Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Bengali News

‘সার্বিক পঙ্গুত্বে আক্রান্ত মোদীর সরকার’ কলকাতায় এসে মোদীকে তীব্র আক্রমণ তারুরের

কলকাতায় শনিবার বণিক সভার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মোদী সরকারের শিল্পনীতি এবং অর্থনীতিকে তীব্র আক্রমণ করলেন তিরুঅনন্তপূরমের কংগ্রেস সাংসদ।

কলকাতায় শনিবার বণিক সভার অনুষ্ঠানে মোদীকে ফের তীব্র আক্রমণ করলেন শশী তারুর।—নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় শনিবার বণিক সভার অনুষ্ঠানে মোদীকে ফের তীব্র আক্রমণ করলেন শশী তারুর।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ২১:৪৩
Share: Save:

মোদীকে ফের তীব্র আক্রমণে শশী তারুর। কলকাতায় শনিবার বণিক সভার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মোদী সরকারের শিল্পনীতি এবং অর্থনীতিকে তীব্র আক্রমণ করলেন তিরুঅনন্তপূরমের কংগ্রেস সাংসদ। ‘‘ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে এঁরা নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ আনতেন। এঁদের জমানা তো সার্বিক পঙ্গুত্বের,’’—নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে এ দিন এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও ভাল কিছু করছে না বলে অনুষ্ঠানের ফাঁকে মন্তব্য করেছেন তারুর।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব বিজনেস অ্যান্ড ইনডাস্ট্রিজ (আইসিবিআই)-এর তরফে কলকাতায় একটি আলোচনাচক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শশী তারুরকে। সেখানে তারুর অভিযোগ করেন যে, বিজেপি উগ্র জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করছে। তাঁর কথায়, ‘‘শাসক দল আর সরকারকে সমার্থক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। আর তার পরে সমার্থক করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে সরকার আর দেশকে। অর্থাৎ কেউ শাসক দলের বিরোধী হলেই তিনি দেশবিরোধী— এই ভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’’ এই প্রবণতাকে অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন তারুর।

অর্থনীতির প্রশ্নেও মোদী সরকারকে এ দিন তীব্র আক্রমণ করেন শশী। মোদী জমানায় ‘চূড়ান্ত অর্থনৈতিক অব্যবস্থা’ চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। যে সব অর্থনৈতিক পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারত, সেই পদক্ষেপগুলোও অব্যবস্থার কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে শশী কটাক্ষ করেন। তাঁর মতে, জিএসটি একটি অত্যন্ত ভাল পদক্ষেপ, কিন্তু এত খারাপ ভাবে জিএসটি প্রণয়ন করা হয়েছে যে, তাতে লাভের বদলে ক্ষতিই হয়েছে।

আরও পড়ুন: পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ডেরেকের নেতৃত্বে রবিবার অসম যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের ক্ষতি কী ভাবে হয়েছে, তা নিয়েও নিজের মতামত বিশদে জানান শশী। কমিউনিস্টদের দাপট এবং নকশাল আন্দোলনের বাড়বাড়ন্ত এ রাজ্যে এক সময়ে শিল্পের খুব ক্ষতি করেছিল বলে শশীর মত। দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলি তাঁদের সদর দফতর একে একে সরিয়ে নিয়েছিল কলকাতা থেকে। জ্যোতি বসুর সময়ে রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরলেও তিনি অত্যন্ত কট্টরবাদী ছিলেন এবং জ্যোতি বসুর ওই ভাবমূর্তি শিল্পের সহায়ক ছিল না বলে শশীর মত। তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিষয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সপ্রশংস। বুদ্ধদেবই প্রথম কমিউনিস্ট নেতা, যাঁকে তিনি বিশ্বায়নের পক্ষে সওয়াল করতে শুনেছিলেন— মন্তব্য শশী তারুরের।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকাল প্রসঙ্গে তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদের প্রতিক্রিয়া নরমে-গরমে। মমতা তাঁর ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করেছিলেন সিঙ্গুর আন্দোলনের মতো বিষয়ের মধ্যে দিয়ে, যা মোটেই শিল্পবান্ধব ছিল না, ইঙ্গিত শশীর। ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি অবশ্য তৈরি করেছেন বলে শশী স্বীকার করেছেন। কিন্তু আলোচনাচক্র শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ে শশীর মন্তব্য— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় পশ্চিমবঙ্গে যা চলছে, তা মোটেই ভাল কিছু নয়।

আরও পড়ুন: এক্সক্লুসিভ: অসমের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে মমতার উস্কানিতেই, বললেন অনুপ চেতিয়া

ইউপিএ জমানার তথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রশংসার সুযোগ কংগ্রেস সাংসদ স্বাভাবিক ভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি। বেশ কিছু ইস্যুতে ইউপিএ সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছিল বা সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করেছিল। ওই সিন্ধান্তহীনতার পরিস্থিতিকে ‘নীতিপঙ্গুত্ব’ আখ্যা দিতেন তৎকালীন বিরোধীরা। শশী তারুর এ দিন বলেন, ইউপিএ সরকার যদি নীতিপঙ্গুত্বের শিকার হয়ে থাকে, তা হলে দেশের বর্তমান সরকার সার্বিক পঙ্গুত্বে আক্রান্ত। তাঁর ব্যাখ্যা— কোনও মন্ত্রী বা মন্ত্রক এখন স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সব ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠাতে হয়, সব সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে হয়। যাবতীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, এমনটা দেশে আগে কখনও দেখা যায়নি— দাবি তারুরের।

কলকাতায় এ দিন দলীয় কর্মসূচিও ছিল তারুরের। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য কংগ্রেসের ইস্তাহার তৈরি হবে জনসাধারণের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। তাই জনসাধারণের দাবিদাওয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে দেশের নানা প্রান্তে ছুটতে শুরু করেছেন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারুর এ দিন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে নিয়ে এ দিন তেমনই একটি আলোচনায় যোগ দেন শশী। ইস্তাহার নিয়ে আলোচনার পরে শশী তারুর এ দিন অল ইন্ডিয়া প্রফেশনালস কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

সে সব কর্মসূচি সেরেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন বণিক সভার অনুষ্ঠানে। সেই মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ হেনে কলকাতা ছাড়েন শশী তারুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE