Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আন্টির নাম শুনেই কান্না শিশুর

প্রশ্ন শুনে দরজাটা সামান্য খুলে দিয়ে পাশের সোফায় শুয়ে পড়ে ছটফট শুরু করল সেই শিশুপুত্র। হিন্দিতে বলেই চলেছে, ‘‘নহি নহি, উস বারেমে বাত নহি!’’ চোখ-মুখ কাঁদোকাঁদো।

সিসিটিভির ফুটেজেই ধরা পড়ে মারধরের ঘটনা। —ফাইল চিত্র।

সিসিটিভির ফুটেজেই ধরা পড়ে মারধরের ঘটনা। —ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

লেক টাউন এলাকার একটি আবাসন। প্রতি তলায় তিনটি করে ফ্ল্যাট। তিনতলায় মাঝের ফ্ল্যাটের বেল বাজাতে দরজা খুলল বছর আটেকের এক শিশু। তার থেকে সামান্য বড় এক নাবালিকা এবং এক মহিলা পিছনে দাঁড়িয়ে। চোখ-মুখে একাধিক প্রশ্ন। কথা বলা যায়? মহিলা বললেন, ‘‘বলুন!’’ আপনার পুত্রকেই তো মারধর করেছিলেন গৃহশিক্ষিকা! প্রশ্ন শুনে দরজাটা সামান্য খুলে দিয়ে পাশের সোফায় শুয়ে পড়ে ছটফট শুরু করল সেই শিশুপুত্র। হিন্দিতে বলেই চলেছে, ‘‘নহি নহি, উস বারেমে বাত নহি!’’ চোখ-মুখ কাঁদোকাঁদো।

ছেলে-মেয়েকে ভিতরের ঘরে যাওয়ার কড়া নির্দেশ দিয়ে মহিলা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ওই ব্যাপারে কথা না বলাই ভাল। অনেক কষ্টে আমার ছেলে ঘটনাটা ভুলেছে। আর নতুন করে মনে করাবেন না। অন্য দিদিমণির কাছে পড়ছে এখন।’’ ছেলে-মেয়ে আবার ঘুরে-ফিরে এল বসার ঘরে। কেঁদেই চলেছে ছেলে। কথা থামাতেই হবে। মা বললেন, ‘‘ওদের সামনে এ সব বলা যাবে না...!’’

২০১৪ সালের ২২ জুলাই। নির্মম ভাবে খুদে ছাত্রকে প্রহার গৃহশিক্ষিকার। টিভি-র পর্দায় সে দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল কলকাতা-সহ গোটা দেশ। কখনও বেধড়ক চড়-থাপ্পড়, তো কখনও খাটের উপরে ছুড়ে ফেলে একরত্তি শিশুর পেটে পা তুলে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন শিক্ষিকা! শিশুর কান্না যত জোরদার হচ্ছে, ততই বেড়ে যাচ্ছে শাসনের দাওয়াই। দেওয়ালে কয়েক বার মাথাও ঠুকে দিতে দেখা যায় তাঁকে। কয়েক মিনিটের সেই ভিডিয়ো ফুটেজে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সর্বত্র। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে পৌঁছনো গিয়েছিল প্রহৃত সেই শিশুর বাড়িতেই।

কেমন আছে সে?

ছেলে-মেয়েকে ঘরে রেখে সিঁড়ি পর্যন্ত নেমে এলেন মা। বললেন, ‘‘এখনও এ নিয়ে কথা বলতে পারি না আমরা কেউই। সবাই চুপ করে যাই।’’ জানালেন, ঘটনার দিন ওই শিক্ষিকা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বারবার ধাক্কা দিলেও খুলছিলেন না। ‘‘ছেলে তখন প্রবল চিৎকার করে চলেছে। যেন ওকে কেউ কেটেই ফেলছে,’’ বলে চলেন মহিলা। শেষে শোয়ার ঘরে লাগানো সিসি ক্যামেরা চালু করে দেন তিনি। তাতেই দেখা গিয়েছিল, ছাত্র পেটানোর সেই দৃশ্য।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, বছর তিরিশের ওই শিক্ষিকার নাম পূজা সিংহ। ছাত্রের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পূজাকে গ্রেফতার করেছিল লেক টাউন থানার পুলিশ। বেশ কয়েক বার পুলিশি এবং জেল হেফাজতের পরে জামিন পেয়ে যান পূজা। বিচার অবশ্য চলছিল। চার বছর বাদে গত জুলাই মাসে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে দোষী সাব্যস্ত করে ছ’মাসের কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে বিধাননগর আদালত। তবে ওই দিনই জামিন পেয়ে গিয়েছেন পূজা। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দায়রা আদালতে নতুন করে আপিল করেছেন তাঁরা।

বাগুইআটির যে বাড়িতে সেই সময়ে থাকতেন পূজারা, সেটি ছেড়ে দিয়েছেন। ছাত্র পেটানোর বিষয় নিয়ে একেবারেই কথা বলতে চান না

পূজার স্বামী রোহিত। তবে পূজা বলেন, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। উচ্চ আদালতে আপিল করেছি আমরা। এই মিথ্যা অভিযোগের জন্য আগের বাড়ি ছেড়েও উঠে আসতে হয়েছে আমাদের।’’

২০১৪-র ঘটনা বদলে দিয়েছে ছাত্র-শিক্ষিকা দু’জনেরই জীবন। ফেরার পথে মনে পড়ছিল নাবালকের মায়ের কথা। মা বলছিলেন, ‘‘অনেক দিন স্কুলেও পাঠাতে পারিনি ছেলেকে। আতঙ্কে ভুগত ও। এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

আর কোনও দিন যেন পড়তে বসে ওর এই অভিজ্ঞতা না হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE