Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দোকানটা আর নেই, মানতে পারছি না

বাগড়ি মার্কেটের সর্বগ্রাসী আগুনে আমার গিফটের দোকানটা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। সেটা যে আর সত্যিই নেই, সাত দিন পরেও সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না। কিছু অন্তত বেঁচে আছে কি না, পোড়া দোকানের মেঝেতে বসে তা আপ্রাণ খোঁজার চেষ্টা করেছি।

ফইজাউদ্দিন
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বাগড়ি মার্কেটের সর্বগ্রাসী আগুনে আমার গিফটের দোকানটা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। সেটা যে আর সত্যিই নেই, সাত দিন পরেও সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না। কিছু অন্তত বেঁচে আছে কি না, পোড়া দোকানের মেঝেতে বসে তা আপ্রাণ খোঁজার চেষ্টা করেছি। সামনেই এক বন্ধুর মেয়ের জন্মদিন ছিল। বন্ধু মেয়ের জন্য টেডি বিয়ার পছন্দ করে রেখেছিল। বলেছিল, জন্মদিনের আগের দিন কিনে নিয়ে যাবে। ওই টেডি বিয়ারটা খুঁজছিলাম। পেলাম না। পুজো আসছে বলে বেশি করে গিফট রাখতে শুরু করেছিলাম। সব কিছু গিলে খেল এই আগুন।

তবে দোকান পুড়ে গেলেও আমি কলুটোলার বাড়ি থেকে হেঁটেই রোজ যাচ্ছি বাগড়িতে। বাড়িতে থেকে বরং চিন্তা আরও বাড়বে। বাড়িতে বৌ আর ছোট দুই ছেলে আছে। ছেলেরা বলছে, ‘পাপা, সব ঠিক হো যায়েগা।’

কিন্তু আমি তো জানি, সব ঠিক হতে এখনও বহু সময়। গত সাত দিন নিয়ম করে সকালে চলে গিয়েছি বাগড়ি। আমার দোকানে ‘এফ’ গেট দিয়ে ঢুকতে হয়। আগুন লাগার রাতে খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ায় ভিতরে ঢুকতে পারিনি। দশ হাত দূর থেকে দেখে বুঝেছিলাম, কিছু হয়তো বাঁচানো গেল না। শুধু আমি নই। পড়শি দোকানদার হিতেশ মাহাতো, মহিউদ্দিন রহমান— সকলেরই তখন এক অবস্থা। কে কাকে সান্ত্বনা দেব? ওই রাতে তো তবু দোকানের কাছাকাছি যেতে পেরেছিলাম। তার পর থেকে পুরো জায়গা ঘিরে ফেলল দমকল আর পুলিশ। গত সাত দিন রোজ গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি ‘এফ’ গেটের মুখে।

আগুনে চরম ক্ষতি হল আমাদের কর্মচারীদেরও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় তো দোকানেই থাকি। বাড়ির লোকেদের থেকেও বেশি কথা হয় কর্মচারীদের সঙ্গে। শুধু কাজের কথা নয়, গল্প-আড্ডাও। পুজোয় ওদের বোনাস হয়। এ বার সেই টাকা কোথা থেকে দেব? ওরা অবশ্য বলছে, এ সব নিয়ে চিন্তা না করতে। কিন্তু এত দিন কোথায় কাজ করবে ওরা? চলবে কী করে?

গত এক সপ্তাহ রাতে ঘুমোতে পারিনি। তবে এত ক্ষতির মধ্যেও যখন দেখছি যাঁদের দোকান বেঁচে গিয়েছে, তাঁরা মুটেদের দিয়ে জিনিস বার করছেন, তখন ভাল লাগছে। বি ব্লকে বেশ কিছু দোকান আগুনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে। ওই ব্লকের দোতলায় আমার এক বন্ধুর গিফটের দোকান। ও আমাকে বলেছে, যে কোনও দরকারে পাশে আছে। এখন ওরাই তো ভরসা।

গত বৃহস্পতিবার অবশেষে আগুন পুরো নিভল। পুরসভা, পুলিশ— সবাইকে বলেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাগড়িকে ছন্দে ফিরিয়ে দিন। যে সব ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তাঁদের দোকান দ্রুত চালু করা হোক। আর যে এলাকার সব পুড়ে গিয়েছে, সেখানে ফরেন্সিক-সহ সব পরীক্ষা দ্রুত শেষ হোক। তার পরে জানানো হোক, এই বাজারে আর বসতে পারব কি না। যদি পারি, কত দিন পরে? দোকানই তো ছিল আমার দ্বিতীয় বাড়ি!

(বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bagri Market Fire Kolkata Fire Shop Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE