Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছেড়ে যাবেন না স্যর, ভেঙে পড়ল গোটা স্কুল

কয়েক হাজার গ্রামবাসী গেটের বাইরে ভিড় করে দাবি তুলেছেন, ‘ডাক্তারবাবুকে যেতে দেব না।’ তাঁদের হাজারো বুঝিয়েও শান্ত করতে পারছেন না ওই চিকিৎসক। শেষমেশ সেই খবর প্রশাসনের উচ্চস্তরে পৌঁছতেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হল।

আকুতি: প্রিয় শিক্ষককে ধরে রাখার দাবিতে পোস্টার হাতে ছাত্রেরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

আকুতি: প্রিয় শিক্ষককে ধরে রাখার দাবিতে পোস্টার হাতে ছাত্রেরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৬
Share: Save:

কয়েক হাজার গ্রামবাসী গেটের বাইরে ভিড় করে দাবি তুলেছেন, ‘ডাক্তারবাবুকে যেতে দেব না।’ তাঁদের হাজারো বুঝিয়েও শান্ত করতে পারছেন না ওই চিকিৎসক। শেষমেশ সেই খবর প্রশাসনের উচ্চস্তরে পৌঁছতেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হল। লোক মারফত চিকিৎসকের বদলি রদের কাগজ এসে পৌঁছল গ্রামের হাসপাতালে।

বাংলা ছবি ‘জীবন নিয়ে খেলা’র সেই দৃশ্যই যেন শুক্রবার দেখা গেল হাওড়া জেলা স্কুলে। তবে এ ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত বদলি রদের কোনও নির্দেশ আসেনি। বরং শেষে পুরো বিষয়টি বুঝে পড়ুয়ারাই গেটের তালা খুলে গাড়ি ডেকে তাতে তুলে দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষককে।

গত বছরের ৪ জুলাই হাওড়া জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন বেহালার বাসিন্দা শুভ্রজিৎ দত্ত। বৃহস্পতিবারই শিক্ষা দফতর থেকে তাঁর বদলির নির্দেশ আসে। শুভ্রজিৎবাবুকে বদলি করা হয়েছে হিন্দু স্কুলে। যেখানে ১২ বছর পড়াশোনা করেছেন তিনি। এ দিন দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে টিচার্স রুমে গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই প্রধান শিক্ষক। স্কুলে তখন দ্বিতীয় পিরিয়ডের ক্লাস চলছিল। শিক্ষকদের থেকে বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রেরা ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে চলে আসে প্রধান শিক্ষকের কাছে। ‘কেন আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন?’ ‘আপনাকে যেতে দেব না’— এমন দাবি তুলে শুভ্রজিৎবাবুকে ঘিরে রাখেন ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শ’পাঁচেক পড়ুয়া।

কেউ কেউ আবার খাতার পাতা ছিঁড়ে তাতে লেখে, ‘প্রধান শিক্ষককে বদলি করা মানছি না, মানব না’। সেই লেখা হাতে নিয়ে সারা স্কুলে ঘুরে বেড়াতে থাকে পড়ুয়ারা। শুভ্রজিৎবাবু-সহ অন্য শিক্ষকেরা বারবার তাদের বোঝাতে থাকেন, চাকরির পূর্বশর্ত মতো যে কোনও সময়ে এমন বদলি হতে পারে। সরকারের সেই নির্দেশ তাঁকে মানতে হবে বলেই জানান শুভ্রজিৎবাবু। কিন্তু নাছোড়বান্দা পড়ুয়ারা ‘প্রিয় স্যার’কে আটকে রাখার জন্য প্রথমে প্রধান শিক্ষকের ঘরের সামনে কোল্যাপসিবল গেটে এবং পরে স্কুলের মেন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শুরু হয় স্যরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি। খবর পেয়ে অভিভাবকেরাও জড়ো হন স্কুলের বাইরে। পাপিয়া মণ্ডল নামে এক এক অভিভাবক বলেন, ‘‘উনি মাথার উপরে বটগাছের মতো ছিলেন। এমন মানুষকে ছা়ড়া যায় না।’’ দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সৌরিক ভট্টাচার্য বলে, ‘‘স্যর আমাদের কাছে অনেকখানি। সব কিছুতেই তিনি আমাদের পাশে থাকেন। ওঁকে ছাড়তে পারব না।’’

বিকেল চারটে পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে আটকে রাখার এমন কাণ্ড চলার পরে অবশ্য বিষয়টি বোঝে ছাত্রেরা। নিজেরাই হাতে হাত ধরে চেন তৈরি করে তার মাঝখান দিয়ে শুভ্রজিৎবাবুকে বার করে আনে। গাড়িতে ওঠার সময়ে চোখের কোণটা চিকচিক করে ওঠে ওই শিক্ষকেরও। বলেন, ‘‘শিক্ষক জীবনে এটা আমার বড় পাওনা। যেমন দুঃখ হচ্ছে, তেমনই রয়েছে নতুন স্কুলে যাওয়ার আনন্দও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE