অর্কপ্রভ বসু
বাবা রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার কর্মী, মা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরতা, দিদি কাজ করেন একটি ল’ফার্মে। পাটুলির এই পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল বাড়ি থেকেই। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে পাটুলি থানা এলাকার ভ্যালি পার্কে। পুলিশ জানিয়েছে, বালিগঞ্জ এলাকার একটি নামী স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির বাণিজ্য শাখার পড়ুয়া অর্কপ্রভ বসু (১৮) বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল। এ দিন এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই ছাত্রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তদন্তকারীরা জেনেছেন, লার্নিং-সমস্যা ছিল তার। পড়াশোনা বুঝতে অসুবিধা হত অর্কপ্রভর। তা থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে সে। চিকিৎসা চলাকালীনই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টের ফল প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, তাতে পাশ করতে পারেনি অর্কপ্রভ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। ইন্টারনেটে আত্মহত্যার নানা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম বার একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি অর্কপ্রভ। এর পরে তার মানসিক অবসাদ বাড়তে থাকলে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসক সৌরভ দাসের কাছে। নিয়মিত ওষুধ চলত তার। চিকিৎসা চলাকালীন পরের বছর দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠে ওই ছাত্র। চলছিল উচ্চমাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুতিও।
পুলিশের অনুমান, পরীক্ষায় পাশ করতে না পেরেই চরম পথ বেছে নিয়েছে ওই ছাত্র। যদিও এটি মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার।
এ দিন অর্কপ্রভর মা কাবেরী বসু জানান, পরীক্ষায় পাশ না করতে পারলেও তা নিয়ে ছেলেকে কিছু বলেননি তাঁরা। অর্কপ্রভও স্বাভাবিক ছিল। যে কারণে বৃহস্পতিবার অন্য দিনের মতোই অর্কপ্রভর বাবা অমিতাভ বসু এবং তিনি অফিসে বেরিয়ে যান। দিদিও কাজে চলে যান। গত ১২-১৩ বছর ধরে
কর্মরত বাড়ির পরিচারিকা ফ্ল্যাটেই ছিলেন। শুক্রবার তিনি জানান, সে দিন দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে অর্কপ্রভ একটি ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল। তিনি ছিলেন অন্য ঘরে। চারটে নাগাদ পরিচারিকা দেখেন, ল্যাপটপ পড়ে রয়েছে। অর্কপ্রভ ঘরে নেই। এর পরে তিনি দেখেন, অন্য একটি ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তিনি বলেন, ‘‘আমি বারবার ডেকে সাড়া না পাওয়ায় ভয় পেয়ে যাই। কেয়ারটেকারকে ডেকে বলি মই দিয়ে উঠে জানলা দিয়ে ডাকতে।’’ কেয়ারটেকারই মই নিয়ে জানলা দিয়ে দেখেন, সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে বাড়ির অর্কপ্রভর দেহ। এর পরে তিনিই পুলিশে খবর দেন। খবর দেওয়া হয় অমিতাভবাবু ও কাবেরীদেবীকেও।
পড়শিদের বক্তব্য, বছর খানেক আগেও এক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল ওই ছাত্র। সে বারও কোনও খেলা দেখে হাতের শিরা কাটে সে। তখন সময়মতো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ায় বাঁচানো গিয়েছিল অর্কপ্রভকে। তবে গত বার ছেলের ‘আত্মহত্যার চেষ্টার’ কথা অস্বীকার করেছেন তার মা। শুক্রবার কাবেরীদেবী বলেন, ‘‘ও নিয়মিতই ওষুধ খেত। চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যাওয়া হত। অবসাদ থেকে যে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, আমরা ভাবতে পারিনি।’’
চিকিৎসক সৌরভ দাস বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে প্রথম আমার কাছে চিকিৎসার জন্য আনা হয় অর্কপ্রভকে। এর মধ্যে ওষুধে বেশ খানিকটা উন্নতিও হয়েছিল ওর মানসিক অবস্থার। এত বড় ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা অনুমান করা যায়নি। ফের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার ধাক্কাটাই হয়তো সামলাতে পারেনি ও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy