Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসার বর্জ্য জল নিয়ে ধমক আদালতের

এত কিছুর মধ্যে বাদ চলে গিয়েছিল হাসপাতাল থেকে নির্গত দূষিত জলের বিষয়টি। জল তো কোনও প্যাকেটে সংগ্রহ করে রাখা যায় না। তা অবাধে পরিবেশে গিয়ে মিশছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

হাসপাতাল থেকে রক্ত, চর্বি, বিভিন্ন রকম দেহরস, রোগীর মল-মূত্র-থুতু-বমি, ল্যাবরেটরির বিভিন্ন ধরনের রিএজেন্ট, অ্যাসিড ও ক্ষার মিশ্রিত জল সোজা চলে যাচ্ছে নর্দমায়। সেখান থেকে তা মিশছে নদীনালায়। পানীয় জলেও সেই জীবাণুতে ভরা দূষিত জল মেশার প্রভূত আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে!

এই মারাত্মক জলদূষণ রোখার ব্যাপারে রাজ্য সরকার, বিশেষ করে স্বাস্থ্য দফতর এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোনও সদিচ্ছা নেই বলে জানিয়ে ভর্ৎসনা করেছে জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের পূর্বাঞ্চল বেঞ্চ। অবিলম্বে সমস্ত দফতর একসঙ্গে বসে হাসপাতাল থেকে বার হওয়া দূষিত জল শোধন করার ‘এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ (ইটিপি) চালু না করলে আদালত যে আরও কড়া হতে বাধ্য হবে, সে কথাও জানিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু তার পরেও ইটিপি বসানোর দায়িত্ব কারা নেবে, তা নিয়ে চাপান-উতোর মিটছে না। ফলে অবিলম্বে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এ ব্যাপারে সব ক’টি দফতরকে নিয়ে বৈঠক ডেকে সমাধানসূত্র বার করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এত দিন হাসপাতাল থেকে দূষণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের কথাই শোনা যেত। সেখানে ব্যবহৃত গজ, তুলো, সিরিঞ্জ, ক্যাথিটার প্রভৃতি থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া টিউমার, দেহাংশ— সব কিছুই রয়েছে। এক-এক ধরনের বর্জ্য এক-এক রঙের প্যাকেটে ফেলার নিয়ম রয়েছে। নির্দিষ্ট সংস্থাকে বরাতও দেওয়া আছে, যারা ওই প্যাকেট নিয়মিত হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করে বিশেষ ধরনের যন্ত্রে সেই বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে বাদ চলে গিয়েছিল হাসপাতাল থেকে নির্গত দূষিত জলের বিষয়টি। জল তো কোনও প্যাকেটে সংগ্রহ করে রাখা যায় না। তা অবাধে পরিবেশে গিয়ে মিশছে।

এ ব্যাপারে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে গ্রিন বেঞ্চে মামলা করেছিলেন কলকাতার এক আইনজীবী। এই ‘অন্যদের’ মধ্যে স্বাস্থ্য দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মতো কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। দূষণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন কার্যকর
করা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পর্ষদের। এই মামলার পরে পর্ষদ ২০১৬ সালে নির্দেশ দেয়, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে দূষিত জল শোধন করে নর্দমা ও নদীনালায় পাঠানোর জন্য ইটিপি বসাতে হবে। কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে তা চালু হলেও রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে তা হয়নি। শুধুমাত্র নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক কিছু কাজ হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের পূর্বাঞ্চল বেঞ্চ রাজ্যের কড়া সমালোচনা করে জানায়, স্বাস্থ্য দফতর সম্পূর্ণ ‘অসহযোগিতা’ করছে এবং ইটিপি বসানোর ব্যাপারে পুরোপুরি ‘হাত গুটিয়ে’ বসে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই কাজের দায়িত্ব কারা নেবে, সে ব্যাপারেও তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলছে না। প্রথমে স্বাস্থ্য দফতর বলেছিল, এই কাজ করবে পূর্ত দফতর। তার পরে তারা জানায়, দায়িত্ব নেবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। কিন্তু কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই বিভাগের সচিব আদালতে হাজিরা দেননি।

এ ব্যাপারে এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। পূর্ত দফতর আমাদের জানিয়েছে, ইটিপি করার দক্ষতা একমাত্র পিএইচই বিভাগের রয়েছে। বল এ বার ওদের কোর্টে। আমরা দর্শক।’’ এ দিকে, পিএইচই বিভাগের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উক্তি, ‘‘আমরা গ্রামাঞ্চলে কাজ করি। শহরাঞ্চলে নয়। ফলে আমরা করতে পারব না।’’

গত ২২ জানুয়ারি জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালে পিএইচই দফতর জানিয়েছে, ইটিপি বসানোর কাজ করার উপযুক্ত দফতর তারা নয়। এর পরেই আদালত নির্দেশ দেয়, যে ভাবে হোক, হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাতেই হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির ভিতরে ঝামেলা মেটাতে মুখ্যসচিবকে বৈঠক ডাকতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE