Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাপের মুখেও নির্যাতনের অভিযোগে অনড়

অভিযোগ শ্লীলতাহানির। অভিযোগকারিণী বছর সতেরোর কিশোরী এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

নগদ টাকার প্রলোভনই হোক বা পথেঘাটে কটূক্তি, কিংবা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা— কিছুতেই দমে যেতে নারাজ মা ও মেয়ে। মায়ের বক্তব্য, শেষ দেখে ছাড়বেন। আর মেয়ে বলছে, ‘‘আমাদের এ ভাবে অসম্মান করার সাহস ওরা পায় কী ভাবে!’’

অভিযোগ শ্লীলতাহানির। অভিযোগকারিণী বছর সতেরোর কিশোরী এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিছু দিন পরেই শুরু হবে তার পরীক্ষা। নিউ টাউন সংলগ্ন হাটগাছার বাসিন্দা ওই ছাত্রী পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছে, গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কেষ্টপুরের মামাবাড়ি থেকে ভাইকে নিয়ে সে বাড়ি ফিরছিল। ওই সময়ে এলাকার দুই যুবক তাদের পথ আটকে ছ’বছরের ভাইয়ের সামনেই তার শ্লীলতাহানি করে। কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তার মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়েছে পুলিশ। মামলা রুজু হয়েছে ‘পকসো’ আইনে। এই ঘটনায় এখনও কেউ ধরা না পড়লেও তাদের এক জনকে অবশ্য অনায়াসেই ফোনে পাওয়া গিয়েছে। নির্যাতিতা ছাত্রীর দাবি, সে অভিযুক্তদের কাউকেই আগে থেকে চিনত না। তার মা পেশায় পরিচারিকা। বাবা রাজমিস্ত্রি।

সেই রাতেই দুই যুবকের বিরুদ্ধে লেদার কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রীর পরিবার। বৃহস্পতিবার মেয়েটি বলে, ‘‘থানায় যাওয়ার পথে ওই দুটো ছেলে নিজেদের দোষ স্বীকার করে বাবাকে বলল, বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। পরে মাকেও ফোন করেছিল। আমরা রাজি হইনি। পরে রাত আড়াইটে নাগাদ ওদের বাবা-মায়েরা বাড়িতে আসেন।’’

নির্যাতিতার মায়ের কথায়, ‘‘ওদের অভিভাবকেরা এসে আমাদের বললেন, ‘মেয়ের তো ভবিষ্যৎ আছে। টাকাপয়সা কিছু লাগলে বলুন।’ আমি বললাম, টাকা দেখাচ্ছেন! আদালত পর্যন্ত যখন গিয়েছি, সেখানেই বিচার হবে। আমরা এর শেষ দেখে তবে ছাড়ব।’’ পুলিশ জানায়, সেই রাতে ফিরে গেলেও ভোরবেলা আবার একই প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন সেই অভিভাবকেরা। সঙ্গে এলাকার এক পরিচিত ‘দাদা’। তিনিও বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাপ দেন। তাতেও অবশ্য দমে যায়নি কিশোরীর পরিবার। তাই দ্বিতীয় বারও খালি হাতে ফিরে যান অভিভাবকেরা। নির্যাতিতার মায়ের দাবি, মামলা প্রত্যাহার না করায় রাস্তায় কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, টাকা আদায় করতেই নাকি থানা-পুলিশের এই ‘নাটক’।

নির্যাতিতার মা আরও বলেন, ‘‘আমার ছ’বছরের ছেলে বারবার বলছে ওর দিদির সঙ্গে সে দিন কী হয়েছিল। ওই কথা শুনে কি কোনও বাবা-মা ঠিক থাকতে পারে? এখনও তো কাউকে পুলিশ ধরল না। আজ গায়ে হাত দিয়েছে। বাধা না দিলে তো কাল ধর্ষণ করবে। আমরা ভয়ে পিছিয়ে যাব না।’’ পুলিশের অবশ্য দাবি, ওই যুবকদের খোঁজে তল্লাশি হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবে ওই কিশোরী।

অভিযুক্ত দুই যুবকের এক জনকে পাওয়া যায়নি। অন্য জনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও সে মন্তব্য করতে চায়নি। স্থানীয় এক পঞ্চায়েত-সদস্য আবার মেয়েটির পরিবারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তাকে ছোট থেকে চিনি। ও এমন কাজ করতে পারে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ইচ্ছে করে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের পঞ্চায়েত-প্রধান অমরেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সব শুনে যা বুঝলাম, এই ঘটনায় রং চড়ানো হচ্ছে। দু’পক্ষের বক্তব্য না শুনে কিছু বলব না। শুনেছি, ওই মেয়েটিরও স্বভাব ভাল নয়।’’ এ কথা শুনে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত জীবন বা অতীত কেমন, তাতে অভিযোগের গুরুত্ব কমে না।’’ অভিযোগকারিণীর অবশ্য একটাই কথা, ‘‘এটা সহ্য করব না। ওদের শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE