Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বেরোনোর সরু পথে ওত পেতে বিপদ

কী ভাবে আগুন লাগল প্রিয়াতে, জানা যাবে পরীক্ষার পরে

প্রিয়া সিনেমায় বেরোনোর পথ বলতে এক ফালি জায়গা মাত্র। রবিবার রাতে সেখানে নাইট শোয়ে জনা তিরিশ দর্শক ছিলেন। আগুন লাগার পরে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। ধোঁয়ায় অসুস্থ হন এক কর্মী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্তারা বলছিলেন, হাউসফুল শো হলে কিন্তু ব়ড় বিপদ ঘটতে পারত! শুধু আগুন নয়, সরু দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়েও বিপদ হতে পারত। সিনেমা হলের সঙ্গে প্রিয়ার একতলায় নাইটক্লাব, রেস্তরাঁও রয়েছে। সেগুলিও বন্ধ।

রবিবার রাতে শো চলাকালীন আগুন লাগার পরে ঘিরে দেওয়া হয়েছে প্রিয়া সিনেমার সামনের ফুটপাত। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রবিবার রাতে শো চলাকালীন আগুন লাগার পরে ঘিরে দেওয়া হয়েছে প্রিয়া সিনেমার সামনের ফুটপাত। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

প্রিয়া সিনেমায় আগুন লেগেছিল কী ভাবে? ফারাক দেখা যাচ্ছে ফরেন্সিক ও দমকলের মনোভাবে।

সোমবার দুপুরে ফরেন্সিক বিভাগের অধিকর্তা ওয়াসিম রাজার নেতৃত্বে একটি দল প্রিয়া সিনেমায় যায়। ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখে দলের সদস্যেরা মনে করছেন, প্রেক্ষাগৃহের একতলায় মোমোর দোকানে বৈদ্যুতিক কড়াইয়ের তেল অতিরিক্ত গরম হয়েই আগুন লেগেছিল। নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি পোড়া কড়াইটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওয়াসিম বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, মোমোর দোকান থেকেই আগুন লেগেছিল। কী ভাবে আগুন লাগল, তা পরীক্ষার পরে বলা সম্ভব।’’

দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘মোমোর দোকান থেকে আগুন লেগেছিল বলে আমার মনে হয় না।’’ রবিবার রাতে আগুন লাগার পরেই তিনি ‘প্রিয়া’য় গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ওদের কন্ট্রোল রুমে তার জট পাকিয়ে রয়েছে। সেই জায়গাটিও সন্দেহজনক। দমকলকর্তারা বলছেন, দোতলায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাই আগুনের উৎস সেখানেই হওয়া সম্ভব। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত পর্যন্ত প্রিয়ার অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

প্রিয়া সিনেমায় বেরোনোর পথ বলতে এক ফালি জায়গা মাত্র। রবিবার রাতে সেখানে নাইট শোয়ে জনা তিরিশ দর্শক ছিলেন। আগুন লাগার পরে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। ধোঁয়ায় অসুস্থ হন এক কর্মী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্তারা বলছিলেন, হাউসফুল শো হলে কিন্তু ব়ড় বিপদ ঘটতে পারত! শুধু আগুন নয়, সরু দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়েও বিপদ হতে পারত। সিনেমা হলের সঙ্গে প্রিয়ার একতলায় নাইটক্লাব, রেস্তরাঁও রয়েছে। সেগুলিও বন্ধ।

আরও পড়ুন: আগুন লাগলে ভরসা মেয়াদ উত্তীর্ণ যন্ত্রই

আপাতত প্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে দমকল। তদন্তের পরেই খোলার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘শহরের বাকি সিনেমা হলেও যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে।’’ প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এত দিন দমকলের টনক নড়েনি কেন? এর কোনও জবাব মেলেনি।

রবিবার রাতে মুখোমুখি অরিজিৎবাবু ও মেয়র। ছবি: শৌভিক দে

প্রিয়ার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘শো হাউসফুল থাকলেও সকলে নিরাপদ থাকতেন। ঠিক সময়ে বিপদঘণ্টি বেজেছে। দোতলার অফিসঘরে আগুন ধরার আগেই সবাই বেরিয়ে যেতে পেরেছেন।’’ অরিজিৎবাবুর দাবি, তাঁর কর্মচারীরাই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে হলের একতলার মোমোর দোকানের আগুন নিভিয়ে ফেলেন। কিন্তু জোরে হাওয়া দিচ্ছিল বলে দোকানের ঠিক উপরের অফিসঘর তত ক্ষণে জ্বলতে শুরু করেছে। বেরোনোর পথ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘৭০ বছরের পুরনো বাড়ি। তা-ও তিনটি বেরোনোর পথ আছে। একটি কিছুটা সরু।’’

প্রিয়ার অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে ১৯৯৭ সালের ১৩ জুন দিল্লির ‘উপহার’ সিনেমা হলের ঘটনা। ‘বর্ডার’ সিনেমার শো চলাকালীন আগুন লেগে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে। পদপিষ্ট হন শ’খানেক মানুষ। সেই ঘটনার পরে নানা নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি মানা হয় কি? দমকল ও পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, উপহার, স্টিফেন কোর্ট, আমরি— সব ঘটনার পরেই এক বার টনক নড়ে শীর্ষ মহলের। তার পরে ফের থিতিয়ে যায় সব কিছু।

ফরেন্সিক সূত্রের খবর, তেলের নিজস্ব একটি তাপমাত্রা সহনক্ষমতা থাকে। তার বেশি হলেই আগুন ধরে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। মোমোর দোকানের রান্নাঘর থেকে চিমনির মাধ্যমে বিদ্যুতের লাইনে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। চিমনিও পুড়ে গিয়েছে। বছর দুই আগে হো চি মিন সরণির একটি হোটেলেও এ ভাবেই আগুন লেগেছিল। তবে ওই মোমোর দোকানের কলকাতা বিভাগের প্রধান সুলগ্ন চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তেল অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন লাগেনি। চিমনি থেকে একটি বিদ্যুতের তার এসে গরম তেল ভর্তি কড়াইয়ে পড়ার ফলেই আগুন ধরে যায়। দোকানের কর্মীরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। সুলগ্নবাবু বলেন, ‘‘কী ভাবে কী হয়েছিল, তার বিশদ ব্যাখ্যা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাই দিতে পারবেন।’’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক দোকানমালিক বলেন, ‘‘আগুন লাগার পরে মোমোর দোকানের কর্মী ও স্থানীয় এক বাসিন্দা নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি।’’

কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE