প্রতীকী ছবি।
ন’মাস আগের ঘটনা। স্কুলেই এক শিশুর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছিল এ শহর। সেই ঘটনার জেরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ হয়েছিল। এর পরেই বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে কমিটি গঠনের হিড়িক শুরু হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রবণতায় যে ভাটা এসেছে তা মানছেন স্কুল প্রধানদের অনেকেই। কমিটি হলেও কোথাও তার কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কোথাও তৈরিই হয়নি। কিছু স্কুলের অবশ্য দাবি, কমিটি তৈরি করে কাজ হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরেই রানিকুঠির জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে চার বছরের এক পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠে। এর মাস দুয়েক পরে গড়িয়াহাট অঞ্চলের কারমেল স্কুলে এবং বেহালার এম পি বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলেও শিশু নিগ্রহের অভিযোগ সামনে আসে। বিক্ষোভ, অবরোধ, পুলিশকে হেনস্থা, গ্রেফতারি সবই ঘটে যায় পরপর। অভিযুক্তদের শাস্তির পাশাপাশি দাবি ওঠে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার।
সেই সময়ে ‘কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশনস’ (সিআইএসসিই) জানায়, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা বাড়াতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের তৈরি ‘স্কুল সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং’ কমিটির নির্দেশও তখন গতি পায়। তখন যৌন হেনস্থা রোধে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দিতে স্কুলশিক্ষা দফতর সরকারি, সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে পাঁচ এবং উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ছয় সদস্যের ওই কমিটিতে পুলিশ ও সমাজকল্যাণ দফতরের প্রতিনিধির থাকার কথা। নির্দেশ ছিল, প্রতি মাসে ওই কমিটি অন্তত এক বার মিটিং করবে। কিন্তু সব স্কুলে নিয়মিত মিটিং হয় না বলেই অভিযোগ।
অথচ দফতরের দাবি, শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ মাধ্যমিক এবং অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে কমিটি গঠন হয়েছে। যদিও অভিভাবক ও পড়ুয়াদের অনেকে জানেনই না যে স্কুলে এমন কমিটি রয়েছে। তাই স্কুলগুলিতে ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচার করা যায় কি না তা ভাবছে দফতর। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কমিটি গঠন হয়নি, এমন স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করে চিঠি পাঠানো হবে।’’
হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাস জানান, ইতিমধ্যেই স্কুলে কমিটি গঠন হয়েছে। তিলজলা ব্রজনাথ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সূর্যকুমার ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘কমিটি গঠনের পরে এক বার মিটিংও হয়েছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। কারও উদ্যোগ না থাকায় আর কিছু হয়নি। কোনও অভিযোগ আসে না বলে তৈরি কমিটিও পড়ে রয়েছে।’’ সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহমহাপাত্র বলেন, ‘‘কাজ চলছে। তবে কমিটি গঠন সম্পূর্ণ হয়নি। পুলিশের তরফে কোনও প্রতিনিধিই আসেননি।’’ মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক অসিতবরণ গিরি যেমন বললেন, ‘‘স্কুলে এই কমিটি এখনও তৈরি হয়নি।’’ পড়ুয়াদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না সেটা দেখভাল করা এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ওই কমিটির কাজ। অভিযোগ, কিছু না ঘটা পর্যন্ত কমিটি কাজ করবে না, এমনই ধারণা তৈরি হয়েছে সকলের মধ্যে। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘দফতর চেয়েছিল, অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির পরে নয়, কোনও অঘটনের আগেই তা রুখে দেওয়া। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।’’
আইসিএসই স্কুলগুলিতে ‘স্কুল সেফটি সাব কমিটি’ গঠনের নির্দেশ অবশ্য মাস কয়েক আগে এসেছে। সেখানে আট সদস্যের কমিটি গঠনের কথা। কিছু স্কুল, কমিটি গঠন করলেও অনেক স্কুলই এখনও তা করেনি। হেরিটেজ স্কুল এবং মডার্ন হাই ফর গার্লস স্কুলে কমিটি গঠন হয়েছে। বরানগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের প্রিন্সিপাল নবারুণ দে বলেন, ‘‘ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার জন্য কমিটি তৈরি সম্পূর্ণ হয়নি। দ্রুত তা করা হবে।’’ সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র অধীনে থাকা স্কুলগুলির বেশির ভাগ জানাচ্ছে, জিডি বিড়লার ঘটনার আগেই যে ডিসিপ্লিনারি কমিটি গঠন হয়েছিল সেটাই কাজ করছে। ভারতীয় বিদ্যাভবনের প্রিন্সিপাল রেখা বৈশ্য বলেন, ‘‘ডিসিপ্লিনারি কমিটিই নিরাপত্তার পুরো বিষয়টি দেখে।’’
শহরের স্কুলগুলোর এই ছবি থেকে স্পষ্ট খাতায়কলমে কমিটি গঠন হলেও সর্বত্র পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সদিচ্ছায় কোথাও খামতি থেকেই যাচ্ছে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কমিটি কাজ করলে তা করা যাবে বলেই মত শিক্ষামহলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy