Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আঁধারে বাল্ব বসিয়ে কাজ হাসিল চোরের

স্বামী মারা যাওয়ার পরে একাই ওই বাড়িতে থাকেন শেফালিদেবী। সামনের মাসে তাঁর মেয়ের প্রসবের দিন পড়েছে। নাতি বা নাতনির মুখ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে হবু দিদিমা।

চোরের কীর্তিতে বিস্মিত পুলিশও

চোরের কীর্তিতে বিস্মিত পুলিশও

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২৭
Share: Save:

টিমটিমে অন্ধকার ঘরে কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। তবু কুশলী ‘চোর’কে ঠেকায় কার সাধ্যি!

নরেন্দ্রপুরের পূর্ব আদর্শনগরে একা প্রৌঢ়া শেফালি সর্দারের ঘরে চুরির পরে তাই দেখা গেল, চোর সেখানে ঝকঝকে আলো বসিয়ে গিয়েছে! চুরির জন্য অবশ্য বাল্বের পিছনে খরচ সে করেনি। ওই বাড়িরই শৌচাগার থেকে জোরালো আলোটি খুলে এনে শোয়ার ঘরে বসিয়ে যত্ন করে কাজ সেরেছে!

স্বামী মারা যাওয়ার পরে একাই ওই বাড়িতে থাকেন শেফালিদেবী। সামনের মাসে তাঁর মেয়ের প্রসবের দিন পড়েছে। নাতি বা নাতনির মুখ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে হবু দিদিমা। তাঁর দাবি, মেয়ের চিকিৎসার ৪৫ হাজার টাকাও মায়ের জিম্মায় গচ্ছিত ছিল। শুক্রবার সোনারপুরের উত্তরায়ণপল্লিতে সেই মেয়েকেই দেখতে গিয়েছিলেন মা। তখনই এত বড় অঘটন! শনিবার সকালে বাড়ি ফিরে শেফালি দেখেন, দরজা ভাঙা। ঘর লন্ডভন্ড!

পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়ের চিকিৎসার জন্য রাখা টাকা চুরি গিয়েছে বলে শেফালিদেবী নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে রীতিমতো ঠান্ডা মাথায়, পরিপাটি করে কাজটা সেরেছে চোর। রান্নাঘরে ঢুকে রেঁধেবেড়ে খাওয়াদাওয়াও সারে সে। বাড়ি ঢুকে গৃহকর্ত্রী দেখেন, হাঁড়িতে বাড়তি ভাতও পড়ে রয়েছে।

ইদানীং শহরের অনেক বাড়িতেই সিসি ক্যামেরার নজরদারি রয়েছে। তাতে চোরেদের কাজটা আগের থেকে এখন ঢের কঠিন। তা ছাড়া, আজকাল ইন্টারনেটে কৌশলে জালিয়াতির প্রবণতাই কিছুটা বেশি। কৌশলে যে কোনও তালা খুলে বা বাড়িতে ঢুকে বুদ্ধি খাটিয়ে, গুছিয়ে চুরির কেরামতি আগের থেকে কমই দেখা যায় বলে

মনে করে পুলিশ। তবু সোনারপুরে এ বার অতীতের ঝানু চোরের ছাপ দেখছেন পুলিশকর্তারা। লালবাজারের চুরি দমন শাখার এক পোড় খাওয়া গোয়েন্দা অফিসারের মনে পড়ছে, কিছু কিছু চোর ছিল, যারা মামুলি চুলের কাঁটা বা খুন্তি-সাঁড়াশির ‘সদ্ব্যবহার’ করে নিমেষে যে কোনও তালার প্রতিরোধ হটাতে পারত। বড়সড় সিন্দুক ভাঙার ‘অপারেশন’-এ পুলিশকে দরকারে সাহায্যও করত সেই সব চোর। ফুলবাগানের এমনই এক চোর যেমন, বাচ্চাদের ছুটির পরে মায়েরা তাদের আনতে বেরিয়ে গেলে সেই বাড়িতে হানা দিত। পরনে সাফারি সুট, হাতে ফোলিয়ো ব্যাগ। যেন কিছু বিক্রি করতে আবাসনে ঢুকছে। দক্ষতার সঙ্গে তালা খুলে অত্যন্ত দ্রুত চুরির ‘অপারেশন’ সারত সে। এ যাত্রায় নরেন্দ্রপুরে চোরের কাজের মধ্যেও সেই বুদ্ধির ছাপ দেখছে পুলিশ। কয়েকটি সূত্র কাজে লাগিয়ে এই চুরির কিনারায় তক্কে তক্কে রয়েছে পুলিশ। তবে এ ক্ষেত্রে চোর এক জন ছিল না একাধিক, তা অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thief Narendrapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE