Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘গুনিনের’ ফোনেই ধরা পড়ল চোর

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে গুনিন বলে চলেছেন কোথা থেকে, কী ভাবে চুরি যাওয়া গয়না-টাকা মিলবে। আর সেই কথা মতোই কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়ির নীচে সাইকেলের প্লাস্টিক হ্যান্ডেলের ভিতরে মিলল চুরি যাওয়া গয়না। কিছু জিনিস মিলল ফ্ল্যাটেরই একটি ঘরের বিছানার তলা থেকে!

উদ্ধার হওয়া গয়না। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া গয়না। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে গুনিন বলে চলেছেন কোথা থেকে, কী ভাবে চুরি যাওয়া গয়না-টাকা মিলবে। আর সেই কথা মতোই কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়ির নীচে সাইকেলের প্লাস্টিক হ্যান্ডেলের ভিতরে মিলল চুরি যাওয়া গয়না। কিছু জিনিস মিলল ফ্ল্যাটেরই একটি ঘরের বিছানার তলা থেকে! এ ভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একের পর এক চুরি যাওয়া টাকা আর গয়না ফেরত আসতে শুরু করল মালিকের কাছে। রবিবার সকালে এমনই নাটকীয় ঘটনা ঘটল যাদবপুরের ২৫/৪ কালীবাড়ি লেনের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কৌশিক ভট্টাচার্যের ফ্ল্যাটে। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন ওই বাড়ির দীর্ঘদিনের পরিচারিকা দীপ্তি মণ্ডল ও গাড়িচালক জয়রামকুমার রাউথ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই পরিচারিকা এবং গাড়িচালক ষড়যন্ত্র করে ফাঁকা ফ্ল্যাট থেকে টাকা-গয়না চুরি করেছিলেন। তবে তাঁদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, তা জানতে দফায় দফায় দু’জনকে জেরা চলছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৩ ডিসেম্বর এক সপ্তাহের জন্য মাকে দিদির বাড়ি পাঠিয়ে, স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী কৌশিকবাবু। শনিবার বাড়ি ঢুকতে গিয়েই চমকে ওঠে ভট্টাচার্য পরিবার। বাড়ির দরজার তালা খুলতে গিয়ে দেখেন, সেটি ভাঙা। বাড়িতে ঢুকে দেখেন, সব ক’টি ঘরের বিছানা লণ্ডভণ্ড, আলমারির দরজা ভাঙা। মেঝেতে পড়ে রয়েছে জামাকাপড় থেকে শুরু করে ঘড়ি, দামি জিনিসপত্র। শুধু নেই লকারের ভিতরে থাকা কয়েক লক্ষ মূল্যের গয়না, নগদ টাকা। শনিবার রাতে বাড়ি ঢুকে এই ছবি দেখে স্বভাবতই আঁতকে ওঠেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা কৌশিক ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা। দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করে খবর দেন তাঁরা। দায়ের করেন চুরির অভিযোগও।

কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নাটকীয় ভাবে ভট্টাচার্য পরিবারের কাছে ফেরত আসে চুরি যাওয়া টাকার বেশির ভাগ অংশ এবং গয়নাগাঁটিও! কী করে?

পুলিশ জানায়, থানায় খবর গিয়েছে শুনেই ওই বাড়ির এক পরিচারিকা বলে ওঠেন, তাঁদের এলাকায় এক গুনিন রয়েছেন। তাঁকে ডাকলে তিনি বলে দিতে পারবেন কোথায় চোর চুরি করা জিনিস রেখেছে। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দীপ্তি ও ওঁর দিদি আমাদের বাড়িতে কাজ করছেন। দীপ্তি সারা দিনের জন্য থাকেন। তাই দীপ্তির কথা শুনে গুনিনের মোবাইল নম্বর নিয়ে আমি ফোন করি। ফোনেই সব শুনে গুনিন বলতে শুরু করেন, সব জিনিস মিলে যাবে একটু পরেই। আর সব মিলে যেতেই আমার সন্দেহ গাঢ় হয়। তাই পুলিশ এলে সব কথা তাঁদের বলি।’’ এর পরে পুলিশ এসে ওই পরিচারিকাকে দফায় দফায় জেরা করে জানতে পারে, চুরিতে হাত ছিল কৌশিকবাবুর গাড়িচালক জয়রামের।

এ দিকে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, গাড়ির চালককে সঙ্গে নিয়ে পরিচারিকা চুরি করেছিলেন। কিন্তু পুলিশে খবর যেতেই ভয় পেয়ে যান ওই পরিচারিকা। তাই জিনিসপত্র ফেরত দেওয়ার কথা মাথায় আসে তাঁর। কী করে ফেরত দেওয়া যাবে, তা বুঝতে না পেরে গুনিনের গল্প ফেঁদে জিনিস ফেরত দিতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যে সব ধরে ফেলবে, তা ভাবতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stolen Theft Exorciser Ornaments
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE