Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

উড়ান ধরতে পারব তো? দু’দিন আগেই বিমানবন্দরে 

পোর্ট ব্লেয়ারের একটি নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেন আলতাফ। লকডাউনের আগে ছুটিতে এসে আটকে পড়েছিলেন।

বিমানবন্দরে আলতাফ মোল্লা। নিজস্ব চিত্র

বিমানবন্দরে আলতাফ মোল্লা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০১:০৬
Share: Save:

খুব প্রয়োজন ছাড়া এই মুহূর্তে কেউই বিমানে যাতায়াত করছেন না। যাঁরা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিয়মিত উড়ানে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত নন।

লকডাউনের পরের দিনে ঠিক মতো গাড়ি পাবেন কি না, সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে না-পারলে যদি উড়ান ধরতে না পারেন— এই ভয় চেপে বসছে প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির এই মানুষগুলোর মনে। সেই আতঙ্ক থেকেই দু’দিন আগে বিমানবন্দরে পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা!

যেমনটা পৌঁছেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির বাসিন্দা আলতাফ মোল্লা। তাঁর উড়ান রয়েছে আজ, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে আটটায়। সেই উড়ান ধরতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে পৌঁছে যান তিনি।

পোর্ট ব্লেয়ারের একটি নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেন আলতাফ। লকডাউনের আগে ছুটিতে এসে আটকে পড়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার তো লকডাউন নেই। উড়ানও চলবে। সে দিন সকালে বিমানবন্দরে এলেন না কেন?

বুধবার, লকডাউনের দিন টার্মিনালের বাইরে বসে ওই যুবক বললেন, ‘‘লকডাউনের পরের দিন ভোরে যদি কোনও গাড়ি না পাই! তাই এক দিন আগেই চলে এসেছি। খাবার নিয়ে এসেছি সঙ্গে। সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় শৌচাগার রয়েছে, অসুবিধা হবে না।’’

কিন্তু এতে উভয়সঙ্কটে পড়েছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা। এ দিন অনেক যাত্রীকে দেখা গিয়েছে, বিমানবন্দরের ভিতরে ডরমিটরি বা ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। কিন্তু যাঁদের সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাচ্ছেন বিমানবন্দরের বাইরে স্রেফ বসে থেকে। অফিসারদের আশঙ্কা, এতটা সময় শুধু বসে কাটিয়ে দেওয়া যে কোনও যাত্রী যখন-তখন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তখন দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না তাঁরা। ওই যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। আবার, বিমানবন্দরের বাইরে বসে থাকা থেকেও তাঁদের আটকানো যাচ্ছে না।

ঠিক যেমন ঘটেছিল গত শুক্রবার। ওই দিন রাতে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় এসে আটকে পড়েছিলেন লালগড়ের বাসিন্দা রঞ্জন সরকার। শনিবার লকডাউন থাকায় সারা দিন বসে ছিলেন বিমানবন্দরের বাইরে।

সন্ধ্যায় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন রঞ্জন। দেখা যায়, গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। সঙ্গে শুকনো কাশি আর সারা শরীরে ব্যথা। তটস্থ হয়ে পড়েন সবাই। সে দিন লকডাউনে উড়ান না-চলায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকেরাও ছিলেন না। শেষমেশ বিমানবন্দরে রাতের ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক একটু আগে এসে পড়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অফিসারেরা। দেখা যায়, রঞ্জনের জ্বর ১০৪-এর উপরে উঠে গিয়েছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওই যুবকের কোভিড পরীক্ষা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে মঙ্গলবার তাঁকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

যে জায়গায় গত শনিবার রঞ্জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, সংক্রমণের ভয়ে বুধবার সকাল পর্যন্ত ঘিরে রাখা হয়েছিল সেই জায়গা। আলাদা করে এলাকাটি জীবাণুমুক্তও করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Kolkata Airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE