Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চণ্ডীতে উন্নয়ন তিমিরেই

বাড়ির আশপাশে জমে রয়েছে নোংরা আবর্জনা। নিকাশির অভাবে একটু বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। সেই জল নামতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আমতলা ও কৃপারামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটা এমনই।

ইট উঠে রাস্তা বেহাল। দুর্দশা নিকাশিরও। —নিজস্ব চিত্র।

ইট উঠে রাস্তা বেহাল। দুর্দশা নিকাশিরও। —নিজস্ব চিত্র।

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

বাড়ির আশপাশে জমে রয়েছে নোংরা আবর্জনা। নিকাশির অভাবে একটু বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। সেই জল নামতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আমতলা ও কৃপারামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটা এমনই।

এই পঞ্চায়েতেরই আরও একটু ভিতরে চণ্ডী মৌজা। এর বেশির ভাগ রাস্তাই কাঁচা বা ইট বিছানো। তাও এতই সরু যে দু’টি মোটরসাইকেলকে অতি সন্তর্পণে পাশ কাটাতে হয়। যাতায়াতের নির্দিষ্ট মাধ্যম নেই। পরিবহণ বলতে নিজস্ব মোটরসাইকেল। রাতে রাস্তার ধারের ঘরগুলি থেকে যে সামান্য আলো আসে তাতেই পথ চলতে হয়। যদিও পঞ্চায়েতের দাবি, এলাকায় ৯০ শতাংশ রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ শেষ। বিদ্যুতের খুঁটি পোতার কাজও চলছে। এ বার আলো লাগানোর কাজ হবে।

উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ এই তিন ভাগে বিভক্ত চণ্ডী মৌজা। চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের এক দিকে আমতলা-ডায়মন্ড হারবার রোড। অন্য দিকে, আমতলা-বারুইপুর রোড। এ ছাড়াও রয়েছে আমতলা-নিবারণ দত্ত রোড। চণ্ডী মৌজা থেকে এই রাস্তাগুলিতে উঠতে কোনও যাতায়াতের মাধ্যমই নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, এমনকী রোগীকেও এ ভাবেই প্রায় ঘণ্টা খানেকের পথ হাঁটতে হয়।

চণ্ডী পঞ্চায়েতের গায়েন পাড়া, মোল্লা পাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় বছর পাঁচ হল ভোটের আগে পঞ্চায়েত থেকে এলাকার রাস্তায় আলোকস্তম্ভ বসিয়ে গিয়েছিল। আজও আলো জ্বলেনি সেগুলিতে। সন্ধ্যা নামতেই আঁধারে ডুবে যায় চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই নিয়ে বহু বার স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, বারবার পঞ্চায়েতকে জানিয়েও কোনও সমাধান হয়নি। অগত্যা টর্চ বা লন্ঠনের আলো নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নিকাশির উপযুক্ত কাঠামো তৈরিতে এবং পঞ্চায়েতের ভিতরের দিকের পরিবহণ নিয়ে কেউ কখনও নজরই দেয়নি। নির্বিকার বিরোধীরাও। ২০০৩ পর্যন্ত চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন সিপিএম-এর দীপক মণ্ডল। নিকাশি সমস্যা নিয়ে নিরুত্তর দীপকবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে থাকাকালীন রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করেছিলাম। পরবর্তী কালে সে ভাবে কাজ করেনি বর্তমান বোর্ড। এমনকী মেরামতির কাজও ঠিক মতো হয় না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পঞ্চায়েতের অরাজকতার প্রতিবাদে বছরখানেক আগে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছিল।’’

চণ্ডীর এক বাসিন্দা শেখ আমিরুলের বিস্মিত মন্তব্য, ‘‘তখন তো পোল প্রতি দশ হাজার টাকা নিত পঞ্চায়েত! তাই প্রয়োজন থাকলেও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করতে পারিনি। তখন অনেক জায়গাতেই লোকে টাকা দিতে না পারায় আলো বসেনি।’’ পঞ্চায়েত বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। পঞ্চায়েত প্রধান তারক মণ্ডল বলছেন, ‘‘চণ্ডী মৌজার বেশির ভাগ রাস্তাই সরু। পাঁচ থেকে ছ’ ফুট চওড়া ঢালাই রাস্তা দিয়ে অটো চালানো অসুবিধাজনক। বিবেকানন্দ ক্লাব থেকে পীরতলা হাইস্কুল পর্যন্ত চণ্ডীর মধ্যস্থল বরাবর একটি ছ-সাত ফুটের রাস্তা করছে মৎস্য দফতর। এটিকেই এই পঞ্চায়েতের বাইপাস রোড বলা যাবে। কাজ শেষে ওই রাস্তায় অটো রুট চালুর চেষ্টা করা হবে।’’ তিনি আরও জানান, গত ছ’ মাসে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিআরজিএফ খাতে ২০০টি বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতেছে। যার বেশির ভাগই কৃপারামপুর, দু’নম্বর হল্ট চণ্ডী, উত্তর চণ্ডী এবং মধ্য চণ্ডীতে। এখনও অনেক জায়গায় বাকি রয়েছে। আশা করা হচ্ছে জুনের মধ্যে পোলগুলিতে বিদ্যুৎ স‌ংযোগ দিয়ে দেওয়া যাবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নিকাশি যে পঞ্চায়েতের বড় সমস্যা তা মানছেন তারকবাবু। অথচ সুষ্ঠু নিকাশি প্রকল্প তৈরিতে এখনও চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েত কোনও ভাবনা-চিন্তার স্তরেই নেই বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jayati raha panchayet rain village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE