Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পূতিগন্ধময় হাওড়া সাবওয়ে, ভোগান্তি

যদিও নজরের বাইরে চলে গিয়েছে সাবওয়ের প্রবেশ পথ। কারণ, এর বেশির ভাগ অংশ চলে গিয়েছে ফুটপাত জুড়ে থাকা খাবারের দোকানগুলির প্লাস্টিকের  ছাউনির আড়ালে।

অবহেলা: নোংরা জল পেরিয়ে চলছে সাবওয়েতে যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

অবহেলা: নোংরা জল পেরিয়ে চলছে সাবওয়েতে যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

সাবওয়েতে ঢোকার মুখে দু’পাশের দেওয়াল ভরে রয়েছে পানের পিকে। কয়েক পা এগিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। গোড়ালি ডুবে যাওয়া নর্দমার কালো জলে ইট ফেলে কোনও মতে চলছে পারাপার। দেওয়ালের টাইলস ভেঙে উপর থেকে নেমে আসছে নর্দমার জল। কিছুটা পথ গেলেই নাকে আসে মল-মূত্রের দুর্গন্ধ। তার মধ্যেই সাবওয়ের সিঁড়ি দখল করে শুয়ে ভবঘুরের দল। অবাধে চলে ডেনড্রাইট এবং গাঁজার নেশা। রেলপুলিশ সব দেখেও নির্বিকার। এমনই অবস্থা ফেরিঘাট থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর সাবওয়েটির।

যদিও নজরের বাইরে চলে গিয়েছে সাবওয়ের প্রবেশ পথ। কারণ, এর বেশির ভাগ অংশ চলে গিয়েছে ফুটপাত জুড়ে থাকা খাবারের দোকানগুলির প্লাস্টিকের ছাউনির আড়ালে। ফেরিঘাট থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে সারাদিন এই পূতিগন্ধময় সাবওয়ে ব্যবহার করতে বাধ্য হন যাত্রীরা। প্রতিদিন সাবওয়েটির অবস্থা এমনই থাকে বলে জানিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ডানকুনির বাসিন্দা সজল সাঁপুই বলেন, “ট্র্যাফিক পুলিশ উপরে রাস্তা পারাপার ঠেকাতে রেলিং দিয়ে রাস্তা আটকাচ্ছে। এ দিকে নীচে সাবওয়ের অবস্থা গা ঘিনঘিনে হয়ে রয়েছে। অথচ কারও নজর নেই।” বালির দেবব্রত সরখেল বলেন, ‘‘রাস্তা পারাপার ঠেকাতে সাবওয়ে তৈরি হয়েছে। অথচ তারই রক্ষণাবেক্ষণ নেই!’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, ফেরিঘাট থেকে আসা যাত্রীরা ছাড়া অন্যরাও রাস্তা পার হয়ে স্টেশনে পৌঁছতে ওই সাবওয়ে ব্যবহার করেন। হাওড়া স্টেশনের দিকে সাবওয়ের তিনটি মুখ। তারই একটি দিয়ে সরাসরি স্টেশনের ৮ থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনো যায়। ফলে শহরতলির রেলযাত্রীদের বড় অংশ ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। সাবওয়ের কাউন্টারে শহরতলির ট্রেন ছাড়াও দূরপাল্লার অসংরক্ষিত টিকিট মিলত। কিন্তু পরে কাউন্টারটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কেন? পূর্ব রেলের হাওড়ার সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার গৌরাঙ্গচন্দ্র প্রধান বলেন, ‘‘ওই পরিবেশে কাউন্টার রাখা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া কাউন্টার থেকে খুব কম টিকিট বিক্রি হয়েছে।’’

বন্ধ টিকিট কাউন্টারের সামনে নেশা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

হাওড়া স্টেশনে কর্মরত পূর্ব রেলের এক আধিকারিক জানান, কয়েক দশক আগে ওই সাবওয়ে কেএমডিএ-র (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) তৈরি করে। সাবওয়েটি দেখাশোনার ভারও তাদের। তবে কেন এমন বেহাল দশা? অভিযোগ, রেল এবং কেএমডিএ-র টানাপড়েনে কার্যত সাবওয়ের দেখভাল হয় না। রেল কর্তাদের দাবি, সাবওয়ে পরিষ্কার রাখার জন্য কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। রেল সূত্রে খবর, এ নিয়ে টুইটার এবং ফেসবুকে রেল কর্তৃপক্ষের কাছেও একাধিক বার অভিযোগ এসেছে। প্রত্যেক বারই জানান হয়েছে, সাবওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের ভার তাঁদের নয়।

কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, সাবওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের। মাঝেমধ্যে প্রয়োজনীয় মেরামতি করা হয়। টাকার অভাবে মেরামতির কাজ যে ধাক্কা খায় তা মানছেন তিনি। তবে তাঁর দাবি, সাবওয়ে ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি নেই ওখানে। যদিও সাবওয়ে নিয়মিত পরিষ্কার রাখার বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ওই কর্তা। তাঁর দাবি বিষয়টি একটি বেসরকারি সংস্থা দেখাশোনা করে।

সাবওয়েতে অসামাজিক কাজ চললেও তাতে নজরদারি নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের। জিআরপি কর্তাদের দাবি, মাঝেমধ্যে নজরদারি চালালেও সব সময় সম্ভব হয় না। রক্ষী মোতায়েন করার মতো লোকবল তাঁদের নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subway Howrah Station KMDA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE