করজোড়ে: চলছে অকাল সরস্বতী আরাধনা। মঙ্গলবার, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
স্থানীয় নেতৃত্বকে বলে কাজ না হওয়ায় একেবারে ‘হাইকম্যান্ড’-এর দ্বারস্থ পড়ুয়ারা! অকালবোধনের মতোই এ বার অকাল সরস্বতী পুজো।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বাক্ স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছেন। পড়ুয়াদের কোনও কথা শুনতেই রাজি হচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, কলেজ সংক্রান্ত কোনও সমস্যার কথা বলতে গেলেও পুলিশে অভিযোগ করা হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজের পড়ুয়াদের একাংশের। অগত্যা মঙ্গলবার সকালে তাঁরা বাগ্দেবীর শরণাপন্ন হলেন। কলেজের মধ্যে অকাল সরস্বতী পুজোর আয়োজন করে প্রতীকী প্রতিবাদ করলেন।
পড়ুয়াদের দাবি, বাক্ স্বাধীনতা হরণ হওয়াতেই তাঁরা বাগ্দেবীর আরাধনা করেছেন। কোনও জায়গায় তো নিজেদের ক্ষোভের কথা বলতে হবে, সে ক্ষেত্রে বাগ্দেবীই ভরসা। তাই এ দিন এই ‘অকালবোধনে’র আয়োজন। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণেই এই অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে।
কলেজ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সরস্বতী পুজো হয়। ছাত্র সংসদের তরফে ওই পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। ছাত্র সংসদের অভিযোগ, পরিচালন সমিতির বৈঠক ছাড়াই কলেজ সংক্রান্ত একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হলে সংশ্লিষ্ট ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধেই পুলিশে অভিযোগ করা হচ্ছে। কলেজের ক্যান্টিন, ইউনিয়ন রুম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সেগুলি খোলার চেষ্টাও করছেন না কর্তৃপক্ষ।
কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সম্পাদক শৌভিক রায় বলেন, ‘‘আমাদের বাক্ স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই সরস্বতী পুজো করছি। আমরা ঘেরাওয়ে বিশ্বাস করি না। কিন্তু কোনও জায়গায় তো নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা জানাতে হবে।’’ কলেজে সর্বধর্ম সমন্বয় নামে একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সভাপতি আব্দুল নুমান বলেন, ‘‘ইদের আগে আমরা সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছি। এ ভাবেই প্রতিবাদ জানাতে চাই।’’
পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ দিনের পুজোর জন্য বিশেষ অর্ডার দিয়ে কুমোরটুলি থেকে সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে। পুরোহিত ছিলেন কলেজেরই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশুতোষ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সকালে একটা অমৃতযোগ ছিল। সেই সময়েই আমরা পুজো করেছি। তবে এর জন্য কোনও ক্লাস আমরা বন্ধ করিনি।’’
কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পড়ুয়াদের সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা যাতে কারও ‘ইন্ধনে’ পা না দেন, সে সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন অধ্যক্ষা সুনন্দা গোয়েন্কা। তিনি অবশ্য এ দিনের সরস্বতী পুজোর বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। সুনন্দা বলেন, ‘‘মায়ের অসুস্থতার কারণে আমি এই মুহূর্তে শহরের বাইরে আছি। সরস্বতী পুজোর ব্যাপারটি আমার ঠিক জানা নেই। আমি শুধু একটি কথাই বলতে পারি, ছাত্রছাত্রীদের কাজ পড়াশোনা করা। আমার বিশ্বাস, তাঁরা সেটাই করবেন। কেউ যদি ছাত্রছাত্রীদের অন্য ভাবে পরিচালিত করতে চান, তা হলে তাঁরা সেই প্রলোভনে পা দেবেন না বলেও আমার বিশ্বাস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy