Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফেল করে উটকো দাবি, সুগতকে নিগ্রহ ছাত্রীদের

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতামান নেই। পরীক্ষায় বসার জন্য যে উপস্থিতির হার প্রয়োজন সেটাও নেই। কিন্তু তবুও পাশ করিয়ে দিতে হবে। আর সেই অন্যায় দাবিকে নস্যাৎ করায় মঙ্গলবার কলকাতার একটি কলেজের ছাত্রীরা নিগ্রহ করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিতকে।

বিক্ষোভের মুখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিত। বড়িশা বিবেকানন্দ গার্লস কলেজে।

বিক্ষোভের মুখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিত। বড়িশা বিবেকানন্দ গার্লস কলেজে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২১
Share: Save:

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতামান নেই। পরীক্ষায় বসার জন্য যে উপস্থিতির হার প্রয়োজন সেটাও নেই। কিন্তু তবুও পাশ করিয়ে দিতে হবে। আর সেই অন্যায় দাবিকে নস্যাৎ করায় মঙ্গলবার কলকাতার একটি কলেজের ছাত্রীরা নিগ্রহ করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিতকে। ছাত্রীরা গাড়ি আটকে রাখায় উপাচার্যকে ফিরতে হল অটোরিকশায় চড়ে।

ঘটনাটি বড়িশা বিবেকানন্দ গালর্স কলেজের। তবে চূড়ান্ত হেনস্থার মুখে পড়েও অন্যায্য দাবি মানেননি উপাচার্য। ঠিক যেমন সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের দাবিও উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের জন্য পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি
না মানায় সেদিন সুগতবাবুকে পুলিশের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছিল।

বিবেকানন্দ কলেজে এ দিন ভূগোল স্নাতকোত্তর বিভাগের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে আসেন সুগতবাবু। বেলা ১২টা নাগাদ কলেজের সামনে তাঁকে ঘিরে ধরেন একদল ছাত্রী। তাঁরা পাসকোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় তাঁদের বসার অনুমতি দিতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে।

শুধু মৌখিক ভাবে দাবি জানানোতেই থেমে থাকেননি ছাত্রীরা। অধ্যক্ষার ঘরে ঢুকে শিক্ষিকাদের উপর চড়াও হন তাঁরা, কলেজ থেকে বেরনোর সময় উপাচার্যকেও ধাক্কা মারেন। উপাচার্য নিজে জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা পাঁচ ঘণ্টা তাঁর
গাড়ি আটকে রাখে। কলেজের সামনে থেকে অটো ধরে তিনি টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে এসে ফোন করে ব্যক্তিগত গাড়ি ডেকে পাঠান।

কলেজের অধ্যক্ষা সোমা ভট্টাচার্য পরে বলেন, এই ছাত্রীরা শুধু যে কলেজের টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ তাই নয়, প্রথম বর্ষের পরীক্ষাতেও এঁদের অধিকাংশই পাশ করতে পারেননি। উপস্থিতির হারও ভীষণ কম। অধ্যক্ষার কথায়, ‘‘এঁদের দাবি খুবই অযৌক্তিক। তাই বিবেচনা করার কিছুই নেই।’’

আন্দোলনকারী ছাত্রীদের বক্তব্য, পরীক্ষায় বসার অনুমতি না পেলে তাঁদের এক বছর নষ্ট হবে। তাঁদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষকে এই দাবি জানাতে গেলে তাঁদের হেনস্থা করেন কলেজের শিক্ষিকারা। পড়ুয়াদের জামাকাপড়ও ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে তাঁদের দাবি।

কলেজ কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, অনুষ্ঠান চলাকালীন হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে অভব্য আচরণ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হন শিক্ষিকারাই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা একটু পিছিয়ে পড়া ছাত্রী
ছিলেন, তাঁদের জন্য আমরা বিশেষ ক্লাসেরও বন্দোবস্ত করেছিলাম।
কিন্তু সেই ক্লাসেও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন না।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের ধারণা, এ দিনের ঘটনায় বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে। এ দিন সুগতবাবুর হেনস্থা দেখে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল শ্রীমতী ঘোষের। সন্তোষপুরের একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায়
ফেল করায় ছাত্রছাত্রীরা শ্রীমতীদেবীকে ২৪ ঘণ্টার উপরে ঘেরাও করে রেখেছিল। যোগ দিয়েছিল মাধ্যমিকের টেস্টে অনুত্তীর্ণরাও। পরে বিক্ষোভরত ছাত্রীদের অভিভাবকেরাও চলে আসায় ২৪ ঘণ্টা ধরে চরম
হেনস্থার শিকার হন শ্রীমতী দেবী। তিনিও অন্যায় দাবির কাছে মাথা নোয়াননি।

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sugata marjit calcutta university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE