এই সেই লাখপতি পরিচারিকা। নিজস্ব চিত্র।
গৃহকর্তা চায়ের সঙ্গে কী খেতে ভালবাসেন? ঠাকুমা কখন স্নান করবেন? বৌদি কখন বাজারে যাবেন? সব দিকেই তাঁর খেয়াল।
পরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই পরিবারের এক জন হয়ে উঠতেন গীতা হালদার। এ যেন তপন সিংহের ‘গল্প হলেও সত্যি’র সেই ধনঞ্জয়। সেলুলয়েডের রবি ঘোষকেও যেন হার মানানোর ক্ষমতা ছিল তাঁর।
কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতারের পর গীতার আসল রূপ ধরা পড়ল। বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে ইতিমধ্যেই ২৫ লক্ষ টাকার গয়নার মালকিন হয়েছেন গীতা। তবে সবটাই হাত সাফাই করে। এমনকি, তাঁর একটি গাড়িও রয়েছে। পুলিশের দাবি, গীতাকে ‘ডাকাত রানি’ বললেও কম হবে।কিন্তু, দেখে বোঝার উপায় নেই গীতার এত ‘গুণ’!
আরও পড়ুন: গতি কমলেও থমকাবে না: পুলিশি আশ্বাস
পুলিশ সূত্রে খবর, বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা স্নেহাংশু ভট্টাচার্যের বাড়িতে সম্প্রতি চুরি হয়। বাড়ি থেকে বেশ কিছু গয়নাগাটি, টাকা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যায়। স্নেহাংশুবাবু এর পর থানায় অভিযোগ জানান। তবে তিনি নির্দিষ্ট ভাবে কারও নামে অভিযোগ করেননি। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই বাড়ির পরিচারিকা গীতার কথা জানতে পারে। জানা যায়, ওই পরিবারে বেশ ভাল মতোই নিজের ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিলেন গীতা। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিশেষ নজরছিল তাঁর। ভালমন্দ উপদেশ দিতেন তাঁদের। গীতা সম্পর্কে ওই পরিবারের কোনও খারাপ ধারণা ছিল না।
যদিও পুলিশের সন্দেহের তালিকার প্রথম দিকেই ছিলেন ওই পরিচারিকা। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে গীতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। গীতা প্রথমে চুরির ঘটনা অস্বীকার করেন। কিন্তু, তক্কেতক্কে ছিল পুলিশ। গীতার বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করে পর্ণশ্রী থানা। জানা যায়, এর আগেও ওই পরিচারিকার নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল বিভিন্ন থানায়। যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না মেলায় প্রতি বারই ছাড়াও পেয়ে যান।
এ বার খুব সতর্ক হয়ে বেহালার রায় বাহাদুর রোডে গীতার বাড়িতে হঠাৎ হানা দেন পর্ণশ্রী থানার মহিলা পুলিশ অফিসাররা। এক দিকে জেরা, অন্য দিকে শুরু হয় তল্লাশি। সেই সময়েই ঘর থেকে এক এক করে ৯৬টি সোনার গয়না পাওয়া যায়। উদ্ধার হয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি মেডেলও। মিলেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং মূল্যবান সামগ্রী। উদ্ধার হওয়া গয়নার আনুমানিক মূল্য ২৫ লক্ষ টাকা। পুলিশের অনুমান, গীতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া মোট জিনিসপত্রের মূল্য আরও অনেক বেশি। ওই পরিচারিকা অন্য কোনও চক্রের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের কাজ দিলে শান্তি থাকবে, না-হলে নয়’, সাফ কথা সিন্ডিকেটের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy