Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধুলো মেখে অবহেলায় রক্তের ব্যাগ

রক্তের উপাদান ভাগ করার পর্যাপ্ত যন্ত্র না থাকায় নির্দিষ্ট উপাদান সংগ্রহ করতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন বহু রোগী। সরকারি পরিকাঠামোয় রাজ্যের সবচেয়ে বড় ব্লাড ব্যাঙ্কের এই হাল দেখে রীতিমতো বিরক্ত কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।

রক্ত নেওয়ার অপেক্ষায় রোগীর পরিজনেরা। ফাইল চিত্র

রক্ত নেওয়ার অপেক্ষায় রোগীর পরিজনেরা। ফাইল চিত্র

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

কোথাও মাটিতে ধুলোয় পড়ে রয়েছে রক্তের ব্যাগ। কোথাও সংগৃহীত রক্ত যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থাটুকুও হয়নি। রক্তের উপাদান ভাগ করার পর্যাপ্ত যন্ত্র না থাকায় নির্দিষ্ট উপাদান সংগ্রহ করতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন বহু রোগী। সরকারি পরিকাঠামোয় রাজ্যের সবচেয়ে বড় ব্লাড ব্যাঙ্কের এই হাল দেখে রীতিমতো বিরক্ত কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।

বৃহস্পতিবার লাইসেন্স নবীকরণের জন্য রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের প্রতিনিধিরা মানিকতলায় রাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিদর্শনে যান। সেখানকার পরিকাঠামো ও রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই পরিদর্শক দল প্রাথমিক ভাবে যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, তাতে উল্লেখ রয়েছে রক্ত সংরক্ষণের জন্য যে স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত, তার অনেক কিছুই কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে নেই। পরিকাঠামো নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হোল ব্লাড থেকে বিভিন্ন উপাদান ভেঙে নিলে এক ইউনিট রক্ত ব্যবহারের সুযোগ যেমন বেড়ে যায়, তেমনই রোগীর শরীরের পক্ষেও সেটা বেশি ভাল। কিন্তু রক্তের উপাদান ভাগ করার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে নেই বলেই উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। সেখানে বলে হয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরে রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল। এক ইউনিট রক্তে একাধিক ব্যক্তির চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কের অব্যবস্থার জেরে বহু ক্ষেত্রেই সেই সুবিধা হারাচ্ছেন রোগীরা।

শুক্রবার ফের কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিদর্শনে যান ওই প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারের তুলনায় এ দিন ব্লাড ব্যাঙ্ক কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল বলে তাঁরা জানিয়েছেন। যদিও তা সন্তোষজনক পর্যায়ে নয়। ওই দলের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘‘একাধিক সমস্যার কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে। পুরো রিপোর্ট তৈরি না হলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’’

কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ যাচ্ছিল স্বাস্থ্য দফতরে। বিভিন্ন রোগীর পরিজনেরা অভিযোগ তোলেন, বিকেল পাঁচটার পরে রক্তদাতা নিয়ে গেলেও ব্লাড ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, পর্যাপ্ত কর্মী নেই, তাই তারা রক্তের ব্যবস্থা করতে পারবে না। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জানানোর পরেও তারা পরদিন সকাল দশটার আগে কিছু হবে না বলে জানায়। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের এই ক্ষোভ ব্লা়ড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর হাল নিয়ে ওঠা প্রশ্ন জোরালো করল বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ।

বৃহস্পতিবার পরিদর্শনের সময়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা কুমারেশ হালদার উপস্থিত ছিলেন না। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে পরিদর্শকদের দেখা হয়। পরিকাঠামো নিয়ে দু’পক্ষে উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি হয় বলেও জানা গিয়েছে। কুমারেশবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পরিদর্শন চলছে। কিছু সমস্যা রয়েছে। খুব ব্যস্ত আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Bank Blood Preservation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE