Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীকে ‘ঢাল’ করে আধিপত্য বিস্তার বড়ে-র

অভিযোগ, নিজের ‘দাপট’ দেখাতে তৃণমূল কাউন্সিলর শামিমা বানুর স্বামী শামিম আহমেদ ওরফে বড়ে তৈরি করেছিল ১০-১২ জনের সশস্ত্র দল।

নজরদারি: পুলিশি পাহারায় হাওড়া আদালতের পথে শামিম ওরফে বড়ে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি: পুলিশি পাহারায় হাওড়া আদালতের পথে শামিম ওরফে বড়ে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

শিবপুরের ট্রাম ডিপো এলাকায় শুক্রবার রাতে হামলা চালিয়েছিল ২০-২৫ জন দুষ্কৃতীর একটি দল। চলেছিল গুলি-বোমা। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে তৃণমূল কাউন্সিলর শামিমা বানুর স্বামী শামিম আহমেদ ওরফে বড়ের নাম। স্থানীয়েরা অভিযোগ করছেন, দলের নির্দেশ অমান্য করে গত কয়েক বছরে বড়ে হয়ে উঠেছিল এলাকার বেতাজ বাদশা।

আরও অভিযোগ, নিজের ‘দাপট’ দেখাতে সে তৈরি করেছিল ১০-১২ জনের সশস্ত্র দল। বড়ের সঙ্গীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন এলাকাবাসী। এক রকম বাধ্য হয়েই তাঁরা সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন রাস্তায়। তার ফুটেজে হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পুলিশকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। বড়ে এবং তার এক শাগরেদ আতিফ হোসেন ওরফে চাঁদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল শনিবার রাতেই। রবিবার তাদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে ছ’দিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন বিচারক।

কে এই বড়ে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগেও বড়ে ছিল এক সাধারণ কংগ্রেস কর্মী। পরে যোগ দেয় তৃণমূলে। বাম জমানায় এলাকায় সক্রিয় ভাবে দলের কাজ করায় তাকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল দল। ২০১৩ সালে বড়ের স্ত্রী শামিমাকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের টিকিট দেয় তৃণমূল। ভোটে জিতেও যান শামিমা। তার পর থেকে বড়েকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

এলাকায় কী ভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল বড়ে? বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্ত্রীর ক্ষমতাকে সামনে রেখে সে হয়ে উঠেছিল একচ্ছত্র। তাঁর মদতে গোটা অঞ্চল জুড়ে শুরু হয় বেআইনি নির্মাণ থেকে সিন্ডিকেট-রাজ। আরও অভিযোগ, সব প্রোমোটারকে প্রথমেই ‘নজরানা’ দিতে হত বড়েকে। যিনি দিতে চাননি, তাঁর কপালে জুটেছে মারধর, অফিসে গিয়ে ভাঙচুর এমনকি খুনের হুমকিও। পরে তাঁরাই প্রাণ বাঁচাতে ছুটে গিয়েছেন জিটি রোডের ধারে বড়ের দলীয় কার্যালয়ে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিবপুর থানাকে একাধিক বার এ নিয়ে জানিয়েও লাভ হয়নি। পুলিশ ছিল নীরব শ্রোতা।

আরও পড়ুন: চাদর-চাপা শিশুপুত্রের দেহ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলেন মা

স্থানীয় সূত্রে খবর, শুধু প্রোমোটিংয়ের অনুমতি নেওয়াই নয়। নির্মাণ সামগ্রীও কিনতে হত বড়ের তৈরি সিন্ডিকেটের থেকে। রাজি না হলে নির্মাণস্থলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হাজির হয়ে যেত ইরফান, প্রেম, জাভেদ, চাঁদ সহ ১০-১২ জনের অ্যাকশন স্কোয়াড।

পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকায় টানা পাঁচ বছর সন্ত্রাস চলার পরে বাসিন্দারাই গড়ে তোলেন প্রতিরোধ-মঞ্চ। সেই প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছিল জাভেদ কুরেশির পরিবার। ২০১২ সালে ওই পরিবারের এক সদস্যকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল বড়ের দলবলের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার পরে কুরেশি পরিবারের নেতৃত্বেই রাস্তায় লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা।

আরও পড়ুন: ‘মন্ত্রী আসে, মন্ত্রী যায়, শুধু হাবা বদলায় না’

পুলিশ জানায়, কুরেশি পরিবার যেখানে থাকে, সম্প্রতি তার পিছনে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছিল। অভিযোগ পেয়ে সেটি ভেঙে দেয় পুরসভা। তখন থেকেই দুষ্কৃতীদের ‘টার্গেট’ হয়ে যায় কুরেশি পরিবার। তদন্তকারীদের অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরেই শুক্রবার কুরেশিদের ফ্ল্যাট লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এর পরে রাস্তায় গিয়ে বোমা ও গুলি ছোড়ে। কুরেশিদের থেকে পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বড়ে আর তার শাগরেদদের চিহ্নিত করতে সমস্যা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ফুটেজ দেখে বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।

যদিও দলের এক ওয়ার্ড সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে চাননি জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘বড়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, তা ঠিক নয়। বহিরাগত দুষ্কৃতী গুলি চালিয়েছে। বিরোধীরা এলাকায় সমস্যা তৈরি করতে চাইছে। তবে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করছে। আইন আইনের পথে চলবে।’’ পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই দিনের হামলার ঘটনায় জড়িতদের খোঁজ চলছে। কাউকে ছাড়া হবে না।’’ কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE