Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গ্রুপে বার্তা, কিশোরকে রক্ত দিলেন বাসযাত্রীরা

রাঁচীর বাসিন্দা রাজেশ কুমার দিন কয়েক আগে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেকে নিউ টাউনের এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি করান। মঙ্গলবার সকালে আচমকা তাঁর বেশ কয়েক বোতল রক্তের প্রয়োজন হয়।

সাহায্য করার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপে। নিজস্ব চিত্র

সাহায্য করার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপে। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

একই রুটের বাতানুকূল সরকারি বাসে নিত্যদিন যাতায়াত করেন প্রায় আড়াইশো যাত্রী। সেই সুবাদেই তাঁদের কয়েক জন নিজেদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। নিছক হালকা মেজাজের সেই গ্রুপের সদস্যেরা এ বার এক ক্যানসার আক্রান্ত কিশোরের পাশে দাঁড়ালেন।

রাঁচীর বাসিন্দা রাজেশ কুমার দিন কয়েক আগে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেকে নিউ টাউনের এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি করান। মঙ্গলবার সকালে আচমকা তাঁর বেশ কয়েক বোতল রক্তের প্রয়োজন হয়। এ দিকে ভিন্ রাজ্যে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসা রাজেশ তখন কী করবেন, কাকে বলবেন সেই প্রয়োজনের কথা, বুঝতে পারছিলেন না। অবশেষে এক আত্মীয়কে বিষয়টি জানান তিনি। ওই আত্মীয় আবার গল্ফ গ্রিন থেকে বিমানবন্দরের মধ্যে যাতায়াতকারী এসি-৪৩ বাসের যাত্রী। তিনিই মঙ্গলবার সকালে বাসযাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নির্দিষ্ট রক্তের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে বার্তা দেন। সেখানে দেওয়া ছিল যোগাযোগের নম্বরও।

সকাল ৯টা ১০ মিনিটে গল্ফ গ্রিন ছেড়ে যাওয়া বাস তখন সবে সেক্টর পাঁচে ঢুকেছে। তার মধ্যেই ওই বার্তা নজরে পড়ে যাত্রীদের কয়েক জনের। তাঁরা তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করে ওই বার্তার কথা সকলকে জানান। এর পরেই ওই বাসের যাত্রী গল্ফ গ্রিনের বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এগিয়ে আসেন। তিনিই তাঁর আরও দুই সহকর্মী অভিষেক ভট্টাচার্য এবং বিনয় কুমারকে নিয়ে পৌঁছে যান নিউ টাউনের ওই হাসপাতালে। ও-পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন ছিল কিশোরের। তাই ওই গ্রুপের তিন দাতা জয়দীপ, অভিষেক এবং বিনয় রক্ত দেন ওই কিশোরের জন্য। সন্ধ্যায় রক্ত দেওয়া শুরু হয় ওই কিশোরকে। এর পরেই কিশোরের অবস্থার খানিকটা উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পরিবার সূত্রের জানা গিয়েছে, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আনন্দ গর্গের রক্তের ক্যানসার ধরা পড়েছে দিন কয়েক আগে। তাঁর বাবা রাজেশ রাঁচীর একটি বেসরকারি সংস্থার সাধারণ কর্মী। একমাত্র সন্তানের এমন অসুখের কথা জানার পর থেকে দিনরাত এক করে লড়াই চালাচ্ছেন ছেলেকে সুস্থ করার। এরই মধ্যে এমন জরুরি প্রয়োজন এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত এক শহরে তা মেটাতে তিন অচেনা যুবকের এগিয়ে আসায় আপ্লুত রাজেশ। বলছেন, ‘‘ছেলের চিকিৎসায় এভাবেই পাশে থাকুক কলকাতা। তা হলে নিশ্চয়ই ছেলেটা সুস্থ হয়ে উঠবে।’’

জয়দীপদের কথায়, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাওয়ার পরে মনে হল আমার নিজেরই তো ওই গ্রুপের রক্ত। আর হাসপাতালও বেশি দূরে নয়। তাই স্বাভাবিক কাজ মনে করেই করেছি। আমার আরও দুই সহকর্মীর রক্তেরও একই গ্রুপ। তাঁরাও বলা মাত্র রাজি হয়ে গেলেন।’’

ওই বাসের নিত্যযাত্রীদের অন্যতম সৌমিত্র বসু, সুস্নাত দাস বলেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আড্ডা, ভিডিয়ো কিংবা ঠাট্টা ভাগ করে নেওয়া এই বাসযাত্রীদের মধ্যে অদ্ভুত আন্তরিকতা আছে। কারও বিপদের কথা শুনলেই সকলে এগিয়ে আসেন। ভবিষ্যতেও ওই কিশোরের পাশে থাকতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Blood Donation Whats App Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE