Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাংলা প্রোসেনিয়ামের জনককে কুর্নিশ

যিনি প্রায় একার উদ্যোগে প্রোসেনিয়াম থিয়েটারের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ঘটালেন, তিনিও এক সাহেব। তবে ইংরেজ নন, রুশ। জন্ম রাশিয়ার ইয়ারোস্লাভ শহরে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনীতা কোলে
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৪০
Share: Save:

২৭ নভেম্বর, ১৭৯৫। শহর কলকাতার ডোমতলা স্ট্রিটে (বর্তমানে এজরা স্ট্রিট) কানায় কানায় পূর্ণ ৩০০ আসনের প্রেক্ষাগৃহ। অভিনীত হচ্ছে রিচার্ড পল জড্রেলের ‘দ্য ডিসগাইজ’। তবে ইংরেজি নয়, বাংলায়। এ ভাবেই বাংলার বিনোদন মানচিত্রে যোগ হল নতুন এক অধ্যায়। এর আগে থিয়েটার ছিল ব্রিটিশ বিনোদন। বাঙালির প্রবেশাধিকার ছিল না সেখানে। অভিনেতারা তো বটেই, সরঞ্জামও আনা হতো ব্রিটেন থেকে।

যিনি প্রায় একার উদ্যোগে প্রোসেনিয়াম থিয়েটারের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ঘটালেন, তিনিও এক সাহেব। তবে ইংরেজ নন, রুশ। জন্ম রাশিয়ার ইয়ারোস্লাভ শহরে। নাম গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেদেফ। এ বছর তাঁর ২০০তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড কালচার এবং সঙ্গীত কলা মন্দিরের যৌথ উদ্যোগে ১৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার গোর্কি সদনে আয়োজিত হতে চলেছে এক স্মরণসন্ধ্যা। মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘লাভ ইজ দ্য বেস্ট মেডিসিন’।

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্ণ হলো এ বছর। গোর্কি সদনের অধিকর্তা ইউরি ভি দুবোভয় উল্লেখ করেন, দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ইতিহাসে লেবেদেফ অন্যতম উল্লেখ্য। এক দিকে যেমন তিনি কলকাতায় প্রোসেনিয়াম থিয়েটারের জনক, তেমনই রাশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতিচর্চার পথিকৃৎ। তাঁর স্মরণে গত নভেম্বর থেকেই চলছে নানা অনুষ্ঠান। গোর্কি সদনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর গৌতম ঘোষ জানালেন, ভারতীয় থিয়েটারে লেবেদেফের অবদান সম্পর্কে বাঙালিকে সচেতন করতে চান তাঁরা। লেবেদেফকে বিস্মৃতি থেকে আলোয় আনতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।

ছোট থেকেই গান, নাটক, ভাষা শিক্ষায় উৎসাহ ছিল লেবেদেফের। নিজের চেষ্টায় শিখেছিলেন বেহালা বাজাতে। সঙ্গে ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষা। ১৭৮৫ সালে লেবেদেফ আসেন মাদ্রাজে। বছর দুই পরে কলকাতায়। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেশ নাম করেন। স্থানীয় এক শিক্ষক গোলোকনাথ দাসের কাছে তিনি শিখতে শুরু করেন সংস্কৃত, হিন্দি ও বাংলা। পরিবর্তে শেখাতেন বেহালা ও পাশ্চাত্য সঙ্গীত। ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। তা থেকেই থিয়েটার নিয়ে ভাবনা শুরু। তিনি চেয়েছিলেন বাংলায়, বাঙালিদের দ্বারা, বাঙালিদের জন্য থিয়েটার করতে। নাটকের মঞ্চসজ্জা থেকে সুরসৃষ্টি— সবই করেছিলেন লেবেদেফ। ভারতচন্দ্র রায়ের গানের সঙ্গে ব্যবহার করা হল পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্র। নাট্যকার ব্রাত্য বসু মনে করান, বাংলায় প্রথম প্রোসেনিয়াম থিয়েটার করান তিনি। বাংলা নাটকে মহিলা চরিত্রে মেয়েদের অভিনয় করান তিনিই প্রথম। বাণিজ্যিক বাংলা থিয়েটারও শুরু হলো তাঁর হাত ধরেই। কলকাতার মঞ্চে আসে বিদেশি গল্প। তবে অনুবাদ নয়, ভিন্‌দেশি কাহিনির স্থানীয়করণ করেন তিনি। টিকিটের দাম নেহাত কম ছিল না, তবু ভিড় জমালেন বাঙালিরা।

তাঁর সাফল্য অবশ্য স্থায়ী হল না। ১৭৯৬-এ পুড়ে যায় থিয়েটারটি। মনে করা হয়, এতে হাত ছিল কয়েক জন ঈর্ষাণ্বিত ইংরেজের। ১৯৯৭ সালে কার্যত নিঃস্ব অবস্থায় ভারত ছাড়তে হয় লেবেদেফকে। পরে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে একাধিক বই লেখেন তিনি। রুশ ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন ‘অন্নদামঙ্গল’।

মলিয়েরের ‘লাভ ইজ দ্য বেস্ট মেডিসিন’ নাটকটি অনুবাদ করেছিলেন লেবেদেফ। সেটির আধুনিক রূপ উপস্থাপিত করছে হোল নাইন ইয়ার্ডস দলটি। তাদের পরিচালক অভ্রজিৎ সেন জানালেন, নাটকে উঠে আসবে জাতিবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা, রক্ষণশীলতার মতো সমসাময়িক বহুচর্চিত বিষয়ও। সঙ্গীতশিল্পী লেবেদেফের প্রতি কুর্নিশ জানাতে ব্যবহার হচ্ছে জ্যাজ সঙ্গীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gorky sadan Kolkata গোর্কি সদন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE