Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘৃণ্য অপরাধে যোগ বাড়ছে নাবালকদের

বৃহস্পতিবার রাতে কালীঘাট থানা এলাকায় দুই নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক তরুণ এবং দুই নাবালকের বিরুদ্ধে। নাবালক দু’জনের বয়স ১৩-১৪র মধ্যে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩০
Share: Save:

দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ শহরেও বাড়ছে ‘ঘৃণ্য’ অপরাধে নাবালকদের জড়িত থাকার ঘটনা!

সম্প্রতি কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া দু’টি গণধর্ষণ-কাণ্ডে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। সপ্তাহ দুয়েক আগে পঞ্চসায়রের একটি হোম থেকে নিখোঁজ হওয়া মানসিক ভাবে অসুস্থ এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বছর সতেরোর এক নাবালকের বিরুদ্ধে। মূল অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে সে-ও প্রত্যক্ষ ভাবে ওই ঘটনায় জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, গাড়িতে উঠে সে সামনের আসনটি টেনে নিয়েছিল চালক উত্তম রামকে সাহায্য করার জন্য। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আটক হওয়ার পরে ওই নাবালক জেরায় অপরাধের কথা স্বীকার করে।

তবে শুধু পঞ্চসায়র কাণ্ডই নয়। বৃহস্পতিবার রাতে কালীঘাট থানা এলাকায় দুই নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক তরুণ এবং দুই নাবালকের বিরুদ্ধে। নাবালক দু’জনের বয়স ১৩-১৪র মধ্যে। এর আগে ২০১৮ এবং ২০১৭ সালেও শহরের বুকে তিনটি খুনের ঘটনায় তিন নাবালকের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছিল। পরে তাদের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে হাজির করানো হয়। সাইকোমেট্রি পরীক্ষা করিয়ে দেখা যায়, তারা জেনেশুনেই অপরাধগুলি করেছে। তার প্রমাণ ২০১৮ সালে কসবার একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে প্রৌঢ়া শীলা চৌধুরী খুনের ঘটনা। আবার ২০১৭ সালে জোড়াসাঁকো থানা এলাকায় এক রত্ন ব্যবসায়ী এবং নিউ আলিপুরের বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনাতেও নাবালকের প্রত্যক্ষ যোগ মিলেছিল। তিনটি মামলার ক্ষেত্রেই তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, নাবালকেরা অপরাধ কবুলের সময়ে যে ভঙ্গিতে কথা বলেছিল তাতে মনে হয়েছিল তাদের মানসিক গঠন সাবালকের মতোই। সেই কারণেই তাদের সাইকোমেট্রি পরীক্ষা করানোর আর্জি জানায় পুলিশ। সেই পরীক্ষাতেও ওই নাবালকদের আচরণ সাবালকের মতোই মনে হয়েছিল বলে জানিয়েছিল চিকিৎসকেদের বোর্ড।

শহরের বুকে পরপর ঘটে যাওয়া অপরাধে নাবালকদের এই যোগ যে নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্টই তার প্রমাণ। যাতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে দেশ জুড়ে ৩৩ হাজার ৬০৬টি অপরাধের ঘটনায় ৪০ হাজার ৪২০ জন কিশোর-কিশোরীকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে আবার ৩৭ হাজার ৪০২ জন নাবালককে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় এনে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তিন হাজার ১৮ জন নাবালককে বিশেষ আইনে আটক করা হয়েছে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, ৩৭ হাজার ৪০২ জন নাবালকের মধ্যে ২৯ হাজার ১৯৪ জনের বয়স ১৬-১৮ বছরের মধ্যে, যা মোট নাবালক-নাবালিকার ৭২.২ শতাংশ। আর এই অপরাধের সঙ্গে নাবালকদের প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকা অনেকের মনেই আতঙ্ক তৈরি করেছে।

মনোরোগ চিকিৎসকেরা অবশ্য মনে করছেন, এর পিছনে আর্থ-সামাজিক তারতম্যই মূল কারণ। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের বক্তব্য, ‘‘বঞ্চিত হওয়া বাচ্চাদের মধ্যে মায়া, মমতা বা অন্য অনুভূতিগুলি কম থাকে। দৈনন্দিন টানাপড়েনের মধ্যে থাকতে থাকতে অপরাধের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়তে থাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Teenager NCRB Juvenile Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE