Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুড়ে মৃত্যু মেয়ের, সুবিচার চেয়ে অপেক্ষায় মা

দিদিমার মোবাইলে মায়ের পুরনো ছবি দেখলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় শিশুটি। সেখান থেকে মুছেও দিয়েছে কিছু ছবি। মায়ের ছবি দেখতে চায় না সে। তার সামনে কোনও আগুন জ্বালালে এখনও চিৎকার করে ওঠে ভয়ে। বলে ওঠে, ‘বন্ধ কর’। 

তানিয়া অগ্নি আলি

তানিয়া অগ্নি আলি

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

দিদিমার মোবাইলে মায়ের পুরনো ছবি দেখলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় শিশুটি। সেখান থেকে মুছেও দিয়েছে কিছু ছবি। মায়ের ছবি দেখতে চায় না সে। তার সামনে কোনও আগুন জ্বালালে এখনও চিৎকার করে ওঠে ভয়ে। বলে ওঠে, ‘বন্ধ কর’।

গত বছর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এই শিশুপুত্রের মা তানিয়া অগ্নি আলির। বছর ঘুরলেও তানিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি এখনও। বিচারের আশায় দুই নাতি-নাতনিকে আগলে অপেক্ষা করছেন তানিয়ার বাবা-মা।

২০১৭-র ৭ সেপ্টেম্বর বছর সাতাশের তানিয়া অগ্নি আলিকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রাজারহাটের বিষ্ণুপুর দাসপাড়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করেন পড়শিরা। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরের ৯৯ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। দু’দিন পরে, ৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতার পরিজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের মেয়েকে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছেন তাঁর স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তানিয়ার স্বামী, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল আলি গ্রেফতার হন। তিন মাস জেলে থাকার পরে জামিন পেয়ে যান তিনি। জামিন পেয়ে যান তানিয়ার শাশুড়ি ও ননদও। অর্থাৎ, বর্তমানে অভিযুক্তেরা সকলেই জামিনে মুক্ত। তানিয়ার পরিবারের আইনজীবী চন্দ্রশেখর দে বলেন, ‘‘ঘটনার পরে পুলিশ প্রথমে একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেছিল আদালতে। সেখানে শুধু তানিয়ার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। আমরা সেটি পরিবর্তন করতে বললে পুলিশ দ্বিতীয় দফায় তানিয়ার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদের বিরুদ্ধেও চার্জশিট জমা করে। আপাতত ওই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে মামলা।’’ চার্জ গঠন হয়নি।

এতেই হতাশ তানিয়ার বাবা গোলাম ছাত্তার গাজী এবং মা তপতী মণ্ডল। তাঁদের অভিযোগ, যাঁদের জন্য এমন সর্বনাশ, তাঁরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ দিকে, তানিয়ার দু’টি শিশু মায়ের অবর্তমানে বড় হচ্ছে খড়দহে দাদু-দিদিমার বাড়িতে। তপতীদেবী জানালেন, তিনি স্কুল শিক্ষিকা। তাই নিজের বৃদ্ধা মা আর ছোট মেয়ের কাছে বছর চারের নাতি আর দু’বছরের নাতনিকে রেখে বেরিয়ে যান কাজে। তপতীদেবী জানিয়েছেন, তানিয়ার ছেলে বুঝতে পারে যে, ওর মা আর নেই। কিন্তু মেয়ে এখনও বোঝেই না, ওর মা বলে কেউ ছিলেন। বাবা খোঁজ করেন না ওদের? তানিয়ার পরিবারের বক্তব্য, জামিনে মুক্তি পেলেও ইকবাল কখনও সন্তানদের খোঁজ নেননি। বর্তমানে ইকবাল কোথায়, তা-ও তাঁরা জানেন না। রাজারহাটের যে ফ্ল্যাটে ঘটনাটি ঘটেছিল, সেটি ‌ভাড়ার। ঘটনার পর থেকেই সেটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে আপাতত বন্ধ। এ দিকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ঘটনার পরেই ইকবালকে সাসপেন্ড করা হয়। সম্প্রতি ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন ইকবালের আইনজীবী শিশির নন্দী। ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার কথা বলে মনে হয়েছে, ইকবাল নির্দোষ। তাও তাঁকে এতদিন ধরে সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন তাঁর আবেদনে সাড়া দিল না, বুঝতে পারছি না।’’ আইনজীবীর মাধ্যমে ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি।

দাদু-দিদিমা চান না তানিয়ার ছেলে-মেয়ে বাবার কাছে যাক। তবে সাসপেন্ড করা হলেও বেতনের কিছুটা অংশ পান ইকবাল। সেই বেতনের কিছু অংশ যাতে তাঁর সন্তানদের পরিচর্যার জন্য পাওয়া যায়, সম্প্রতি সেই আবেদন জানিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তানিয়ার বাবা। কিন্তু তা আদালতের নির্দেশ সাপেক্ষ বলে জানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ।

এমন অবস্থায় তানিয়ার পরিবারের একটাই আর্জি, বিচারটুকু যেন পান তাঁদের মৃতা মেয়ে। সেই বিচারের দাবিতেই তানিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ‘জাস্টিস ফর তানিয়া মঞ্চ’ তৈরি করেছেন তাঁর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা। সম্প্রতি রিপন স্ট্রিটে তাঁরা এ নিয়ে একটি আলোচনাসভা করে তানিয়ার বাবা-মাকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মেয়ের বন্ধুদের পাশে পেলেও বিচার কবে মিলবে, সে প্রশ্নের উত্তরই খুঁজচ্ছেন মৃতা

তরুণীর বাবা-মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Tania Agni Ali Justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE