এক গবেষক অতনু গায়েন জানান, এ দিন অরুণকুমার সাহু নামে এক ব্যক্তি জনা চল্লিশেক লোক নিয়ে চারতলা ওই হস্টেলে ঢুকে পড়েন। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, হস্টেলের মালিকানা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মামলার রায় তাঁর পক্ষে গিয়েছে। তাই কলকাতা হাইকোর্ট তাঁকে ওই হস্টেলের দখল নিতে বলেছে। অতনুবাবুর দাবি, ‘‘আমি তাঁদের জানাই এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিতেই পড়ুয়ারা এখানে থাকেন। হস্টেল খালি করার কোনও নির্দেশ কর্তৃপক্ষের তরফে আসেনি।’’ তাঁর অভিযোগ, এর পরেই লোহার রড, বাঁশ নিয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা শুরু হয়। ওই হস্টেলের ১০টি ঘরে থাকেন ২৪ জন পড়ুয়া ও গবেষক। সে সময় অতনু ছাড়াও ছিলেন রামু দাস ও সুখেন হালদার নামে দুই পড়ুয়া। বাধা দিতে গেলে পড়ুয়াদের হাতুড়ি দিয়েও মারা হয় বলেও অভিযোগ।

পড়ুয়ারা জানান, ভাতের হাঁড়ি থেকে শুরু করে বই, খাতা, ল্যাপটপ, মোবাইল ভেঙে ফেলা হয়। চেয়ার, টেবিল উপর থেকে নীচে ফেলে দেয় ওই দলে থাকা লোকজন। তুমুল গোলমালের সময়ে নিজেদের উকিল পরিচয় দেওয়া দুই মহিলাও ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন পড়ুয়ারা। গোলমাল চলাকালীন ঘটনাস্থলে চলে আসেন আরও কয়েক জন পড়ুয়া। সেই সময়েই ভাঙচুর চালানো দলটি পালিয়ে যায়। তবে দু’জনকে ধরে ফেলেন পড়ুয়ারা। পরে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তী-সহ অন্য আধিকারিকেরা। হাজির হয় পুলিশও। উপাচার্য জানান, কোর্টের এ রকম কোনও নির্দেশ তাঁদের কাছে আসেনি এবং যিনি নিজেকে বাড়ির মালিক বলে দাবি করছেন তিনি কোর্টের নির্দেশের কোনও প্রতিলিপি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেননি। পুলিশকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, তথ্য ঘেঁটে দেখা গিয়েছে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ওই হস্টেলটি সুজিত দে নামের এক ব্যক্তির নামে ছিল। তার পরে আদৌ আদালতে এ নিয়ে কোনও মামলা হয়েছে কি না তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জানা নেই। সোনালিদেবী বলেন, ‘‘যদি এ রকম কিছু থেকেও থাকে সেটা কর্তৃপক্ষকে আগে জানানো উচিত ছিল। সেটা না করে যে ভাবে পড়ুয়াদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে সেটা নিন্দনীয়। পুলিশকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করে কড়া পদক্ষেপ করতে আবেদন করা হয়েছে।’’ বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

ওই হস্টেলেই থাকেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল। তাঁর ঘরেও ভাঙচুর করা হয়েছে। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন ওঠে। যদিও দেবাশিসবাবু জানান, তিনি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, অরুণকুমার সাহু স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুমন সিংহের স্বামী বিজয় সিংহের ঘনিষ্ঠ। সুমন সিংহকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। বিজয় সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমরা কেউ এ সবের সঙ্গে জড়িত নই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE