লালবাজারের সামনে পড়ে রয়েছে গাছ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
দোল পেরোতেই কালবৈশাখীর তাণ্ডব! শুক্রবার ভরসন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টির দাপটে শহরে উপড়ে গেল ১২টি গাছ, আটকে পড়ল ট্রেন। হাওয়ার দাপটে সমস্যা হল বিমান ওঠা-নামায়। ব্যাহত হল অন্যান্য যান চলাচলও। যার জেরে নাকাল হলেন অফিস ফেরত বহু মানুষ। আচমকা ঝড়বৃষ্টিতে জল জমে গেল নবান্নতেও। তবে খাস কলকাতায় কোনও হতাহতের খবর নেই। বৃহস্পতিবার দোলের দিন আবহাওয়া ছিল শুকনো খটখটে। শুক্রবার সকাল থেকে চড়া রোদ, গরমেই ভুগেছেন নগরবাসী। কিন্তু সেই আবহাওয়া বদলে দিল সুদূর ঝাড়খণ্ড থেকে ভেসে আসা কালো মেঘ। চরম ভোগান্তির মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি পেল শহর।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কলকাতায় এ দিন ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘তাপমাত্রা বাড়ায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস গরম হয়ে বায়ুস্তরের উপরে উঠেছে এবং দ্রুত ঠান্ডা হয়ে উল্লম্ব মেঘ তৈরি হয়েছে। ঝাড়খণ্ড থেকে সেই উল্লম্ব মেঘ ভেসে এসেছে কলকাতার দিকে।’’
রেল জানিয়েছে, ঝড়বৃষ্টির দাপটে হাওড়ার ডোমজুড়-আমতা এবং ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখা ও শিয়ালদহ ডিভিশনের মেন ও দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বেলঘরিয়ায় ওভারহেড তারে লাইনের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে এসে পড়ে। তাই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। চক্ররেলের বাগবাজার স্টেশনের কাছেও একই কারণে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করতে হয়। শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় ওভারহেড ‘ট্রিপ’ করে গিয়েছিল। তবে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বজবজ শাখার পরিষেবা ফের চালু হয়। এই পরিস্থিতিতে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় জমে যায়। ঝড়বৃষ্টি কমলে অনেকে বাস বা ট্যাক্সি ধরে ফেরার চেষ্টা করেছেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বেলঘরিয়ায় ওভারহেড থেকে গাছের ডালপালা সরিয়ে ফের ট্রেন চালু হয়। কিন্তু তার পরেও লোকাল ট্রেনে ঠাসাঠাসি ভিড় হয়েছে।
পাতালেও এ দিন নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা। সরকারি অফিস ছুটির কারণে অন্য দিনের তুলনায় কম মেট্রো চালানো হয়েছে। কিন্তু আকাশে কালো মেঘ জমতে দেখে অনেকেই পাতালের রেল ধরার জন্য মেট্রো স্টেশনে ঢোকেন। ঝড়বৃষ্টি শুরু হতেই সেই সংখ্যা আরও বাড়ে। মেট্রোর সংখ্যা কম থাকায় ঠাসাঠাসি ভিড় হয়ে যায়। রেলের খবর, এ দিন হাওড়া শাখাতেও অন্যান্য দিনের তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কম ছিল। ফলে যাত্রী-ভোগান্তি বাড়ে ঝড়বৃষ্টির সময়ে।
লালবাজার জানিয়েছে, ঝড়ের দাপটে এ দিন শহরে একাধিক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের কাছে একটি গাছ উপড়ে মুচিপাড়া থানার অতিরিক্ত ওসি-র গাড়িতে পড়ে। সে সময়ে গাড়িটি ফাঁকা থাকায় কেউ হতাহত হননি। তবে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহাকরণের উল্টো দিকে একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এ ছাড়াও, ময়দান-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। সল্টলেকে যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছে দু’টি গাছ উপড়ে পড়ে। আরও তিনটি গাছ পড়ে সল্টলেকের দুই জায়গায়।
ঝড়ের দাপটে এ দিন চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন নবান্নের দাপুটে পুলিশকর্মীরাও। হাওয়ার তীব্রতায় নবান্নের বিরাট মাপের লোহার দরজাগুলি বন্ধ করতে নাকানিচোবানি খেয়েছেন তাঁরা। বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ে নবান্নের চত্বরের ভিতরে। পুলিশকর্মীরা জানান, টিনের শেডগুলিও ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপছিল। ঝড়বৃষ্টি থামতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সকলে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কিছুটা সমস্যা হলেও এ দিন বিমানই নির্বিঘ্নে নেমেছে। তবে গোটা ছয়েক বিমানকে নামার আগে আকাশে ২০-২৫ মিনিট চক্কর কাটতে হয়েছে। উত্তর দিক
থেকে হাওয়ার গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় বিরাটির দিক থেকে যে বিমানগুলি নামছিল, পরে মুখ ঘুরিয়ে সেগুলিকে রাজারহাটের দিক দিয়ে নামাতে শুরু করেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দিক বদলের সময়েই বেশ কিছু বিমানকে আকাশে ঘুরপাক খেতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy