Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুবে যাওয়ার অভিনয় করতে করতেই পুকুরে ডুবে গেল ছাত্র

রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে দমদম পুরসভার অন্তর্গত খলিসাকোটা বিবেকানন্দ সঙ্ঘের পুকুরে। মৃতের নাম সুমন শীল।

মর্মান্তিক: সুমনের (ইনসেটে) জার্সির পাশে কান্না মা ইন্দ্রার (বাঁ দিকে)। রবিবার, দমদমে। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: সুমনের (ইনসেটে) জার্সির পাশে কান্না মা ইন্দ্রার (বাঁ দিকে)। রবিবার, দমদমে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

ফুটবল প্র্যাক্টিস করে এসে পুকুরে ডুবে যাওয়ার অভিনয় করছিল দুই বন্ধু। কিন্তু সেই মজা যে প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে, তা কেউই আঁচ করতে পারেনি। দু’জনের এক জনও সাঁতার না জানায় ডুবে মৃত্যু হল একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের। কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছে তার বন্ধু, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রটি।

রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে দমদম পুরসভার অন্তর্গত খলিসাকোটা বিবেকানন্দ সঙ্ঘের পুকুরে। মৃতের নাম সুমন শীল। ঘটনার সময়ে পুকুর পাড়ে উপস্থিত স্থানীয় এক বাসিন্দা সুমনের বন্ধু সৌরভ মজুমদারকে বাঁচান।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মাধ্যমিকের পরে বিরাটি হাইস্কুলে বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হয়েছিল সুমন। ফুটবল-পাগল ছেলেটাকে মাস দেড়েক আগে খলিসাকোটার ভারতী মিলন সঙ্ঘের ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করেছিলেন জেঠু গোপাল শীল। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতি এবং রবিবার সেখানে প্র্যাক্টিসে যেত মানিকপুর শুকুর আলি মোড়ের বাসিন্দা সুমন। সৌরভের বাড়িও ওই অঞ্চলেই। এ দিন কোচিং ক্যাম্প থেকে সৌরভ-সহ আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে বিবেকানন্দ সঙ্ঘের পুকুরে নেমেছিল ওই কিশোর।

পুকুরপাড়ের উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দা মৌসুমী হালদার বলেন, ‘‘চার জনই ঘাটে বসেছিল। কিছু ক্ষণ পরে দেখি, সুমন ও সৌরভ খুব দুষ্টুমি করছে। দু’জন ডুবে যাওয়ার অভিনয় করছে আর বলছে, ডুবে যাচ্ছি কিন্তু। কেউই সাঁতার জানে না বলে আমি ও আমার শাশুড়ি ওদের বারণ করলাম। কিন্তু কথা শুনল না। এক সময়ে দেখি সুমন এবং সৌরভ সত্যিই তলিয়ে যাচ্ছে। আমি সাঁতার জানি না। ঘাটের কাছে আর এক জন ছিলেন, উনিও সাঁতার জানতেন না। আশপাশের বাসিন্দারা যত ক্ষণে উদ্ধারকাজে নামলেন, তত ক্ষণে সব শেষ।’’

মৃতের জেঠু জানান, শুকুর আলি মোড়ে বাজার করার সময়ে পরিচিত এক জন তাঁকে খবর দেন, ভাইপো পুকুরের জলে তলিয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে গোপালবাবু দেখেন, স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুরে তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন মহিলাও আছেন। শেষ পর্যন্ত পৌনে দশটা নাগাদ ঘাটের থেকে কিছুটা দূরে সুমনের দেহ খুঁজে পান বাসিন্দারা। বিমানবন্দরের দু’নম্বর গেটের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মৌসুমী বলেন, ‘‘ওরা যে আর মজা করছে না, সত্যিই তলিয়ে যাচ্ছে, সেটা বুঝতেও আমাদের সময় লেগেছে। দু’জনেই ডুবে যাচ্ছিল। বাঁচার তাগিদে সুমনকে ভর করে সৌরভ পাড়ে উঠে আসে। এখানে কারও দোষ নেই। চোখের সামনে ওইটুকু ছেলেকে তলিয়ে যেতে দেখেও কিছু করতে পারলাম না।’’

বন্ধু আর নেই, জানার পর থেকে থেকে টানা কেঁদে চলেছে সৌরভ। এ দিন তার বাবা বলেন, ‘‘ছেলে বলল, সাইকেল নিয়ে পুকুরের কাছে গিয়ে দেখলাম সুমনেরা স্নান করছে। আমিও স্নান করতে নামলাম। দু’জনেই ডুবে যাচ্ছিলাম। এক জন আমাকে হাত ধরে টেনে বাঁচিয়েছে।’’ কী ভাবে দু’জন জলে পড়ে গেল, সে সম্পর্কে সৌরভের বক্তব্য প্রসঙ্গে মা শান্তা মজুমদার বলেন, ‘‘সিঁড়িগুলো পিছল ছিল। ছেলে বলছে, পা ধুয়ে জুতো পরার সময়ে পা পিছলে যায়। সুমন আগেই পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল!’

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ দায়ের হলে কে ঠিক বলছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

দু’বছর আগে মারা গিয়েছেন সুমনের বাবা প্রশান্ত শীল। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা ইন্দ্রা শীল বলে চলেছেন, ‘‘আমি কাকে নিয়ে বাঁচব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Pond Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE