Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কোলে ঘুমন্ত শিশু, রক্ষা কোনও রকমে

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার রাত সওয়া দুটো নাগাদ বাগড়ি মার্কেটের ‘সি’ ব্লকের সামনে ফুটপাতের ডালা থেকে আগুন বাজারের বিভিন্ন তলে ছড়িয়ে পড়ে। ‘সি’ ব্লকের ওই অংশ থেকে মেহফুজদের ৭০ নম্বর ক্যানিং স্ট্রিটের বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়

আগুন থেকে বাঁচতে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছেন মেহফুজের বাড়ির লোকেরা। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আগুন থেকে বাঁচতে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছেন মেহফুজের বাড়ির লোকেরা। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

দাউদাউ করে জ্বলছে বাগড়ি মার্কেট। বিপদ বুঝে তিনতলার চিলেকোঠা থেকে মা, স্ত্রী, বোন ও চার কোলের শিশুকে নিয়ে প্রাণে বাঁচলেন পাশের বাড়ির বাসিন্দা মেহফুজ ইলাহি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার রাত সওয়া দুটো নাগাদ বাগড়ি মার্কেটের ‘সি’ ব্লকের সামনে ফুটপাতের ডালা থেকে আগুন বাজারের বিভিন্ন তলে ছড়িয়ে পড়ে। ‘সি’ ব্লকের ওই অংশ থেকে মেহফুজদের ৭০ নম্বর ক্যানিং স্ট্রিটের বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। বস্তুত, দু’টি বাড়ির মধ্যে বাতাসও গলার জায়গা নেই। রবিবার মেহফুজদের ভাড়া বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, খাড়া সিঁড়ি উঠে গিয়েছে দোতলায়। সেখানে গুদাম ঘরে ঠাসা বিভিন্ন রাসায়নিক। পুরনো আমলের বাড়ির প্রতিটি তলে একটি ঘর রয়েছে, যেগুলি আবার দোকানঘর হিসেবে ভাড়া দেওয়া। কোথাও কোনও অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র চোখে পড়েনি। ছাদেও গুদামের মধ্যে একাধিক বাক্স ভর্তি করে লাইটার এবং লাইটারের গ্যাস মজুত করা। দুপুরে হাতে হাত লাগিয়ে পুলিশ যখন রাসায়নিক ও গ্যাস লাইটার সরাচ্ছে, তখন লাগোয়া বাগড়ি মার্কেটের বাড়ি থেকে আগুনের গনগনে তাপ ধেয়ে যাচ্ছে মেহফুজদের বাড়ির চিলেকোঠার দিকে। গ্যাস লাইটার, রাসায়নিক পদার্থ মজুতের বহর দেখে কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘দ্রুত এই সব জিনিস সরাতে না পারলে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’

এই বিপদ আঁচ করেই পরিবার নিয়ে উল্টো দিকের মেহতা বিল্ডিংয়ের একতলায় একটি দোকানের দাওয়ায় আশ্রয় নেন মেহফুজ। তাঁর মা রুকসানা পরভিন বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, কেউ হয়তো টিনের শেডে দুমদাম করে শব্দ করছে। কিন্তু, সেই ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। আগুন লেগেছে জানার পর থেকে নাতি-নাতনিদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরার কথা বলছিলাম। কিন্তু কেউ শুনলে তো! সকলে শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, আগুন এ দিকে আসবে না। ভোরের দিকে আমার আশঙ্কাই সত্যি হল।’’

মেহফুজের স্ত্রী শাবানা জানান, কালো ধোঁয়া ঘরের দিকে ধেয়ে আসতে দেখে আর কেউ ঝুঁকি নেননি। অন্ধকার সিঁড়ির মধ্যেই চার কোলের সন্তানকে নিয়ে কোনও রকমে নেমে আসেন তিনি। শাবানার কথায়, ‘‘সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে আসছিল। ঘুমন্ত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে যে কী ভাবে নেমেছি, আমিই জানি।’’

আরও পড়ুন: খাঁচা খুলে দেওয়ায় বেঁচে গেল ময়না

এ দিন দুপুরে শাবানা যখন প্রাণে বাঁচার অভিজ্ঞতা বলছেন, তখন ছ’বছরের মেহবুব, তার ভাই মেহমুদ (৫) ও বোন মাসুম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। কোলে ছটফট করছে ছোট মেয়ে আয়াত। রুকসানা বলেন, ‘‘সকাল থেকে নাতি-নাতনিরা কিছু খায়নি। দুধ যে ফুটিয়ে খাওয়াব,

তারও উপায় নেই।’’ বৃদ্ধার আর্তি, বাড়িটা আগুনের হাত থেকে বেঁচে যাবে তো? বাড়িটা অন্তত বাঁচিয়ে দিন।’’ রুকসানা যখন এ কথা বলছেন, তখন বাইরে মেহফুজদের বাড়ি অক্ষত রাখতে আগুনের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন দমকলকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE