প্রতিবাদ চলছেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনে স্লোগান লিখে যে-আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিই কলুষিত হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর বিরুদ্ধে পাল্টা গণ-কনভেনশনের আয়োজন করবে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও মণীশ গুপ্তকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু মঙ্গলবার জানান।
নারী স্বাধীনতার দাবিতে নানা সময়ে দেশে-বিদেশে বিচিত্র পন্থায় আন্দোলন হয়েছে। গত শতাব্দীতে প্রকাশ্য রাস্তায় বক্ষাবরণীর বহ্ন্যুৎসব দেখেছে বিশ্ব। এ বার লিঙ্গবৈষম্য, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে, ঋতুস্রাব নিয়ে অযথা গোপনতার বিরোধিতা করতে এবং সর্বোপরি নারী স্বাধীনতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির দাবিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনকে হাতিয়ার করে আন্দোলনে নেমেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী।
গত শুক্রবার রাত থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান লেখা স্যানিটারি ন্যাপকিন সেঁটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘পিরিয়ডস’ নামক একটি ফোরামের সদস্যেরা। শনিবারেও সেই প্রক্রিয়া জারি ছিল। কে বা কারা এই কাজ করছেন, তা জানতে এবং বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার খোঁজখবরের জন্য তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। সাধারণ ভাবে প্রতিবাদের বিরোধিতা না-করলেও ওই সব ছাত্রছাত্রী যে-পদ্ধতিতে তা করছেন, সেটা সমর্থনযোগ্য নয় বলে আগাগোড়াই জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা।
একই সুরে মঙ্গলবার সরব হন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতিকে যারা কলুষিত করছে, তাদের বিরুদ্ধে গণ-কনভেনশন হবে। এটা মোটেই ছাত্রসুলভকৃষ্টি-সংস্কৃতি নয়। আন্দোলনের গরিমা ও মাধুর্যকেএরা অন্ধকারে নিক্ষেপ করছে।’’ কবে গণ-কনভেনশন হবে, সেই ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
শাসক দলের গণ-কনভেনশনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে ন্যাপকিন আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী নবোত্তমা পাল বলেন, ‘‘হোক কলরবের পাল্টা মিছিলও তো বেরিয়েছিল। আমরা যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হই, তা হলে ওঁরা কনভেনশন করবেন। সকলেরই তো গণতান্ত্রিক অধিকার আছে।’’
‘হোক কলরব’ আন্দোলনের জেরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই আন্দোলনের উৎসে ছিল এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ। তার পর থেকেই নানা কারণে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যাদবপুরের এক দল পড়ুয়া। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন আন্দোলন। মেয়েদের ব্যবহার্য ওই ন্যাপকিনে স্লোগান লিখে এখানে-সেখানে তা সেঁটে দিয়ে দাবি বা প্রতিবাদ জানানো যতই অভিনব হোক, সেটা আদৌ দৃষ্টিনন্দন নয় বলে মনে করছেন অনেকে। বস্তুত, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকেও উঠে আসছে বিরুদ্ধ স্বর। এই পদ্ধতিতে আন্দোলনের বিরোধিতা করে স্নাতক স্তরের এক ছাত্র এ দিন বলেন, ‘‘আমি কি একটি নতুন অন্তর্বাস কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঝুলিয়ে রাখব? সেটা যেমন করব না, এটাও করা যায় না।’’
সহপাঠীদের একাংশের বিরুদ্ধতা, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গঠন বা শাসক দলের কনভেনশনের ঘোষণাকে আন্দোলনকারীরা অবশ্য আমল দিচ্ছেন না। মঙ্গলবারেও ন্যাপকিনের উপরে নানা বার্তা লিখে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী মূল প্রশাসনিক ভবন অরবিন্দ ভবনেও সেঁটে দিয়েছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন সেঁটে আন্দোলন করা হবে বলে কি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল?
জবাবে আন্দোলনকারীরা পাল্টা প্রশ্ন করছেন, ‘‘জানানোর কী আছে? কর্তৃপক্ষের কিছু জানার থাকলে আমাদের ডেকে জেনে নিন।’’
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিসস্বরূপ বর্মা এ দিনও জানান, এই কাজ সমাজের রীতি-রেওয়াজের পরিপন্থী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সকলেই একটা সভ্য সমাজে বাস করি। সেখানে কী করব, কতটা করব, তার একটা ধারণা আছে।’’
উপাচার্য জানিয়ে দেন, কে বা কারা এ ভাবে আন্দোলন করছেন, তার তথ্যপ্রমাণ না-দেখে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘কমিটির রিপোর্ট না-পেলে কিছু বলতে পারব না। কারা এই কাজ করছেন, তা জেনে এবং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’’ তাঁরাও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের দিকে নজর রাখছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy