Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফায়ার অডিট হয়েছে কি, মন্ত্রীর প্রশ্নে বিপাকে কর্মীরা

অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় গলদ দেখেই দমকলমন্ত্রী জানতে চাইলেন, ‘‘শেষ কবে ফায়ার অডিট হয়েছে?’’

পরিদর্শন: নাগেরবাজারের একটি শপিং মলের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন দমকলমন্ত্রী। ছবি: শৌভিক দে

পরিদর্শন: নাগেরবাজারের একটি শপিং মলের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন দমকলমন্ত্রী। ছবি: শৌভিক দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় গলদ দেখেই দমকলমন্ত্রী জানতে চাইলেন, ‘‘শেষ কবে ফায়ার অডিট হয়েছে?’’

প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলেন কাঁকুড়গাছি-ফুলবাগান এলাকার এক শপিং মলে উপস্থিত দমকল আধিকারিকেরা। শেষমেশ পরিস্থিতি সামাল দিলেন দফতরের ডিজি। আধিকারিকদের নির্দেশ দিলেন, ওই শপিং মলের ফায়ার অডিট সংক্রান্ত যা কাগজপত্র আছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা মন্ত্রীর কাছে জমা দিতে হবে।

সোমবার সকালে এ ভাবেই দমদম ও কাঁকুড়গাছির দু’টি শপিং মলে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। সঙ্গে ছিলেন দফতরের ডিজি জগমোহন-সহ অন্য আধিকারিকেরা। এসেছিলেন সিইএসসি ও পুলিশের অফিসারেরাও। সুজিতবাবু জানান, এ দিন শহরের ২৩টি জায়গায় ফায়ার অডিট শুরু করেছে দমকল দফতর। তিনি বলেন, ‘‘শপিং মলগুলিতে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার কী হাল, তা খতিয়ে দেখে ত্রুটিগুলি শুধরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো কাজ যে করা হচ্ছে, তার প্রমাণ একটি সিডিতে ভরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। প্রথমে আবেদন করা হবে। কিন্তু তাতেও কাজ না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মন্ত্রী জানান, এখন মাসে ১০০টি করে জায়গায় অভিযান চালানো হবে। পরে তা বাড়িয়ে ২০০ করা হবে। সেই তালিকায় শপিং মল থেকে শুরু করে বাজার, বহুতল— সবই থাকবে। পাশাপাশি, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায় দমকল দফতরের তরফে সচেতনতা শিবিরও করা হবে। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন জায়গায় এখন অগ্নি-নির্বাপণের যে ব্যবস্থা রয়েছে, সেটাকেই কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, তার পরামর্শ দেবেন দফতরের আধিকারিকেরা।

এ দিন প্রথমে দমদম নাগেরবাজারের একটি শপিং মলে যান সুজিত। ওই শপিং মলে রেস্তরাঁ থেকে মাল্টিপ্লেক্স— সবই রয়েছে। বেসমেন্ট থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। শপিং মলের কর্মীরা তাঁর সামনেই হিট ডিটেক্টর, স্মোক অ্যালার্ম, ফায়ার অ্যালার্ম ও স্প্রিঙ্কলার চালিয়ে দেখান। দেখা যায়, অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রগুলি ঠিকঠাকই কাজ করছে। এর পরে ওই শপিং মলে কত ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার রয়েছে এবং জল দেওয়ার জন্য যে ইঞ্জিন রয়েছে, তার ক্ষমতা কতটা, সেটাও খতিয়ে দেখা হয়। পরে মন্ত্রী বলেন, ‘‘দমকলের নির্দেশিকা মতো অগ্নি-নির্বাপণের যা যা ব্যবস্থা থাকা দরকার, তার মধ্যে কিছু ত্রুটি রয়েছে। কর্তৃপক্ষকে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি। যেমন, আপৎকালীন দরজা বদলাতে হবে। জলাধারের ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।’’

দমদম থেকে বেরিয়ে কাঁকুড়গাছি-ফুলবাগান এলাকার এক শপিং মলে হাজির হন দমকলমন্ত্রী। সেখানে বেসমেন্টে গিয়ে তিনি দেখেন, বিদ্যুতের কেব্‌ল সব খোলা অবস্থায় রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রী বলেন, সমস্ত কেব্‌ল একটি নির্দিষ্ট ডাক্টের মধ্যে রাখতে হবে। এর পরেই মন্ত্রী হিট ডিটেক্টর, স্মোক অ্যালার্ম, ফায়ার অ্যালার্ম ও স্প্রিঙ্কলার পরীক্ষা করে দেখাতে বলেন। কিন্তু দেখা যায়, স্প্রিঙ্কলার ঠিক থাকলেও বাকি যন্ত্রগুলির একটিও কাজ করছে না। বেসমেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা বহুতলের একটি রেস্তরাঁর রান্নাঘরে হাজির হন মন্ত্রী। সেখানে দেখা যায়, অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রগুলি কাজ তো করছেই না, তার উপরে স্প্রিঙ্কলারের মুখগুলিও তেল-কালিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকি, আগুন লাগলে সবাইকে সতর্ক করার পর্যাপ্ত হুটারও নেই। এই সমস্ত ত্রুটি চোখে পড়ার পরেই সুজিতবাবু জানতে চান, ওই শপিং মলে শেষ কবে ফায়ার অডিট হয়েছে? কিন্তু কোনও উত্তর দিতে পারেননি আধিকারিকেরা।

এ দিন দু’টি শপিং মল কর্তৃপক্ষই অবশ্য মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, দফতরের তরফে যা যা নির্দেশ ও পরামর্শ দেওয়া হবে, তাঁরা তা অবশ্যই মেনে চলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Brigade Sujit Bose Fire Audit Shopping Mall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE