Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

টনক নড়ল, নামল পুলিশ 

মঙ্গলবার সকালে নাগেরবাজারের ক্লাইভ হাউসের মোড়ে বাস থেকে নেমে স্কুলে ঢোকার মুখে বাসের তলায় পিষ্ট হয় দমদম ক্রাইস্টচার্চ স্কুলের ছাত্রী অনুষ্কা কর (৫)। অনুষ্কার মা সুস্মিতা করের চোখের সামনেই ঘটে পুরো ঘটনাটি। ওই বাসচালক বিশ্বনাথ মালি ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন।

সাবধান: মোবাইলে মগ্ন ছাত্রীকে সতর্ক করছেন পুলিশ আধিকারিক। বুধবার নাগেরবাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সাবধান: মোবাইলে মগ্ন ছাত্রীকে সতর্ক করছেন পুলিশ আধিকারিক। বুধবার নাগেরবাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

নাগেরবাজার এলাকায় বাসের তলায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পরে বুধবার দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হল ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। গলি থেকে রাস্তায় গাড়ির যাতায়াত, পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পার করানো, পথচারীদের সতর্ক করা—পথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবই হল নিয়ম মেনে। তবে নাগেরবাজার মোড় বাদ দিয়ে দমদমের বাকি অংশে চোখে পড়ল বিশৃঙ্খল যান চলাচলের সেই চেনা ছবি।

মঙ্গলবার সকালে নাগেরবাজারের ক্লাইভ হাউসের মোড়ে বাস থেকে নেমে স্কুলে ঢোকার মুখে বাসের তলায় পিষ্ট হয় দমদম ক্রাইস্টচার্চ স্কুলের ছাত্রী অনুষ্কা কর (৫)। অনুষ্কার মা সুস্মিতা করের চোখের সামনেই ঘটে পুরো ঘটনাটি। ওই বাসচালক বিশ্বনাথ মালি ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। বুধবার সুস্মিতাদেবী বলেন, ‘‘মেয়েকে নিয়ে নামার পরে বাস চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু একের পর এক যাত্রী নামতে থাকায় দেরি হচ্ছিল দেখে রাস্তা পার হতে যাই। এক হাতে স্কুলব্যাগ, আর এক হাতে অনুষ্কাকে ধরে রেখেছিলাম। চালকের আসনের কাছে যখন মেয়েকে নিয়ে পার হচ্ছি, তখনই আচমকা বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়ি। চোখের সামনে মেয়েটা শেষ হয়ে গেল।’’ এ দিন সন্তান হারানো মায়ের আক্ষেপ, ‘‘শুনলাম, স্কুলের ওখানে ট্র্যাফিক পুলিশ দিয়েছে। আগে হলে আমার মেয়েটা এ ভাবে চলে যেত না।’’ এ দিন অনুষ্কার স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিল করেন অভিভাবকেরা এবং দমদম থানায় স্মারকলিপিও জমা দেন। তবে এ দিন সকালে দমদম রোডে যানশাসনের যা ছবি দেখা গেল, তাতে সেই দাবি অমূলকও নয়। দমদম রোডে মতিঝিল গার্লস, কিশোর ভারতী, শিক্ষা নিকেতন, কে কে হিন্দু অ্যাকাডেমির পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। এ দিন সকালে মতিঝিল গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে দেখা গেল, বিপদ মাথায় করেই সন্তানদের স্কুলে পৌঁছতে ছুটছেন অভিভাবকেরা। মতিঝিলের ভিতরের রাস্তা থেকে স্কুটিতে দুই মেয়েকে চাপিয়ে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। দমদম রোডে আচমকা তাঁর স্কুটির সামনে চলে এল একটি ট্যাক্সি! নাতনির হাত ধরে রাস্তা পারাপারের সময়ে মালবাহী গাড়ির সামনে চলে এলেন এক প্রবীণ মহিলা। হাত দেখিয়ে কোনও মতে বিপদ এড়ালেন।

দক্ষিণ দমদম পুরসভা নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকেরা এলাকায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু অনেক গাড়িচালক তাঁদের পরোয়া করেন না বলে অভিযোগ। মতিঝিলের সামনে কর্তব্যরত এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘‘বছরভর আমরাই ট্র্যাফিক দেখি। প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞতা থেকে ট্র্যাফিকের কাজ শিখেছি!’’ তবে স্বেচ্ছাসেবকেরা থাকলেও দিনের ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীদের দেখা যাবে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকদের একাংশ। দমদম স্টেশনের সামনে প্রিয়ঙ্কা মণ্ডল নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘ট্রেন, মেট্রো ধরার জন্য এখানটা ঘিঞ্জি হয়ে থাকে। সকাল ১১টা পর্যন্ত পুলিশ থাকলেও পরে যানশাসনের জন্য কেউ থাকে না। অন্যত্র দেখেছি ব্যারিকেড করে পথচারীদের রাস্তা পার করানো হয়। ব্যারাকপুরেও স্কুলের সময়ে রাস্তা একমুখী করা হয়। দমদমে সেরকম কিছু হওয়া উচিত।’’

রাস্তায় যানশাসনে না থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ এলাকায় কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় থাকি না, এটা ঠিক নয়। শৃঙ্খলা মেনে যানশাসনেরও চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যস্ততার মধ্যে মানুষজন বারণ করলেও কথা শোনেন না।’’ আর ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (ট্র্যাফিক) বিদ্যাসাগর চৌবে বলছেন, ‘‘দমদমের রাস্তাঘাট খুবই সঙ্কীর্ণ। ফুটপাতের জবরদখল সরাতে পুরসভার সঙ্গে কথা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumdum Road Safety Nagerbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE